
মা দিবস মানে অনেকে মনে করেন একদিন মা দিবস পালন করা। একটু কেমন আদেখলেপনা। মা দিবস। এটা আবার কী কথা। কিন্তু সত্যি কি মা দিবস থাকা উচিত নয়। অবশ্যই মা দিবস থাকা উচিত। অন্তত একটি দিন মা’র জন্য বরাদ্দ। মাকে নিয়ে দুটো কথা বলা। মা’র জন্য কিছু কেনা।
‘মা’ একটি অক্ষর, একটি বর্ণ, একটি শব্দ। যদি বলি মা মানে একটি পৃথিবী, একটি বিশ্ব, একটি জগৎ—ভুল হবে না এতটুকু। কেননা ঠিকই তো, জন্মের আগে একটি শিশুর বসবাস, বেড়ে ওঠা সে তো মায়ের জঠরেই। তাহলে মা কেন পৃথিবী নয়, বিশ্ব নয়, নয় জগত।
মা এমনই একটি শব্দ যার কোনো বিশেষণ লাগে না। যাকে বলে একাই একশ’। সেই মায়ের জন্য বিশ্বজুড়ে নির্ধারণ করা হয়েছে একটি মাত্র দিন, যা মোটেই যুঁত্সই নয়। নিদেনপক্ষে অন্তত সাত দিন ধরে মা দিবস পালিত হওয়া উচিত। থাক না একটা দিন বিশেষভাবে। মা দিবস পালিত হোক পুরো মে মাস জুড়ে।
১৯০৭ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আমেরিকায় আন্না জাার্ভিস নামে এক তরুণীর মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। সে দিন তিনি প্রথম উদ্যোগ নেন মাকে সম্মান জানিয়ে একটি দিবস পালনের। সবাইকে এর গুরুত্ব বুঝিয়ে চিঠি লিখতে শুরু করেন তিনি। ১৯১১ সালে এর বিস্তৃৃতি বাড়ে। ১৯১৪ সালের সে সময়কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিবসটিকে সরকারিভাবে পালনের ঘোষণা দেন। সেই থেকে সারা বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব মা দিবস। বাংলাদেশেও এটি পালিত হচ্ছে আড়ম্বরে।
বছরের পুরোটা সময় মা তোমাকে মনে পড়ে, খুব মনে পড়ে, ভীষণ মনে পড়ে।মা’র জন্য হৃদয় খুলে দোয়া করব। আর দু’চোখ বন্ধ করে স্বপ্নে মা’র কোলে মাথা রেখে হারিয়ে যাব স্বপ্নলোকে।

এমন অনেক মা আছেন শিক্ষিত নন। ঘড়ির ব্যবহার জানেন না। তবুও তিনি সন্তানের পরীক্ষার সময় প্রতিদিন ভোরবেলা ঠিক পাঁচটার সময় ডেকে দিতেন, এক মিনিটও এদিক-ওদিক হতো না। চা বানিয়ে দিতেন, মুড়ি মাখিয়ে দিতেন। ছেলের সঙ্গে তিনিও রাত জেগে থাকতেন। আবার পরীক্ষার দিনে যে ব্যাক্তিটি রোজা রাখতেন। সে আর কেই নয়-মা। মা দিবসে সবারই উচিত মা’র কাছে থাকার চেষ্টা করা। তাই এই দিনটা সরকারি ছুটি ঘোষণা করলে আরও তাত্পর্যপূর্ণ হয়ে উঠত।
মাকে কখনও বলা হয়নি—মা তোমাকে ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি। মাকে উপলব্ধি করা, মাকে শুভেচ্ছা জানানো, মাকে সরি বলা—সব মিলিয়ে শুধুই মা। মনটা আনমনে গেয়ে ওঠে—মা আমার সাধ না মিটিল আশা না পুরিল/ সকলই ফুরায়ে যায় মা...। সবকিছু শেষ হয়ে যায়, কিন্তু মায়ের ভালোবাসা অনিঃশেষ, নিঃস্বার্থ। তাই তো একজন প্রতিবন্ধী শিশুকেও কতটা মমতায় আপন করে নেন মা। গানের ভাষায়—ল্যাংড়া আঁতুড় কানা খোঁড়া হলে পরে ছেলে/ অঞ্চলে ধুলা মুছাইয়া টান দিয়া নেয় কোলে...। মা যেন একটা সমুদ্র। তাকে দেখে শেষ হয় না, চোখ জুড়িয়ে যায় মায়ের মুখের দিকে চেয়ে—মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে...। কিন্তু বাস্তবতার নির্মম পরিহাসে আমরা হয়ে ওঠি অতি নির্মম। ব্যস্ততার অজুহাতে ভুলে যাই মাকে। কেমন আছো জিজ্ঞেস করা হয় না। স্বামী-স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখসঙ্গে মেতে থাকি। ভুলে যাই মা আমার খোলা আকাশে চেয়ে তারা গোনে, রাত যায় দিন যায়, ছেলে-মেয়ে তার কাছে আসে না।
কুমার বিশ্বজিত্ গেয়েছেন—তুমি কত লিটার দুধ করেছ পান/ মা জননীর/ এক বাটি দুধ হাতে নিয়ে/মা জননীর কাছে গিয়ে/কখনও কি বলিয়াছ/মাগো আপনি খান...। সত্যি বলা হয়নি, বা বলা হয়ে ওঠে না। মা তো আমারই, তাকে আবার নতুন করে আয়োজন করে বলতে হবে, ‘মা আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ কিন্তু বললে ক্ষতি কিছু তো নেই। মায়ের কোলে মাথা রাখলে মা যদি আপনার কপালে চুমু দেন, আপনি কেন মায়ের কপালে দেবেন না।

আমি অনেকদিন পর পর বাড়িতে যাই না জানিয়ে।যাবার পর পরই আমি আমার মা কে আগে দেখি কোথায় আছে।সেখানে গিয়ে জড়িয়ে ধরি আর আমার মা বলে আমার কোলের ছেলেটা এসে গেছে।সে বলার মধ্যে কত আনন্দ থাকে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আর যখন চলে আসি তখনও তাই করি আমি কিন্তু আমার মা? বাড়ি থেকে প্রায় দশ মিনিটের পথ হাটতে হয়। আর সে দশমিনিট পর্যন্ত আম্মা থাকিয়ে থাকে পথের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত।
আমরা অনেকেই মা’র কথা শুনি না। মাকে কষ্ট দিই। কিন্তু মা ছাড়া যে আমাদের জন্মই হতো না। সে কথা ভুলে যাই অবলীলায়। ব্যস্ত হয়ে উঠি নিজের মতো। একটু বড় হলেই মাকে বলি, তুমি কী বোঝ। সত্যি কি মা কিছুই বোঝেন না। কিন্তু আমরা যখন ছোট্ট ছিলাম, কথা বলতে-হাঁটতে পারতাম না, তখন মা বুঝতেন অনেক কিছু। একজন দুগ্ধপোষ্য জাত মাকে বলে—আপনি কীভাবে বোঝেন ওর খিদে পেয়েছে। একগাল হাসি দিয়ে বলেন, মা হলে সব বোঝা যায়। সত্যি মা আর সন্তানের সম্পর্ক সে যে বিনে সুতার মালা। সন্তান মায়েরই একাংশ। মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন। তাই তো সন্তানের কোনো বিপদ-আপদ হলে মা আগে জানতে পারেন।
পৃথিবীর সব মা জাতির প্রতি আমার রইল সশ্রদ্ধ সালাম। আর আমার মায়ের জন্য রাখলাম আমার জীবনটা।
No comments:
Post a Comment