Wednesday, May 13, 2015

সালাহ উদ্দিনের সন্ধানের বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও র‍্যাব-পুলিশের মিষ্টি এবং তেতু কথা


ভারতের মেঘালয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান পাওয়ায় সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
সালাহ উদ্দিন মেঘালয়ে বসে ষড়যন্ত্র করছে: মায়া
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ মেঘালয়ের জঙ্গলে বসে ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
আজ (বুধবার) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে ওই সভার আয়োজন করা হয়।
মায়া বলেন, আওয়ামী লীগকে হঠাতে ও শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে এই ষড়যন্ত্র করেছেন সালাহউদ্দিন। তিনি ভারতে বসে বিশ্বের কোন কোন জঙ্গীদের সঙ্গে দুই মাসে যোগাযোগ করেছেন তা খতিয়ে বের করতে হবে।
মায়া আরও বলেন, তার পাসপোর্ট নাই। কিন্তু তিনি ওখানে গেলেন কীভাবে তা দেশের মানুষের সামনে উদ্ঘাটন করতে হবে। এই ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটিত হবেই, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
খালেদা জিয়াকে বিশ্ব মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করে মায়া বলেন, গত কয়েকদিন আগেও তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ র‌্যাবের হাতে আছে। কিন্তু দেখা গেল তিনি ভারতের মেঘালয়ে।
সালাহ উদ্দিনের খোঁজ বিএনপি আগে থেকেই জানত: নাসিম
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের সন্ধান পাওয়া নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহম্মদ নাসিম বলেছেন বিষয়টি নিয়ে বিএনপি মিথ্যাচার করেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মিথ্যাচার করা বিএনপির অভ্যাস। সালাউদ্দিনের খোঁজ তারা (বিএনপি) আগে থেকেই জানতেন।
বিএনপির পূর্বপরিকল্পিত একটি সাজানো নাটক: জয়
নিখোঁজ হওয়ার ৬২ দিন পর উদ্ধার হওয়া বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিষয়ে সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভারতে পালিয়ে ছিলেন এবং তিনি পুরো দুইমাসের কোনো স্মৃতিই মনে করতে পারছেন না।
‘সালাহউদ্দিন সাহেবের স্ত্রী এতোদিন গণমাধ্যমে সাদা পোশাকধারী পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছিলেন’ সে সম্পর্কে জয় বলেন, পুরো ঘটনাটিই আওয়ামী লীগ সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য বিএনপির পূর্বপরিকল্পিত একটি সাজানো নাটক।
সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজের বিষয় নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভূমিকা ও অভিযোগকে প্রমাণ ও তদন্ত ছাড়া ব্যর্থ কর্মকাণ্ড হিসেবেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা।
‘সরকার কারো উধাও হয়ে যাওয়া এবং লুকিয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না’ উল্লেখ করে তিনি জানান, ‘বিএনপি মিথ্যে বলে, সবাই তা জানে। অধিকার এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচও তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারালো।’
তাহলে আমাদের দায়ী করা হলো কেন?- র‍্যাব প্রধান
র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেছেন, সালাউদ্দিন আহমেদের মতো এতো বড় একজন নেতা দলের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন কিনা সেটাও প্রশ্নের দাবি রাখে।
তিনি বলেন, সালাহউদ্দিনের নিখোঁজের বিষয়ে বিএনপি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে র‌্যাবকে দায়ী করা হয়েছিল। এর কারণে র‌্যাবের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে। কিন্তু এখন তাকে খুঁজে পাওয়ায় পরিষ্কার হয়েছে র‌্যাব এর সঙ্গে জড়িত ছিল না। র‌্যাবের সুনাম ক্ষুণ্নের জন্যই এমন করা হয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গা র‌্যাব-৭ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, যদি তিনি ভারতে অবস্থান করেন তাহলে আমাদের কেন দায়ী করা হল?
প্রমাণ হল সালাহউদ্দিনকে কোনো বাহিনী অপহরণ করেনি: আইজিপি
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, সালাহ উদ্দিনের সাথে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদের কথোপকথনের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার যে, বিএনপির এই নেতাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপহরণ করেনি।
মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি। শহীদুল হক বলেন, নিখোঁজ হবার পর থেকেই তার সন্ধান করছিল পুলিশ। বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে নাশকতার কয়েকটি মামলা আছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে আদালত। আইজিপি বলেন, ‘তিনি কিভাবে ভারতে গেলেন তা খতিয়ে দেখা হবে’।
গত ১০ মার্চ থেকে ‘নিখোঁজ ছিলেন’ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তাঁর পরিবার ও দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
তবে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটক করা হয়নি বলে দাবি করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শিলংয়ের গলফ লিংক এলাকায় উদভ্রান্তের মতো ঘুরছিলেন সালাহ উদ্দিন। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা খবর দিলে স্থানীয় পুলিশ গিয়ে আটক করে তাঁকে। সেখান থেকে পুলিশ তাকে মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টারল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সয়েন্স (এমআইএমএইচএএনএস) হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসকরা মানসিক কোনো সমস্যা না থাকার কথা জানালে সালাহ উদ্দিনকে অন্য একটি সরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়।
হাসপাতাল স্থানান্তরের সময় সালাহ উদ্দিন নিজেই বলেন, “হ্যাঁ, আমিই বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন। আমাকে উত্তরা থেকে অচেনা একদল লোক তুলে নিয়েছিল। আমি জানি না, আমি কিভাবে এখানে এলাম। অপহরণের পর থেকে আর কিছুই মনে করতে পারছি না।”
খবরে আরও বলা হয়, সালাহ উদ্দিন আহমেদের শরীর ভালো না থাকায় মেঘালয়ের পুলিশ এখনও তাঁকে ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি।

No comments:

Post a Comment