এক মা স্তনদান করছেন তাঁর শিশুসন্তানটিকে৷ আলিকজান্দ্রা পাজিনার তোলা আপাতসরল এ ছবিই সারা বিশ্বের সমীহ আদায় করে নিয়েছে৷ কেননা একটি ছবিই যে কত কথা বলে দিতে পারে তার প্রমাণ এ ছবিটি৷
এই মায়ের বাস আফগানিস্তানের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে৷ জায়গাটির নাম বাদাকসন৷ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে যেখানে প্রায়ই মৃত্যু হয় মায়েদের৷ প্রতি একলাখ শিশুজন্মের ক্ষেত্রে এ মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৬৫০০৷ যদি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়, তবে প্রত্যন্ত এই গ্রাম থেকে সেখানে পৌঁছতেই সময় লেগে যায় প্রায় ৩ দিন৷ তাও যানবাহন বলতে গাধাই ভরসা৷ ফলত সন্তানের জন্ম দিতে মায়েদের ভরসা সেই ধাইমারাই৷ তাঁরা এ ব্যাপারে পারদর্শী হলেও গলদের সংখ্যা কম নয়৷ আর তাই মৃত্যুর হার এমন ভয়াবহ৷ এরকম এক অঞ্চলে জীবনের যে ছবি তুলেছেন আলিকজান্দ্রা তাইই প্রশংসা পাচ্ছে বিশ্ববাসীর৷ অনেক এনজিও সচেতনতা শিবির করে যে বার্তা প্রচার করতে পারে না, এ ছবি এককথাতেই যেন তা বলে দিতে পারে৷
আফগানিস্তান নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন আলিকজান্দ্রা৷ ছবি তোলার ক্ষেত্রে তিনি বিশ্বাস করেন, শুধু ভালো ছবি তোলাই একজন ফটোগ্রাফারের কাজ নয়, ছবির পিছনে যেন একটা গল্প থাকে৷ সেই ভাবনা থেকেই এ ছবির খোঁজ পেয়েছেন তিনি৷ এক ধাইমার বাড়িতে কথা বলতে গিয়েই তিনি এই দৃশ্য দেখেন৷ তবে চুরিকরে ছবি তোলায় নারাজ ছিলেন আলিকজান্দ্রা৷ তাঁদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের সম্মতিতেই এ ছবি তোলেন তিনি৷
দ্বিতীয় আর এক কারণেও এ ছবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ অতিউন্নত দেশগুলোতেও নারীশরারকে যেভাবে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তার একদম বিপরীত কোটিতে দাঁড়িয়ে আছে এ ছবি৷ ছবিতে অনাবৃত মাতৃস্তন দেখা যাচ্ছে বটে, কিন্তু তা কখনও যৌনতার ধারণাকে উসকে দিচ্ছে না৷ সভ্যতাগর্বী দেশ যেভাবে ছলে বলে ‘রিভিল’ করে নারীদের যৌনতার প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরে, এ ছবি খোলামেলা হয়েও যেন সে ধারণাকে আঘাত করে৷ আর তাই নিতান্ত রক্তমাংসের এ ছবিকে অনেকেই মনে করেছেন, যেন কোনও ধর্মীয় ছবি৷
টাইম ম্যাগাজিনে এ ছবি পাঠানোর পর পত্রিকার তরফ থেকে এটিকে ব্যবহার করা হয় জন্ম দিতে গিয়ে মায়েদের মৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা প্রসার করতে৷ নারী ও মাতৃত্বকে এত সঠিক অর্থে তুলে ধরেছে বলেই সকলের সমীহ আদায় করে নিয়েছে এ ছবি৷
No comments:
Post a Comment