Tuesday, March 31, 2015

বিশ্বের কারা এবং কেন ভারত-পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করে


https://www.facebook.com/OTITI2354
২০১৪ সালে বিশ্বের কোন কোন দেশ পাকিস্তান ও ভারতকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে তার তালিকা বের হয়েছে। ‘দি স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সিটিউট’ এ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়- প্রধান অস্ত্র আমদানিকারক ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের নাম।
ইন্সিটিউটের রিপোর্টে অনুসারে- কিছু দেশ আছে যারা দু দেশকেই অস্ত্র সরবরাহ করে। এসব দেশ হচ্ছে- আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, সুইডেন, ইউক্রেন ও ব্রাজিল। অথচ পাকিস্তান এবং ভারত হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রতিবেশী দেশ।
আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে ভারত আমেরিকার সমর্থন পেয়ে থাকে। অন্যদিকে, কথিত সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তানকে সঙ্গী হিসেবে নিয়েছে আমেরিকা। বিশ্বের অন্যতম দুই প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ ফ্রান্স ও রাশিয়া ভারত-পাকিস্তানে অস্ত্র রপ্তানির দিকটাই প্রধানত বিবেচনায় নেয়; রাজনীতির বিষয়টি তেমন প্রাধান্য পায় না। তবে মজার বিষয় হলো, অন্য প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারী দেশগুলো দু দেশকেই অস্ত্র দিতে আগ্রহী নয়।
দি স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সিটিউটের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে- তুরস্ক, সার্বিয়া, চীন ও জর্দান শুধুমাত্র পাকিস্তানকে অস্ত্র দেয়। এসব দেশ ভারতকে অস্ত্র দিতে রাজি নয়।
অন্যদিকে, ইসরাইল, কানাডা, স্পেন, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, পোল্যান্ড, কিরগিজিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া শুধুমাত্র ভারতকে অস্ত্র দেয়; পাকিস্তানকে দেয় না।
যাহোক, পাকিস্তান হচ্ছে এ মুহূর্তে চীনা অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা। বিজনেস ইনসাইডার পত্রিকার মতে- চীন মনে করছে ভবিষ্যতে ভারত মহাসাগর হবে সম্ভাব্য প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র। এ সন্দেহ থেকে চীন বাণিজ্যিক ও সামরিক বন্দর তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে যাতে ভারতকে ঘিরে ফেলা যায়। চীন ও ভারত সীমান্তের বেশ কিছু ভূখণ্ড নিয়েও দ্বন্দ্বে লিপ্ত রয়েছে। ধারণা করা হয়- এ কারণে চীন ভারতকে কোনো অস্ত্র সরবরাহ করে না।
এদিকে, মজার বিষয়হলো বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ জার্মানি শুধুমাত্র ভারতকে অস্ত্র সরবরাহ করে; পাকিস্তানের কাছে তারা কোনো অস্ত্র বিক্রি করে না। ২০০২ সালের তুলনায় ২০১২ সালে ভারত ও জার্মানির মধ্যে বাণিজ্যও বেড়েছে তিনগুণ হয়েছে।

Monday, March 23, 2015

বিশ্বের সেরা অস্ত্র ব্যবসায়ীরা


অস্ত্র কেনাবেচা বাড়ছে, অস্ত্রের প্রয়োগ বাড়ছে, বাড়ছে যুদ্ধ-হানাহানিজনিত মৃত্যু৷ সবচেয়ে বড় অস্ত্র রপ্তানিকারী দেশগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইন্সটিটিউট৷
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রপ্তানি শতকরা ২৩ ভাগ বেড়েছে৷তাদের রপ্তানির জন্য তৈরি করা অস্ত্রের শতকরা ৪৩ ভাগ যায় এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলে, মধ্যপ্রাচ্যে যায় ৩২ শতাংশ৷ বিশ্বের মোট ৯৪টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র কেনে৷ যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার গানশিপ, ট্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র এবং রকেট বিক্রি করে যুক্তরাষ্ট্র৷
রাশিয়া
রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনে ৫৬টি দেশ৷ বিশ্ব অস্ত্র বাজারের শতকরা ২৭ ভাগ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে৷ রাশিয়ার বেশির ভাগ অস্ত্রের ক্রেতা ভারত, চীন আর আলজেরিয়া৷ এই তিন দেশেই প্রায় ৬০ ভাগ অস্ত্র রপ্তানি করে রাশিয়া৷ রুশ অস্ত্র এবং সমর সরঞ্জামের মধ্যে যুদ্ধবিমান, ট্যাংক, নিউক্লিয়ার সাবমেরিন এবং অ্যাসল্ট রাইফেলের চাহিদাই বেশি৷
চীন
চীনের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র ক্রয় করে পাকিস্তান (৪১ ভাগ), বাংলাদেশ (১৬ ভাগ) এবং মিয়ানমার (১২ ভাগ)৷ গত ১০ বছরে চীনের অস্ত্র রপ্তানি ১৪৩ ভাগ বেড়েছে৷ জার্মানি
জার্মানি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া আর চীনের অস্ত্র রপ্তানি যখন বাড়ছে, তখন জার্মানির বিপরীত অবস্থা৷ গত ১০ বছরে দেশটির শতকরা ৪৩ ভাগ অস্ত্র রপ্তানি কমেছে৷ তারপরও অন্তত ৫৫টি দেশ অস্ত্র কেনে ইউরোপের এই দেশটি থেকে৷
ফ্রান্স
জার্মানির মতো ফ্রান্সেরও অস্ত্র রপ্তানি কমেছে৷ গত ১০ বছরে শতকরা ২৭ ভাগ রপ্তানি কমেছে তাদের৷ ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ক্রেতা মরক্কো, চীন এবং সংযুক্ত আরব আমীরাত৷
ব্রিটেন
ব্রিটেনের অস্ত্র ব্যবসা বলতে গেলে সৌদি আরবের জন্যই টিকে আছে৷ মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি ব্রিটেনের মোট ৪১ ভাগ অস্ত্র কেনে৷
স্পেন বিশ্বমন্দার কারণে দেশে অর্থনীতির হাল এখন যেমনই হোক, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলোর তালিকায় স্পেনও আছে৷ স্পেনের সবচেয়ে বড় ক্রেতা অস্ট্রেলিয়া৷

Sunday, March 22, 2015

আলেকজান্ডার ফ্লেমিং


পেনিসিলিনের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার ফ্লেমিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন একদিন নিউইয়র্কের বালটিমোর হোটেলে প্রাতঃরাশ সারতে যাচ্ছিলেন। পথে কয়েকজন সাংবাদিক তার পথ আগলে দাঁড়াল। বললো- ‘মিঃ ফ্লেমিং, আপনি একজন বিখ্যাত আবিষ্কারক। দয়া করে বলবেন কি এ মুহূর্তে আপনি ঠিক কী ভাবছেন?’ রসিক ফ্লেমিং বললেন-‘আপনারা খুব ভালো একটি প্রশ্ন করেছেন। আমি এ মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম।’
সাংবাদিকরা তার বক্তব্য নোট করার জন্য কাগজ-কলম বের করে বললেন-‘ঠিক আছে। আপনি বলুন। আমরা নোট করে নিচ্ছি।’ ফ্লেমিং বললেন-‘আমি ভাবছিলাম ব্রেকফাস্টে ক’টা ডিম খাব? একটি নাকি দুটি!’ চিত্রশিল্পী হুইসলারের খুবই আদরের একটা পোষা কুকুর ছিল।
একবার সে কুকুরের গলায় ঘা দেখা দেয়ায় হুইসলার সে সময়কার নামকরা গলার ডাক্তার ম্যাকেঞ্জিকে ডেকে আনলেন। ম্যাকেঞ্জি কুকুরের চিকিৎসা করতে হবে দেখে মনে মনে রেগে গেলেন। কিন্তু মুখে কিছু বললেন না। যথারীতি কয়েকটা ওষুধ লিখে দিয়ে ম্যাকেঞ্জি বিদায় নিলেন। পরেরদিন ম্যাকেঞ্জি হুইসলারকে তার চেম্বারে ডেকে পাঠালেন। হুইসলার ভাবলেন হয়তো তার কুকুরের ব্যাপারে ম্যাকেঞ্জি কথা বলার জন্য ডেকেছেন।
হুইসলার ফুরফুরে মেজাজেই ম্যাকেঞ্জির চেম্বারে গেলেন। ম্যাকেঞ্জি হুইসলারের কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর বললেন-‘আমার ঘরের সদর দরজার রঙটা একটু চটে গেছে। ওটা একটু রং করতে হবে। আর সেজন্যেই আপনাকে ডেকেছি!’
বিখ্যাত সুরকার রসিনির ফরাসি ভক্তরা তার একটা মূর্তি তৈরি করাচ্ছিল। সেটা জেনে রসিনি একদিন সেখানে গেলেন। মিস্ত্রিদেরকে জিজ্ঞেস করলেন-‘এ মূর্তিটা তৈরি করতে কত খরচ হবে?’ মিস্ত্রিদের জবাব-‘এই ধরুন একশ’ কোটি ফ্রাঁ।’ রসিক রসিনি তার ভক্তদের উদ্দেশে বললেন-‘তার চেয়ে পঞ্চাশ কোটি ফ্রাঁ দিলে আমি নিজেই মূর্তির জায়গাটায় মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারি!’

বলাই-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


মানুষের জীবনটা পৃথিবীর নানা জীবের ইতিহাসের নানা পরিচ্ছেদের উপসংহারে, এমন একটা কথা আছে। লোকালয়ে মানুষের মধ্যে আমরা নানা জীবজন্তুর প্রচ্ছন্ন পরিচয় পেয়ে থাকি, সে কথা জানা। বস্তুত আমরা মানুষ বলি সেই পদার্থকে যেটা আমাদের ভিতরকার সব জীবজন্তুকে মিলিয়ে এক ক’রে নিয়েছে— আমাদের বাঘ-গোরুকে এক খোঁয়াড়ে দিয়েছে পুরে অহি-নকুলকে এক খাঁচায় ধ’রে রেখেছে। যেমন রাগিনী বলি তাকেই যা আপনার ভিতরকার সমুদয় সা-রে-গা-মা-গুলোকে সংগীত করে তোলে, তার পর থেকে তাদের আর গোলমাল করবার সাধ্য থাকে না। কিন্তু, সংগীতের ভিতরে এক-একটি সুর অন্য-সকল সুরকে ছাড়িয়ে বিশেষ হয়ে ওঠে— কোনোটাতে মধ্যম, কোনোটাতে কোমলগান্ধার, কোনোটাতে পঞ্চম।
আমার ভাইপো বলাই— তার প্রকৃতিতে কেমন করে গাছপালার মূল সুরগুলোই হয়েছে প্রবল। ছেলেবেলা থেকেই চুপচাপ চেয়ে চেয়ে দেখাই তার অভ্যাস, নড়ে-চড়ে বেড়ানো নয়। পুবদিকের আকাশে কালো মেঘ স্তরে স্তরে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়ায়, ওর সমস্ত মনটাতে ভিজে হাওয়া যেন শ্রাবণ-অরণ্যের গন্ধ নিয়ে ঘনিয়ে ওঠে; ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ে, ওর সমস্ত গা যেন শুনতে পায় সেই বৃষ্টির শব্দ। ছাদের উপর বিকেল বেলাকার রোদ্‌দুর পড়ে আসে, গা খুলে বেড়ায়; সমস্ত আকাশ থেকে যেন কী একটা সংগ্রহ ক’রে নেয়। মাঘের শেষে আমের বোল ধরে, তার একটা নিবিড় আনন্দ জেগে ওঠে ওর রক্তের মধ্যে, একটা কিসের অব্যক্ত স্মৃতিতে; ফাল্গুনে পুষ্পিত শালবনের মতোই ওর অন্তর-প্রকৃতিটা চার দিকে বিস্তৃত হয়ে ওঠে, ভরে ওঠে তাতে একটা ঘন রঙ লাগে। তখন ওর একলা বসে বসে আপন মনে কথা কইতে ইচ্ছে করে, যা-কিছু গল্প শুনেছে সব নিয়ে জোড়াতাড়া দিয়ে। অতি পুরানো বটের কোটরে বাসা বেঁধে আছে যে একজোড়া অতি পুরানো পাখি, বেঙ্গমা-বেঙ্গমী, তাদের গল্প। ওই ড্যাবা-ড্যাবা-চোখ-মেলে-সর্বদা-তাকিয়ে-থাকা ছেলেটা বেশি কথা কইতে পারে না। তাই ওকে মনে মনে অনেক বেশি ভাবতে হয়। ওকে একবার পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছিলুম। আমাদের বাড়ির সামনে ঘন সবুজ ঘাস পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে পর্যন্ত নেবে গিয়েছে, সেইটে দেখে আর ওর মন ভারি খুশি হয়ে ওঠে। ঘাসের আস্তরণটা একটা স্থির পদার্থ তা ওর মনে হয় না; ওর বোধ হয়, যেন ওই ঘাসের পুঞ্জ একটা গড়িয়ে-চলা খেলা, কেবলই গড়াচ্ছে; প্রায়ই তারই সেই ঢালু বেয়ে ও নিজেও গড়াত— সমস্ত দেহ দিয়ে ঘাস হয়ে উঠত— গড়াতে গড়াতে ঘাসের আগায় ওর ঘাড়ের কাছে সুড়্সুড়ি লাগত আর ও খিল্ খিল্ ক’রে হেসে উঠত।
রাত্রে বৃষ্টির পরে প্রথম সকালে সামনের পাহাড়ের শিখর দিয়ে কাঁচা সোনারঙের রোদ্‌দুর দেবদারুবনের উপরে এসে পড়ে— ও কাউকে না ব’লে আস্তে আস্তে গিয়ে সেই দেবদারুবনের নিস্তব্ধ ছায়াতলে একলা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, গা ছম্ছম্ করে— এই সব প্রকাণ্ড গাছের ভিতরকার মানুষ কে ও যেন দেখতে পায়। তারা কথা কয় না, কিন্তু সমস্তই যেন জানে। তারা-সব যেন অনেক কালের দাদামশায়, ‘এক যে ছিল রাজা’দের আমলের।
ওর ভাবে-ভোলা চোখটা কেবল যে উপরের দিকেই তা নয়, অনেক সময় দেখেছি, ও আমার বাগানে বেড়াচ্ছে মাটির দিকে কী খুঁজে খুঁজে। নতুন অঙ্কুরগুলো তাদের কোঁকড়ানো মাথাটুকু নিয়ে আলোতে ফুটে উঠছে এই দেখতে তার ঔৎসুক্যের সীমা নেই। প্রতিদিন ঝুঁকে পড়ে পড়ে তাদেরকে যেন জিজ্ঞাসা করে, ‘তার পরে? তার পরে? তার পরে?’ তারা ওর চির-অসমাপ্ত গল্প। সদ্য-গজিয়ে-ওঠা কচি কচি পাতা, তাদের সঙ্গে ওর কী-যে একটা বয়স্যভাব তা ও কেমন করে প্রকাশ করবে। তারাও ওকে কী-একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবার জন্য আঁকুপাঁকু করে। হয়তো বলে, ‘তোমার নাম কী’। হয়তো বলে, ‘তোমার মা কোথায় গেল।’ বলাই মনে মনে উত্তর করে, ‘আমার মা তো নেই।’
কেউ গাছের ফুল তোলে এইটে ওর বড়ো বাজে। আর-কারও কাছে ওর এই সংকোচের কোনো মানে নেই, এটাও সে বুঝেছে। এইজন্যে ব্যথাটা লুকোতে চেষ্টা করে। ওর বয়সের ছেলেগুলো গাছে ঢিল মেরে মেরে আমলকি পাড়ে, ও কিছু বলতে পারে না, সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে চ’লে যায়। ওর সঙ্গীরা ওকে খ্যাপাবার জন্যে বাগানের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে ছড়ি দিয়ে দু পাশের গাছগুলোকে মারতে মারতে চলে, ফস্‌ ক’রে বকুলগাছের একটা ডাল ভেঙে নেয়— ওর কাঁদতে লজ্জা করে পাছে সেটাকে কেউ পাগলামি মনে করে। ওর সব চেয়ে বিপদের দিন, যেদিন ঘাসিয়াড়া ঘাস কাটতে আসে। কেননা, ঘাসের ভিতরে ভিতরে ও প্রত্যহ দেখে দেখে বেড়িয়েছে; এতটুকু-টুকু লতা, বেগনি হল্‌‍দে নামহারা ফুল, অতি ছোটো ছোটো; মাঝে মাঝে কন্টিকারি গাছ, তার নীল নীল ফুলের বুকের মাঝখানটিতে ছোট্ট একটুখানি সোনার ফোঁটা; বেড়ার কাছে কাছে কোথাও-বা কালমেঘের লতা, কোথাও বা অনন্তমূল; পাখিতে-খাওয়া নিমফলের বিচি প’ড়ে ছোটো ছোটো চারা বেরিয়েছে, কী সুন্দর তার পাতা— সমস্তই নিষ্ঠুর নিড়নি দিয়ে দিয়ে নিড়িয়ে ফেলা হয়। তারা বাগানের শৌখিন গাছ নয়, তাদের নালিশ শোনবার কেউ নেই।
এক-একদিন ওর কাকির কোলে এসে ব’সে তার গলা জড়িয়ে বলে, “ওই ঘাসিয়াড়াকে বলো-না, আমার ওই গাছগুলো যেন না কাটে।” কাকি বলে, “বলাই, কী যে পাগলের মতো বকিস। ও যে সব জঙ্গল, সাফ না করলে চলবে কেন।”
বলাই অনেকদিন থেকে বুঝতে পেরেছিল, কতকগুলো ব্যথা আছে যা সম্পূর্ণ ওর একলারই— ওর চারি দিকের লোকের মধ্যে তার কোনো সাড়া নেই।
এই ছেলের আসল বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার দিনে যেদিন সমুদ্রের গর্ভ থেকে নতুন-জাগা পঙ্কস্তরের মধ্যে পৃথিবীর ভাবী অরণ্য আপনার জন্মের প্রথম ক্রন্দন উঠিয়েছে— সেদিন পশু নেই, পাখি নেই, জীবনের কলরব নেই, চার দিকে পাথর আর পাঁক আর জল। কালের পথে সমস্ত জীবের অগ্রগামী গাছ, সূর্যের দিকে জোড় হাত তুলে বলেছে, ‘আমি থাকব, আমি বাঁচব, আমি চিরপথিক, মৃত্যুর পর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্তহীন প্রাণের বিকাশতীর্থে যাত্রা করব রৌদ্রে-বাদলে, দিনে-রাত্রে।’ গাছের সেই রব আজও উঠছে বনে বনে, পর্বতে প্রান্তরে; তাদেরই শাখায় পত্রে ধরণীর প্রাণ বলে বলে উঠছে, ‘আমি থাকব, আমি থাকব।’ বিশ্বপ্রাণের মূক ধাত্রী এই গাছ নিরবচ্ছিন্ন কাল ধ’রে দ্যুলোককে দোহন করে; পৃথিবীর অমৃতভাণ্ডারের জন্যে প্রাণের তেজ, প্রাণের রস, প্রাণের লাবণ্য সঞ্চয় করে; আর উৎকণ্ঠিত প্রাণের বাণীকে অহর্নিশি আকাশে উচ্ছ্বসিত ক’রে তোলে, ‘আমি থাকব।’ সেই বিশ্বপ্রাণের বাণী কেমন-এক-রকম ক’রে আপনার রক্তের মধ্যে শুনতে পেয়েছিল ওই বলাই। আমরা তাই নিয়ে খুব হেসেছিলুম।
একদিন সকালে একমনে খবরের কাগজ পড়ছি, বলাই আমাকে ব্যস্ত করে ধরে নিয়ে গেল বাগানে। এক জায়গায় একটা চারা দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলে, “কাকা, এ গাছটা কী।” দেখলুম একটা শিমুলগাছের চারা বাগানের খোওয়া-দেওয়া রাস্তার মাঝখানেই উঠেছে।
হায় রে, বলাই ভুল করেছিল আমাকে ডেকে নিয়ে এসে। এতটুকু যখন এর অঙ্কুর বেরিয়েছিল, শিশুর প্রথম প্রলাপটুকুর মতো, তখনই এটা বলাইয়ের চোখে পড়েছে। তার পর থেকে বলাই প্রতিদিন নিজের হাতে একটু একটু জল দিয়েছে, সকালে বিকেলে ক্রমাগত ব্যগ্র হয়ে দেখেছে কতটুকু বাড়ল। শিমুলগাছ বাড়েও দ্রুত, কিন্তু বলাইয়ের আগ্রহের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না। যখন হাত দুয়েক উঁচু হয়েছে তখন ওর পত্রসমৃদ্ধি দেখে ভাবলে এ একটা আশ্চর্য গাছ, শিশুর প্রথম বুদ্ধির আভাস দেখবামাত্র মা যেমন মনে করে আশ্চর্য শিশু। বলাই ভাবলে, আমাকেও চমৎকৃত ক’রে দেবে।
আমি বললুম, “মালীকে বলতে হবে, এটা উপড়ে ফেলে দেবে।”বলাই চমকে উঠল। এ কী দারুণ কথা। বললে, “না, কাকা, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, উপড়ে ফেলো না।” আমি বললুম, “কী যে বলিস তার ঠিক নেই। একেবারে রাস্তার মাঝখানে উঠেছে। বড়ো হলে চার দিকে তুলো ছড়িয়ে অস্থির ক’রে দেবে।”
আমার সঙ্গে যখন পারলে না, এই মাতৃহীন শিশুটি গেল তার কাকির কাছে। কোলে ব’সে তার গলা জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললে, “কাকি, তুমি কাকাকে বারণ ক’রে দাও, গাছটা যেন না কাটেন।”
উপায়টা ঠিক ঠাওরেছিল। ওর কাকি আমাকে ডেকে বললে, “ওগো, শুনছ!আহা, ওর গাছটা রেখে দাও।”
রেখে দিলুম। গোড়ায় বলাই না যদি দেখাত তবে হয়তো ওটা আমার লক্ষ্যই হত না। কিন্তু এখন রোজই চোখে পড়ে। বছরখানেকের মধ্যে গাছটা নির্লজ্জের মতো মস্ত বেড়ে উঠল। বলাইয়ের এমন হল, এই গাছটার ’পরেই তার সব চেয়ে স্নেহ।
গাছটাকে প্রতিদিনই দেখাচ্ছে নিতান্ত নির্বোধের মতো। একটা অজায়গায় এসে দাঁড়িয়ে কাউকে খাতির নেই, একেবারে খাড়া লম্বা হয়ে উঠছে। যে দেখে সেই ভাবে, এটা এখানে কী করতে। আরও দু-চারবার এর মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব করা গেল। বলাইকে লোভ দেখালুম, এর বদলে খুব ভালো কতকগুলো গোলাপের চারা আনিয়ে দেব।
বললেম, “নিতান্তই শিমুলগাছই যদি তোমার পছন্দ, তবে আর-একটা চারা আনিয়ে বেড়ার ধারে পুঁতে দেব, সুন্দর দেখতে হবে।”
কিন্তু কাটবার কথা বললেই আঁতকে ওঠে, আর ওর কাকি বলে, “আহা, এমনিই কী খারাপ দেখতে হয়েছে।”
আমার বউদিদির মৃত্যু হয়েছে যখন এই ছেলেটি তাঁর কোলে। বোধ করি সেই শোকে দাদার খেয়াল গেল, তিনি বিলেতে এঞ্জিনিয়ারিং শিখতে গেলেন। ছেলেটি আমার নিঃসন্তান ঘরে কাকির কোলেই মানুষ। বছর দশেক পরে দাদা ফিরে এসে বলাইকে বিলাতি কায়দায় শিক্ষা দেবেন ব’লে প্রথমে নিয়ে গেলেন সিমলেয়— তার পরে বিলেতে নিয়ে যাবার কথা।
কাঁদতে কাঁদতে কাকির কোল ছেড়ে বলাই চলে গেল, আমাদের ঘর হল শূন্য।
তার পরে দু বছর যায়। ইতিমধ্যে বলাইয়ের কাকি গোপনে চোখের জল মোছেন, আর বলাইয়ের শূন্য শোবার ঘরে গিয়ে তার ছেঁড়া এক-পাটি জুতো, তার রবারের ফাটা গোলা, আর জানোয়ারের গল্পওয়ালা ছবির বই নাড়েন-চাড়েন; এতদিনে এই-সব চিহ্নকে ছাড়িয়ে গিয়ে বলাই অনেক বড়ো হয়ে উঠেছে, এই কথা বসে বসে চিন্তা করেন।
কোনো-এক সময়ে দেখলুম, লক্ষ্মীছাড়া শিমুলগাছটার বড়ো বাড় বেড়েছে— এতদূর অসংগত হয়ে উঠেছে যে আর প্রশ্রয় দেওয়া চলে না। এক সময়ে দিলুম তাকে কেটে।
এমন সময়ে সিমলে থেকে বলাই তার কাকিকে এক চিঠি পাঠালে, “কাকি, আমার সেই শিমুলগাছের একটা ফোটোগ্রাফ পাঠিয়ে দাও।”
বিলেত যাবার পূর্বে একবার আমাদের কাছে আসবার কথা ছিল, সে আর হল না। তাই বলাই তার বন্ধুর ছবি নিয়ে যেতে চাইলে। তার কাকি আমাকে ডেকে বললেন, “ওগো শুনছ, একজন ফোটোগ্রাফওয়ালা ডেকে আনো।”
জিজ্ঞাসা করলুম, “কেন।”
বলাইয়ের কাঁচা হাতের লেখা চিঠি আমাকে দেখতে দিলেন।
আমি বললেম, “সে গাছ তো কাটা হয়ে গেছে।”
বলাইয়ের কাকি দুদিন অন্ন গ্রহণ করলেন না, আর অনেকদিন পর্যন্ত আমার সঙ্গে একটি কথাও কন নি। বলাইয়ের বাবা ওকে তাঁর কোল থেকে নিয়ে গেল, সে যেন ওঁর নাড়ী ছিঁড়ে; আর ওর কাকা তাঁর বলাইয়ের ভালোবাসার গাছটিকে চিরকালের মতো সরিয়ে দিলে, তাতেও ওঁর যেন সমস্ত সংসারকে বাজল, তাঁর বুকের মধ্যে ক্ষত ক’রে দিলে।
ঐ গাছ যে ছিল তাঁর বলাইয়ের প্রতিরূপ, তারই প্রাণের দোসর।

জাগরণী- কাজী নজরুল ইসলাম


জাগো রে তরুণ জাগো রে ছাত্রদল
স্বতঃ উৎসারিত ঝর্ণাধারায় প্রায় জাগো প্রাণ-চঞ্চল
ভেদ-বিভেদের গ্লানির কারা-প্রাচীর
ধুলিসাৎ করি জাগো উন্নত শির
জবাকুসুম-সঙ্কাশ জাগে বীর,
বিধি নিষেধের ভাঙ্গো ভাঙ্গো অর্গল।
ধর্ম বর্ণ জাতির ঊর্ধ্বে জাগো রে নবীন প্রাণ
তোমার অভ্যুদয়ে হোক সব বিরোধের অবসান
সঙ্কীর্ণতা ক্ষুদ্রতা ভোলো ভোলো
সকল মানুষে ঊর্ধ্বে ধরিয়া তোলো
তোমাদের চাহে আজ নিখিল জনসমাজ
আনো জ্ঞানদীপ এই তিমিরের মাঝ,
বিধাতার সম জাগো প্রেম প্রোজ্জ্বল।

Tuesday, March 17, 2015

বিজয় হাতছানি দিচ্ছে: টাইগারদের ‘শুভ কামনা’ শোয়ার্জনেগারের


http://www.somewhereinblog.net/blog/HEART4HEART/30023044

হলিউডের বিখ্যাত নায়ক। টারমিনেটর চলচ্চিত্র সিরিজে কখনো নায়ক কখনো বা দুর্র্ধষ ভিলেন। আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারকে কে না চেনেন।

আগামী ১৯ মার্চ মেলবোর্নে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ। তার আগে শোয়ার্জনেগারের ‘শুভ কামনা’ পেয়ে গেছে টাইগাররা। এতে বেশ উজ্জীবিতই হতে পারে বাংলাদেশ শিবির।

দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারিদের কখনই ছাড় দেয়নি দেশের হ্যাকার সংগঠনগুলো। যখনই আমাদের ওপর অপমানজনক

আঘাত আসে সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে দেশীয় হ্যাকাররা।

বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের সামর্থ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন হেয় ও নেতিবাচক মনোভাবের প্রতিবাদে সোমবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে সাইবার ৭১।

ক্রিকেট বিশ্লেষক ও সমর্থকরা মনে করেন ভারতকে হারানো বাংলাদেশের জন্য অসম্ভব কিছু নয়।

যে সব কারণে জিততে পারে বাংলাদেশ:

১. বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এই বিশ্বকাপে সেরা খেলাটা এখনো খেলেন নি। নিশ্চই ভারতের বিরুদ্ধে তা খেলবেন

২. মাশরাফি সব সময় ভারতের বিরদ্ধে ভয়ঙ্কর বল করেন। ২০০৭ বিশ্বকাপের ক্ষত এখনো লেগে আছে ভারতের গায়ে। ৩৮ রানে চার উইকেট নিয়ে হারিয়েছিলেন তাদের।

৩. ভারতের আরেক আতঙ্ক নতুন তুর্কি দ্রুতগতির বোলার তাসকিন আহমেদ। ভারতের বিপক্ষে মাত্র ২ ম্যাচ খেলে উইকেট পেয়েছেন ৭টি। গড়ে ৬.১৪ রান দিয়ে ১টি করে উইকেট নিয়েছেন

৪. ভারতকে সমানে পেলে তেতে জান তামিম, মুশফিকও (ভারতের বিপক্ষে গড় ৪২)। সেরা ব্যাটিংটা করেন ভারতের বিপক্ষে।

৫. ভারতের বিপক্ষে খেলা ১১টি একদিনের ম্যাচে মাহমুদুল্লার ব্যাটিং গড় ৪৯, যিনি এই মুহুর্তে ফর্মের তুঙ্গে রয়েছেন।

৬. দারুন ফর্মে রয়েছেন স্টাইলিস্ট সৌম্য সরকার, হার্ডহিটার সাব্বির রহমান, স্পিড স্টার রুবেল হোসেন।

৭. ইতোমধ্যে ২০১৫ বিশ্বকাপের টার্গেট অজির্ত হয়েছে। তাই হারানোর কোন বাড়তি চাপ নেই, পুরো টীমে কেবলি পাবার আকাঙ্ক্ষা।

৮. ভারতীয়রা বাংলাদেশকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে দলের মধ্যে অন্তত ভারতকে হারানোর এটা জেদ তৈরী করে দিয়েছেন।

৯. ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ এবং ২০১২ সালের এশিয়াকাপে ভারতেকে হারানোর সুখময় অনুপ্রেরনা।

Monday, March 16, 2015

তোমরা খেলবে মাঠে আর আমরা খেলবে ইন্টারনেটে........অতিথি.

বাংলাদেশকে নিয়ে কটাক্ষ করে ভারতের ভিডিওর প্রতিবাদে আরেকটি ভিডিও....অতিথি.
তোমরা খেলবে মাঠে আর আমরা খেলবে ইন্টারনেটে........অতিথি.
https://www.facebook.com/OTITI2354