Thursday, July 30, 2015

গুগলের ইন্টারভিউয়ে আসা উদ্ভুদ কিছু প্রশ্ন


বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত কম্পানির মধ্যে অন্যতম হলো গুগল। আর সেখানে কাজ করার স্বপ্ন আর চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন সাধারণ মানুষের কাছে প্রায়ই একই। গুগলের দোরগড়ায় নাই বা পৌঁছানো গেল কিন্তু সেখানে ইন্টারভিউতে কীরকম প্রশ্ন আসে, যে জানতে কৌতূহল আমাদের সবারই।
কিউরা ওয়েবসাইটে গুগলের কিছু প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। সম্ভবত গুগলে ইন্টারভিউ দেওয়া প্রাক্তন প্রার্থী অথবা গুগলের কর্মচারীর মারফত ফাঁস হয় বলে দাবি দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট সংবাদ সংস্থার। তবে গুগলের এক কর্মচারীর মতে একই প্রশ্নপত্র কখনও দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয় না। যাই হোক গুগলের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র নিয়ে আমরা একটা টেস্ট দিতেই পারি। কী বলেন? যে সব প্রশ্ন গুগলের ইন্টারভিউতে করা হয়-
১) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়টি পেট্রল পাম্প রয়েছে?
২) একটি ক্ল্যাসিক্যাল আমেরিকান স্কুল বাসে কয়টি গল্ফ বল ধরবে?
৩) সিটেলরে সমস্ত জানালা ধুতে তুমি কত অর্থ নেবে?
৪) স্যানফ্রান্সিসকোর জন্য ইভাকিউশন নকশা বানাও?
৫) দিনে কতবার ঘড়ির সব কাঁটা একই সঙ্গে ঘাড়ের উপর থাকে?
৬) ম্যানহোল কেন গোল দেখতে হয়?
৭) প্রতিবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কতজন ছাত্রছাত্রী কলেজে পড়ে? স্নাতকস্তরে পড়াশুনা করে এবং তারপর চাকরিতে যোগ দেয়?
৮) ঘড়িতে পৌনে তিনটা বাজলে ঘন্টার কাঁটা ও মিনিটের কাঁটা কত ডিগ্রি কোণ তৈরি করে?
৯) মনে করো তুমি জলদস্যুদের নেতা। লুট করা সোনা কীভাবে ভাগ হবে এর জন্য জাহাজের সব নাবিকরা ভোট করার সিদ্ধান্ত নিল। তোমায় এমনভাবে সোনা নিতে হবে যেটায় অন্তত দলের অর্ধেক দস্যু রাজি হবে, আর তুমিও অনেক সোনা ঘরে নিয়ে যেতে পারবে।
১০) সারা বিশ্বে পিয়ানো টিউনারস কতগুলি আছে?

গুরুত্বপূর্ণ ১০১টি সাধারণজ্ঞান


জানার কোনো শেষ নেই। মানব জীবনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করতে হয়। শিক্ষাঙ্গন, চাকুরিসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জ্ঞানীরা অগ্রাধিকার পায়। তাই জ্ঞানার্জনের কোনো বিকল্প নেই। নিজের পরিকল্পনা ও দক্ষতা উন্নয়নে সাধারণজ্ঞান বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিচে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাধারণজ্ঞান দেয়া হল।
নদীমাতৃক দেশ বলা হয় কোন দেশ কে? – বাংলাদেশ।
ভাটির দেশ বলা হয় কোন দেশ কে?- বাংলাদেশ।.
সোনালী আশের দেশ বলা হয় কোন দেশ কে?- বাংলাদেশ।
মসজিদের শহর বলা হয় কোন শহরকে?- ঢাকা।
রিক্সার নগরী বলা হয় কোন নগরীকে? – ঢাকা।
৩৬০ আউলিয়ার দেশ বলা হয় কোন নগরীকে?- সিলেট
বারো আউলিয়ার দেশ বলা হয় কোন নগরীকে? – চট্রগ্রাম
বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী নাম কি? – চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশে প্রবেশ দ্বার কোনটি? – চট্টগাম বন্দর।
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার কোনটি? – বগুড়া।
পশ্চিমা বাহিনীর নদী বলা হয় কোন নদী কে?- ডাকাতিয়া বিল।
বাংলার শস্য বলা হয় কোন অঞ্চল কে?- বরিশাল।
বাংলার ভেনিস বালা হয় কাকে? – বরিশাল কে।
হিমালয়ের কন্যা বলা হয় কাকে? – পঞ্চগড়কে।
সাগর কন্যা বলা হয় কাকে?- কুয়াকাটা কে।
সাগর দ্বীপ বলা হয় কাকে?- ভোলা কে।
কুমিল্লার দু:খ বলা হয় কাকে?- গোমতী কে।
বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী বলা হয় কাকে?- কক্সবাজার কে।
প্রাচ্যের ডান্ডি বলা হয় কাকে?- নারায়ণগঞ্জকে।
বাংলাদেশের কুয়েত বলা হয় কোন অঞ্চলকে?- খুলনা ( চিংড়ি চাষের জন্য)।
চর্যাগীতি আবিস্কার করেন ? হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
উপমহাদেশের প্রথম ছাপাখানা কোনসালে স্থাপিত হয় ? ১৪৯৮ সালে
বাংলা মুদ্রণ যন্ত্র আবিস্কার হয় যেসালে ? ১৮০০
চর্যাপদ আবিস্কৃত হয় কোথা থেকে ? নেপালের রাজগ্রন্থশালা থেকে
বাংলা ভাষার প্রথম কবিতা সংকলন ? চর্যাপদ
বাংলা ভাষা উদ্ভব হয়েছে নিন্মোক্ত একটি ভাষা থেকে ? প্রাকৃত
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কার কাছে প্রত্যক্ষভাবে ঋণী ? অপভ্রংশ
বাংলা ভাষা উদ্ভব ঘটে কোন সময় থেকে ? খ্রিস্টীয় দশম শতকের কাছাকাছি সময়
বাংলা ভাষার উদ্ভব হয় ? সপ্তম খ্রিষ্টাব্দে
বাংলা ভাষার বয়স কত ? ১০০০ বছর
বাংলা ভাষার আদিস্তরের স্থিতিকাল কোনটি ? দশম থেকে চতুর্দশ শতাব্দী
মানুষের মুখে উচ্চারিত অর্থবোধক ও মনোভাব প্রকাশক ধ্বনি সমষ্টিকে বলে ? ভাষা
মনের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম কোনটি ? ভাষা
পৃথিবীতে বর্তমানে কতগুলো ভাষা প্রচলিত ? এক হাজার
বাংলা আদি অধিবাসীগণ কোন ভাষাভাষী ছিল ? অস্ট্রিক
চর্যাপদ কোন ধমাবলম্বীদের সাহিত্য ? সহজিয়া বৌদ্ধ
শ্রীরামপুরের মিশনারীরা স্মরণীয় যে জন্য ? প্রথম বাংলা মুদ্রণ
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন কোনটি ? চর্যাপদ
বাংলা ভাষার প্রথম কাব্য সংকলন চর্যাপদ এর আবিস্কারক ? হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
কোন সাহিত্যকর্মে সান্ধ্যভাষার প্রয়োগ আছে ? চর্যাপদা
চর্যাপদের বয়স আনুমানিক কত বছর ? ১০০০ বছর
প্রাপ্ত চর্যাপদের পদকর্তা কতজন ? ২৩
চর্যাপদের কোন পদটি খন্ডিত আকারে পাওয়া যায় ? ২৩ নং পদ
বাংলা সাহিত্যের আদি কবি কে ? লুইপা
শবর পা কে ছিলেন ? চর্যাকর
নিচের কোনটি সহোদব ভাষাগোষ্টী ? বাংলা ও অসমিয়া
‘খনার বচন’ কি সংক্রান্ত ? কৃষি
বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা- ১৫ কোটি ৭৯ লক্ষ
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার- ১.৩৬%
পুরুষ-নারী অনুপাত- ১০৪.৯০ : ১০০
প্রতি বর্গ কি.মি তে জনসংখ্যার ঘনত্ব- ১০৩৫ জন
প্রত্যাশিত গড় আয়ু- ৭০.৭০ বছর
পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু- ৬৯.৯০ বছর
মহিলার প্রত্যাশিত গড় আয়ু- ৭১.৫০ বছর
সাক্ষরতার হার- ৬২.৩০%
দারিদ্রের হার- ২৪.৪৭%
মোট ব্যাংক- ৫৬ টি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরের ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ ভাস্কর্যের স্থপতি কে? শামীম সিকদার।
মিরপুরের ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের স্থপতি কে? মোস্তফা হারুন কুদ্দুস।
বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী কে? তাজউদ্দীন আহমদ।
বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার কোথায় গঠিত হয়? মেহেরপুরে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে? ১৪ ডিসেম্বর।
বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কে? সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
অহিংসা ও অসহযোগ আন্দোলনের জনক কে? মহাত্মা গান্ধী।
বাংলাদেশ কখন জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে? ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর।
পানিপথের প্রথম যুদ্ধ কখন হয়? ১৫২৬ সালের ২১ এপ্রিল।
কার সঙ্গে পানিপথের প্রথম যুদ্ধ হয়? ইব্রাহিম লোদীর সঙ্গে।
সোনারগাঁও থেকে সিন্ধু নদ পর্যন্ত বিস্তৃৃত সড়কের নাম কী? গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড
গ্র্যান্ড ট্রাংক রোডের নির্মাতা কে? শের শাহ।
টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেত কার আমলে? শায়েস্তা খানের আমলে।
নবাব সিরাজদৌলার প্রকৃত নাম কী? মির্জা মোহাম্মদ।
অর্থনীতিবিদ ম্যালথাসের মতে জনসংখ্যা বাড়ে কোন হারে? জ্যামিতিক হারে।
কত সাল থেকে ইংরেজরা বাংলা শাসন শুরু করে? ১৭৫৭ সাল থেকে।
গম্ভীরা কী? উত্তরাঞ্চলের (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) আঞ্চলিক গান।
জনসংখ্যার দিক থেকে মুসলিম বিশ্বে প্রথম কোন দেশ? ইন্দোনেশিয়া।
সংবিধান প্রণয়নের কমিটি গঠন করা হয়েছিল- ১১ই এপ্রিল,১৯৭২ সাল
সংবিধান প্রণয়নের কমিটির প্রধান ছিলেন – ড . কামাল হোসেন
সংবিধান প্রণয়নের কমিটির মোট সদস্যে ছিলেন – ৩৪ জন
সংবিধান গণপরিষদে বিল আকারে উত্থাপিত হয়- ১২ই অক্টোবর , ১৯৭২সাল
সংবিধান গণপরিষদে বিল আকারে উত্থাপন করেছিলেন – ড. কামাল হোসেন
সংবিধান গণপরিষদে পাশ এবং আইনে পরিণত হয় – ৪ঠা নভেম্বর , ১৯৭২
সংবিধান জাতীয় সংসদে প্রণীত হয় – ৪ঠা নভেম্বর,১৯৭২ সাল
সংবিধান জাতীয় সংসদে কার্যকর হয় -১৬ই ডিসেম্বর,১৯৭২ সাল
মূল সংবিধানের কপিটি বর্তমানে সংরক্ষিত আছে – বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে
সংবিধানের মোট ভাগ – এগারটি
সংবিধানের মোট অনুচ্ছেদ – একশ তিপ্পান্নটি
সংবিধানের মোট তফসিল – সাতটি
দেশের ৮ম বিভাগ হতে যাচ্ছে ময়মনসিংহ বিভাগ।
দেশের ৬৫তম জেলা হবে ভৈরব।
দেশের ৩য় সমুদ্র বন্দর পায়রা সমুদ্র বন্দর।
বর্তমানে দেশে উপজেলার সংখ্যা ৪৮৯টি।
বর্তমানে দেশে থানার সংখ্যা ৬৩৬টি।
বর্তমানে দেশে পৌরসভার সংখ্যা ৩১৯টি।
বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১১৯০মার্কিন ডলার।
জনসংখ্যার ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) ১০১৫ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম ভিসি স্যার পিজে হার্টস
গ্রিনিচ মান সময়ের সঙ্গে যে শহরের সময়ের ব্যবধান নেই- লন্ডন
INTERNER-কবে সালে আবিষ্কৃত হয়?-১৯৬৯
EMAIL কবে আবিষ্কৃত হয়?-১৯৭১
HOTMAIL কত সালে আবিষ্কৃত হয়?-১৯৯৬ সালে GOOGLE কত সালে আবিষ্কৃত হয়?-১৯৯৮ সালে

অনেক কিছুই নতুন পাবেন উইন্ডোজ ১০-এ


দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে দুই মডেল গতকাল উইন্ডোজ ১০ দেখাচ্ছেন l এএফপিআনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল বুধবার বাজারে এল মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম (ওএস)। এখন যাঁরা মূল উইন্ডোজ ৭ সংস্করণ বা তার পরবর্তী সংস্করণ ব্যবহার করছেন, তাঁরা চাইলে বিনা মূল্যেই উইন্ডোজ ১০ হালনাগাদ করে নিতে পারবেন। উইন্ডোজের আগের কয়েকটি সংস্করণের সমন্বিত রূপ এটি।
মাইক্রোসফট করপোরেশনের ব্যবসার বড় হাতিয়ার এই উইন্ডোজ। সারা বিশ্বে প্রায় ১৫০ কোটি ডেস্কটপ কম্পিউটারে উইন্ডোজ ব্যবহার করা হচ্ছে। মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা জানান, উইন্ডোজ ১০ এক নতুন যুগের সূচনা করবে। নতুন ওএসের জন্য মাইক্রোসফট আনুষ্ঠানিক ১৪ পাতার একটি টিউটোরিয়ালও প্রকাশ করেছে।
একের ভেতর অনেক:
মাইক্রোসফট জানিয়েছে, উইন্ডোজ ৮-এর ১০ বাজারে ছাড়ার কারণ হচ্ছে, ব্যবহারকারীদের ট্যাবলেট, স্মার্টফোন ও কম্পিউটারে একই উইন্ডোজ ব্যবহারের সুবিধা দেওয়া।
উন্নত পর্দা: উইন্ডোজ ১০-এ যুক্ত হয়েছে পর্দার জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ‘কন্টিনিউম’ নামের এ সুবিধা কম্পিউটার, ট্যাবলেট কিংবা স্মার্টফোনে একইরকম পর্দা ব্যবহারের সুবিধা দেবে।
কর্টানাফিরেছে স্টার্ট: আগের যেকোনো সংস্করণের চেয়ে দ্রুত, বেশি নিরাপদ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহজ সুবিধা নিয়ে এসেছে উইন্ডোজ ১০। উইন্ডোজ ৮-এর পর এবার আবার ফিরে এসেছে স্টার্ট বাটন।
ডিজিটাল সহকারী: উইন্ডোজ ১০-এ যোগ হয়েছে ডিজিটাল সহকারী। ‘কর্টানা’ নামের বিশেষ এ সহকারী অনেকটা অ্যাপল আইওএসের ‘সিরি’র মতো। কথা বলে বলে এই ডিজিটাল সহকারীর সেবা নেওয়া যাবে।
দ্রুতগতির ব্রাউজার: যুক্ত হয়েছে দ্রুতগতির ব্রাউজার মাইক্রোসফট এজ। দীর্ঘদিনের মাইক্রোসফট এক্সপ্লোরারের জায়গায় আসছে এটি।

Wednesday, July 29, 2015

কাবা শরিফ সাঁতরে তওয়াফ করা কিশোরের ইন্তেকাল


কাবা শরীফ পানিতে ডুবে গেছে, আর একজন সাঁতার কেটে তওয়াফ করছে, ৭৪ বছর পুরনো সাদাকালো এই ছবিটি যিনিই দেখেছেন তিনিই অবাক হয়ে তাকিয়ে ভালো করে বোঝার চেষ্টা করেছেন ছবিটির মর্মার্থ কি ? কাবা শরিফ যে ভ্যালিতে আল্লাহর নির্দেশে তৈরী হয়েছে সেখানে বেশি বৃষ্টি হলে সবসময়ই পানি জমে যেতো।
১৯৪১ সনে একাধারে ৭ দিন বৃষ্টি হওয়াতে ৬ফুট পানি জমে গিয়েছিলো কাবার চারপাশে। বাহরাইনের ১২ বছর বয়সী শেখ আলআওয়াদী তখন মক্কায় দ্বীনি স্কুলের ছাত্র। ২০১৩ সনে কুয়েত আল রাই টেলিভিশনে তিনি তার স্মৃতি চারণে বলেন, “বন্যার পানিতে মানুষ, যানবাহন, আর গবাদি পশু ভেসে যেতে দেখেছি। ৭ দিন পর বৃষ্টি থামলে আমর ভাই হানিফ, বন্ধুবর তিমবাক্তুর মালিয়ান শহরের মোহাম্মদ আল তাইয়িব, ও আলী থাবিত, আর ইয়ামেনের এডেনের হাসিম আল বার, আর আমাদের শিক্ষক তিউনিসের আব্দুল রউফ মিলে কাবা শরীফের বন্যার অবস্থা দেখতে যাই।
বাচ্চারা পানি দেখলে যা করে আমরাও তাই করলাম, মাথায় আসলো সাতরিয়ে তওয়াফ করবো। যা ভাবা তাই, আমরা চারজন পানিতে ঝাপিয়ে পড়লাম।পুলিশ হই হই করে উঠলো, আমরা কালো পাথর চুরি করার নিয়তে পানিতে নেমেছি কিনা। আমি সাতরাতে সাতরাতে পুলিশকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম, আমি শুধু সাতরিয়ে তওয়াফ করব ৭ বার, পুলিশ তার স্বভাব সুলভ খবরদারী করেই চলছিলো। ইতিমধ্যে আলী থাবিত আর মোহাম্মদ আল তাইয়িব ক্লান্ত হয়ে পড়লে কাবা শরীফের দরজার ওপর বসে থাকে, উদ্ধার হবার আশায়।”
তিনি বলেন, “আমার ভয় হচ্ছিলো যে পুলিশ আমাকে গুলি করে না বসে আবার আনন্দ হচ্ছিলো এই ভেবে যে, পৃথিবীতে কেউ কোনদিন এই ভাবে কাবা প্রদক্ষিন করেনি, আমিই প্রথম। তাই ভয় আর আনন্দের মিশ্র অনুভুতি নিয়ে আমি কাবার চারপাশে সাতরিয়েই চললাম। পরবর্তীতে জানতে পেরেছিলাম, পুলিশের রাইফেলে আসলে গুলি ছিলোনা।” শেখ জানান তিনি তৎকালীন মক্কার বুড়ো মানুষদের কাছে জানতে চেয়ে ছিলেন তারা এরকম বানের পানি আগে দেখেছেন কিনা, তারা কস্মিন কালেও এত পানি দেখেননি বলে খবর দিয়েছেন।
২০১৫ র মে মাসের ১৬ তারিখ ৮৬ বছর বয়সে শেখ আল আওয়াদি বাহরাইনে ইন্তেকাল করেন। তার ছেলে আব্দুল মজিদ ২০ বছর আগে হজ্জ করতে গিয়ে তার বাবার ছবির পোস্টার কপি কিনে এনেছিলো মক্কা থেকে পিতার জন্যে উপহার হিসাবে।
প্রতিটি মুসলমান জানে কাবাঘর আল্লাহর হুকুমে বানানো একটি প্রতিকী ঘর, মুসলমানরা এই ঘরের দিকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্যেশ্যে সেজদা, প্রনতি করে, কাবাঘর বা এর আনুসঙ্গিক কালো পাথর, মাকামে ইব্রাহিম এগুলির পূজা করেনা কেউ, তাই অনেকবার কাবা পানিতে ডুবে গেছে, আগুন লেগেছে, কালো পাথর খুলে নিয়ে গেছে বহু বছরের জন্যে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা। আব্বাসীয় খলিফাদের উদ্ধার পর্বে ভাঙ্গা পাথরটির সব টুকরাও পাওয়া যায়নি হয়তো, এখন রুপোর বেষ্টনী দিয়ে আটকানো আছে বাকিগুলি সেই থেকে। মহা বিশ্বের যেকোনো উপাদান দিয়ে তৈরী কোনো জিনিষ স্থায়ী নয়, এগুলি সবই আল্লার সৃষ্ট বস্তু নীচয় । আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা, চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, মুসলমানরা শুধু আল্লাহরই উপাসনা করে। সৃষ্ট কোনো কিছুরই পূজা ইসলামে নেই।

মা ,মা- মা তো মা-ই! (ভিডিও)


চীনের একটি শপিং মলে এস্কেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি) দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে সন্তানকে মা যেভাবে বাঁচিয়েছেন তা নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় এখন আলোচনার হিড়িক।
নিরাপত্তা ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, একটি এস্কেলেটরে (চলন্ত সিঁড়ি) সাদা শার্ট পরা মা তার সন্তানকে নিয়ে প্রায় উপরে ওঠার আগ মুহূর্তে যখন ধাতু প্যানেলে পা রাখে তখন কলাপ্স সরে গিয়ে সে ভিতরে পরে যায়। সাথে সাথে মা তার ছেলেকে উপরে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলা মল কর্মচারীর দিকে ঠেলে দেয়।
চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ হয় ঐ মহিলার নাম জিয়াং লিউজুয়ান (৩১)। এস্কেলেটরে শরীরের উপরিভাগ যখন আটকে ছিল তখন পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা দুই মহিলা মল কর্মচারী জিয়াংকে টেনে আনতে চেষ্টা করে। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সে চলন্ত সিঁড়ি খাদের মধ্যে পরে মারা যায়। তার ছেলের কোন ক্ষতি হয় নি।
গত রবিবার বিকেলে চার ঘন্টার রেসকিউ অপারেশন করার পর অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা এস্কেলেটর কেটে জিয়াং-এর মরদেহ উদ্ধার করে।

Tuesday, July 28, 2015

ভারতরত্ন এপিজে আবদুল কালামের জানা- অজানা দশ


১) কালাম দক্ষিণ ভারতীয় খাবার বিশেষত 'ইডলি' খেতে খুব পছন্দ করতেন।
২) ডক্টর কালাম কর্ণাটকী কণ্ঠ শিল্পী এমএস শুভলক্ষ্মীর গানের বড় ভক্ত ছিলেন। শুভলক্ষ্মীও কালামকে খুব ভালবাসতেন। বিখ্যাত এই সঙ্গীতজ্ঞ নিজে হাতে কিছু রান্না করলে তা কালামকে পাঠাতেন। দুজনে মিলে মেঝেতে বসে কলা পাতার ওপর খেতেনও।
৩) ছোটবেলায় কালামের তিনজন ঘনিষ্ঠবন্ধু ছিল। রামনধ শাস্ত্রী, অরবিন্দন ও শিবপ্রকাশন। এই তিনজন বন্ধুই ছিল ব্রাহ্মণ পরিবারের সদস্য
৪) রামেশ্বরম মন্দিরের প্রধান পুরোহিত পক্ষী লক্ষ্মণ শাস্ত্রী ছিলেন কালামের বাবার প্রিয় বন্ধু
৫) রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে কালাম এক কামরার এখটা ছোট্ট ঘরে থাকতেন।
৬) রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী তাঁর আত্মীয়রা রাষ্ট্রপতি ভবনে বিনা খরচে বিমানে চেপে কালামের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারতেন। কিন্তু তা না করে কালাম দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনের টিকিট চেয়েছিলেন।
৭) বাড়ির বাইরের দেওয়ালে একবার ভাঙা কাচ লাগানোর কথা কালামকে বলা হয়েছিল, সেটা শুনে প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন। কারণ তার মনে হয়েছিল তাহলে পাখিদের খুব অসুবিধা হবে।
৮) দেশের প্রথম অবিবাহিত রাষ্ট্রপতি কালামকে একবার এক অনুষ্ঠানে বাকিদের চেয়ে বড় বিশেষভাবে বানানো এক চেয়ারে বসতে বলা হয়েছিল। কালাম তাতে রাজি হননি। তিনি বাকিদের মত সাধারন চেয়ারে বসেছিলেন।
৯) কেরলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর প্রথম সফরে কালাম রাজভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বিশেষ দুজনকে। একজন হলেন রাস্তার মুচি আর অন্যজন ছোট এক হোটেলের মালিক
১০) ৪০০ জন ছাত্রছাত্রীর কাছে কালম ভাষণ দেওয়ার সময় বিদ্যুত্‍ চলে যায়। তিনি তাতে থেমে থাকেননি। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের বলেন তাকে গোল হয়ে ঘিরে দাঁড়াতে। খালি গলাতেই ৪০০ জন ছাত্রছাত্রীর মাঝে বক্তৃতা দিতে থাকেন।
এপিজে আবদুল কালামের স্মরণীয় সেরা উক্তি

এপিজে আবদুল কালামের স্মরণীয় সেরা উক্তি


ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট, মিসাইল ম্যান হিসেবে খ্যাত ড. এপিজে আবদুল কালাম গতকাল মেঘালয়ের শিলংয়ে মারা গেছেন। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, শিলংয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে অকস্মাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়ে যান। দ্রুত তাকে বিথান হাসপাতালে ভর্তির পর মারা যান তিনি। একধারে তিনি ছিলেন ভারতের আধুনিক প্রযুক্তির জনক, লেখক। সর্বশেষ তিনি ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন ভারতের প্রেসিডেন্ট। জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন একজন দার্শনিকও। তার দর্শন ফুটে উঠেছে তার বিভিন্ন লেখা, বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। এখানে তার আলোচিত ১০টি উদ্ধৃতি তুলে ধরা হলো।
এক. স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে স্বপ্ন দেখতে হবে।
দুই. পরম উৎকর্ষতা হলো একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা হঠাৎ করেই আসে না।
তিন. জীবন হলো এক জটিল খেলা। ব্যক্তিত্ব অর্জনের মধ্য দিয়ে তুমি তাকে জয় করতে পার।
চার. সফলতার আনন্দ পাওয়ার জন্য মানুষের কাজ জটিল হওয়া উচিত।
পাঁচ. যদি আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মে কাছে একটি সমৃদ্ধ ও নিরাপদ ভারত দিয়ে যেতে পারি তাহলে আমরা স্মরণীয় হতে পারবো।
ছয়. যারা হৃদয় দিয়ে কাজ করে না তারা যা অর্জন করে তা ফাঁকা, তা হয় অর্ধেক হৃদয়ের সফলতা। তাতে সব সময়ই একরকম তিক্ততা থেকে যায়।
সাত. শিক্ষাবিদদের উচিত শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুসন্ধানী, সৃষ্টিশীল, উদ্যোগী ও নৈতিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়া, যাতে তারা আদর্শ মডেল হতে পারে।
আট. আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। মহাবিশ্ব আমাদের প্রতি বন্ধুপ্রতীম। যারা স্বপ্ন দেখে ও সেমতো কাজ করে তাদের কাছে সেরাটা ধরা দেয়।
নয়. যদি কোন দেশ দুর্নীতিমুক্ত হয় ও সুন্দর মনের মানসিকতা গড়ে ওঠে, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি সেখানকার সামাজিক জীবনে তিন রকম মানুষ থাকবে, যারা পরিবর্তন আনতে পারেন। তারা হলেন পিতা, মাতা ও শিক্ষক।
দশ. তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান হলো ভিন্নভাবে চিন্তা করার সাহস থাকতে হবে, আবিষ্কারের নেশা থাকতে হবে, যেপথে কেউ যায় নি সেপথে চলতে হবে, অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস থাকতে হবে, সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং তারপর সফল হতে হবে। এগুলোই হলো সবচেয়ে মহত গুণ। এভাবেই তাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তরুণদের কাছে এটাই আমার বার্তা।
সর্ম্পকিত আরো ব্লগ: জীবনের শেষ বেলাতেও ‘শিক্ষক’ ছিলেন ‘মিসাইল ম্যান’ এপিজে আব্দুল কালাম

জীবনের শেষ বেলাতেও ‘শিক্ষক’ ছিলেন ‘মিসাইল ম্যান’ এপিজে আব্দুল কালাম


প্রয়াত ‘ভারতের মিসাইল ম্যান’ এপিজে আব্দুল কালাম। সোমবার শিলংয়ে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম। শিলং হাসপাতালে তাঁকে ভরতি করা হয়। বহু চেষ্টার পরেও তাঁকে বাঁচাতে পারেননি ডাক্তাররা। ভারতীয় সেনার ডাক্তার গিয়ে পরীক্ষা করে আব্দুল কালামকে মৃত বলে ঘোষণা করে। কর্ণাটকের সব কাজ ফেলে আগামিকাল দিল্লি উড়ে আসছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আবদুল কালামকে তিনি পথ প্রদর্শক হিসাবে ব্যাখ্যা করলেন।
অসুস্থ হওয়ার মুহূর্ত
দুপুরেই(৩টে) গুয়াহাটি বিমানবন্দর থেকে পায়ে হেঁটে বেরলেন আবদুল কালাম। বিমানবন্দর ছাড়ার সেই শেষ মুহুর্ত।
সাত দিনের জন্য জাতীয় শোক পালিত হবে।
ফিরে দেখা-কালাম
নেহাতই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। অল্প বয়সেই সংসারের বোঝা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু পড়াশোনা ছাড়েননি। পরম নিষ্ঠায় নিজেকে একটু একটু করে গড়ে তোলা সেই মানুষটিই পরবর্তীকালে হয়ে ওঠেন গোটা দেশের পথ প্রদর্শক।
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে এপিজে আব্দুল কালামের জন্ম ১৯৩০ সালের ১৫ অক্টোবর। বাবা জৈনুলাবেদিন, মা আসিয়াম্মা। অভাবের সংসারে শৌসব আদৌ স্বাচ্ছন্দ্যো কাটেনি কালামের। সংসার চালাতে বিভিন্ন কাজ করেছেন। আবার পড়াশোনাতেও বরাবরই তিনি সেরা।তিরুচিরাপল্লীর সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরও তৃপ্তি পাননি। পরের বছরই মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন কালাম। এমআইটির স্নাতক কালাম দেশের অন্যতম প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-র মুখ্য বিজ্ঞানী ছিলেন। কিন্তু আরও বড় পরিসরে কাজের আগ্রহ তাঁর ছিল সীমাহীন। সেই তাগিদেই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোয় যোগ দেন। তিনিই ছিলেন ভারতের প্রথম স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল প্রোজেক্টের অধিকর্তা। সত্তরের দশকে ইসরোয় একাধিক নজরকাড়া কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন তিনি। তাঁরই তত্‍পরতায় সরকার আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে সায় দেয়। অগ্নি ও পৃথ্বীর মতো মিসাইল কর্মসূচি রূপায়ণে কালামই ছিলেন মূল চালিকাশক্তি। তাঁর উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগত দক্ষতায় ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হয়ে ওঠে আরও নিশ্ছিদ্র। পোখরানে পারমানবিক বিস্ফোরণের নেপথ্যে মূল চালিকাশক্তিও ছিলেন তিনি। এর সুবাদেই দেশজুড়ে মিসাইল ম্যান নামে পরিচিত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান উপদেষ্টা ছিলেন। থেকেছেন আরও নানা সরকারি পদে। দুহাজার দুই সালে সেই মানুষটিই ধরা দিলেন সম্পূর্ণ অন্য আঙ্গিকে। সরকার ও বিরোধী দলের সমর্থন জিতে নিয়ে দেশের একাদশ রাষ্ট্রপতি হন তিনি। ভাবনা, মনন ও আচরণে তিনি ষোলোআনা জনগণের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বলেই মনে করে বিদগ্ধ মহল। ব্যস্ততা ছিল, তবুও তাঁর মাঝেই নিরন্তর চলেছে তাঁর পড়াশোনা এবং গবেষণা।

Monday, July 27, 2015

১ বলে ২৮৬ রানের রেকর্ড!


১ বলে ১ রান। ১ বলে ২ রান। ১ বলে ৩ রান। ১ বলে ৪ রান। ১ বলে ৬ রান। ১ বলে ১১ রান করার নজিরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রয়েছে। কিন্তু ১ বলে ২৮৬ রান! এও কি সম্ভব? ইতিহাস বলছে এই অসম্ভবও সম্ভব হয়েছে। ২২ গজ থেকে বল মেরে গাছে পাঠিয়ে দেন ব্যাটসম্যান। গাছটি ছিল মাঠের ভেতরেই। গাছের ওপর উঠে যায় বল। বল নামিয়ে নিয়ে আসতে আসতে ২৮৬ বার উইকেটের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত দৌড়ে ২৮৬ রান নেন ব্যাটসম্যান। ১৮৯৪ সালের ১৫ জানুয়ারি। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইংরাজি পত্রিকা পল মল গেজেটে প্রকাশিত হয়েছিল এমন একটি খবর, যেখানে ক্রিকেটের এই অবিশ্বাস্য নজিরের কথা লেখা হয়েছিল। খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল ওই পত্রিকার ‘স্পোর্টস নোটস অ্যান্ড নিউজ’ সেকশনে।
ক্রিকেট তো বরাবরই সাহেবদের খেলা হিসেবেই পরিচিত। সাহেবরাই নাকি ঘটিয়েছিলেন এই বিস্ময়। এই ১ বলে ২৮৬ রানের গল্প জানতে হলে আপনাকে চলে যেতে হবে একেবারে ক্রিকেটের আদিম যুগে। আজ থেকে প্রায় ১২ দশক আগের কথা। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বানবারিতে ভিক্টোরিয়া একাদশ বনাম ‘স্ক্র্যাচ একাদশ’ খেলায় এই নজির ঘটিয়েছিলেন ভিক্টোরিয়া একাদশের ব্যাটসম্যানরা, এমনটাই দাবি করা হয় ওই সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে। খেলা শুরুর প্রথম বলেই লম্বা জারাহ গাছের মাথায় বল পাঠিয়ে দেন ব্যাটসম্যান। বল খুঁজে না পেয়ে বিপক্ষ দলের পক্ষ থেকে আম্পায়ারের কাছে ‘বল লস্ট’ এর আবেদন জানানো হয়। কিন্তু আম্পায়ার তা নাকজ করে দেন।
এর মধ্যেই দৌড়েই ২৮৬ রান করে ফেলে ভিক্টোরিয়া একাদশের ব্যাটসম্যানরা। এরপর একজন ওই গাছের মাথা থেকে বল নামিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু এর মধ্যেই তৈরি হয়ে যায় বিশ্বরেকর্ড। বিজ্ঞানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২২ গজে ২৮৬ বার দৌড়ানো ৬ কিলোমিটারের সমান।
সর্ম্পকিত আরো ব্লগ:
ক্রিকেট দল, নাকি হাঁসের খামার! নয়জনই শূন্য রানে আউট!

বাংলাদেশের ‘পোস্টার গার্ল’ কিশোরী নাসিমার অবিস্মরণীয় বিজয়গাথা (ভিডিও)


বাংলাদেশে ইসলামী সমাজব্যবস্থায় নারীদের যেখানে বহু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়, সেখানে পারিবারিক ও সামাজিক বহু প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে সামনে এগিয়ে গেছেন ১৮ বছর বয়সী দুরন্ত এক কিশোরী। সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে গৌরবের পথে দৃপ্ত পায়ে এগিয়েছেন। ‘পোস্টার গার্ল’ বা বিজ্ঞাপনের মুখ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। বৃটেনভিত্তিক অনলাইন পত্রিকা ‘দ্য সানডে টাইমস’-এ ‘বাংলাদেশী সার্ফার গার্ল সিঙ্কস মুসলিম ট্যাবুজ’ শিরোনামে বাংলাদেশী এই তরুণীকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে নাসিমা আক্তার নামে সংগ্রামী ওই কিশোরীর অসামান্য গৌরবগাথার গল্প।
নাসিমা বাংলাদেশের একজন সার্ফার। বঙ্গোপসাগরের বিশাল বিশাল ঢেউয়ের সঙ্গে তার সখ্যতা। মিতালি গড়ে উঠেছে সমুদ্রের সঙ্গে। তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকতগুলোর একটি অবস্থিত। এ তরুণী বাংলাদেশের রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের প্রচলিত প্রথা ভেঙে অন্য তরুণীদের সার্ফিং শেখাচ্ছেন। তাদের অনুপ্রেরণা, উৎসাহ দিয়ে আগ্রহী করে তুলছেন। বাংলাদেশে সার্ফিং প্রতিযোগিতায় তিনি নিয়মিত কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। আর, তিনি হারিয়ে চলেছেন একের পর এক পুরুষ সার্ফার প্রতিযোগীদের। সমাজ কি বলবে, সেই ভয়ে যে মেয়েরা সার্ফিংয়ে আসতো না, তাদেরও উদ্বুদ্ধ করে এই খেলায় নিয়ে এসেছেন তিনি। এমন মন্তব্য করছিলেন মার্কিন সাংবাদিক জায়মাল ইয়োগিস।
নাসিমা আক্তারের সঙ্গে ইয়োগিসের পরিচয় ৪ বছর আগে। তিনি বলছিলেন, নাসিমা তাদের বাইরে বেরিয়ে তাদের পছন্দের কাজ করার সাহস যুগিয়েছে। একটি ভ্রমণ বিষয়ক ম্যাগাজিনে ইয়োগিস নাসিমার ওপর একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়ার এক চলচ্চিত্র নির্মাতা হিদার কেসিঞ্জার বড় পর্দায় নাসিমার গল্পটি তুলে ধরতে চাইলেন। এ বছরের শেষ ভাগে একটি চলচ্চিত্র উৎসবে নতুন প্রামাণ্যচিত্র ‘দ্য মোস্ট ফিয়ারলেস’ প্রদর্শন করা হবে। এ ডকুমেন্টারিতেই উঠে এসেছে নাসিমার অসামান্য এগিয়ে চলার গল্প। মাত্র ৯ বছর বয়সে বাড়ি থেকে জোর করে বেরিয়ে এসে কিভাবে একটি সার্ফ ক্লাবে নিজের দ্বিতীয় পরিবার খুঁজে পেলেন নাসিমা, সে কাহিনী উঠে এসেছে। একটি অ্যামেরিকান ক্রিশ্চিয়ান সংগঠন এ সার্ফিং সংগঠনটির পৃষ্ঠপোষক। বাংলাদেশ সার্ফ ক্লাবের সদস্য নাসিমার সঙ্গে এখন আরও নারী সার্ফার রয়েছেন। তিনিই তাদের এ পথ দেখিয়েছেন। তাদের সবাইকেই নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে সামনে এগোতে হয়েছে। নাসিমাও মানুষের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছেন। যখনই নাসিমা সমুদ্র সৈকতে গেছেন, আশপাশের লোকজনরা তাকে ‘বেশ্যা’ বলে বিদ্রপ করেছেন।
বিশ্বের যে দেশগুলোতে সার্ফিংয়ের সুযোগ রয়েছে, সেসব দেশেও কিন্তু পুরুষ সার্ফারদের সংখ্যা নারীদের তুলনায় অনেক বেশি। অবশ্য, বাংলাদেশ এখনও সার্ফিংয়ে একেবারেই নতুন। অথচ, এ দেশে নারী সার্ফারের সংখ্যা পুরুষ সার্ফারদের তুলনায় বেশি। নাসিমাকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রের নামকরণ ‘দ্য মোস্ট ফিয়ারলেস’ করার কারণ ব্যাখ্যা করলেন পরিচালক। ইয়োগিস বললেন, তার মধ্যে যেমন ছিল চারিত্রিক ঔজ্জ্বল্য, পাশাপাশি ছিল দাঁতে দাঁত চেপে কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা। সে কারণেই শেষ পর্যন্ত আমরা চলচ্চিত্রের নাম ‘দ্য মোস্ট ফিয়ারলেস’ রাখলাম।
এদিকে নাসিমা সার্ফিংয়ে যতো উন্নতি করতে লাগলো, তার পুরস্কারের অর্থও সমানতালে বাড়তে লাগলো। তারপরও শুধু সেই অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব ছিল না। তাই সমুদ্রের পানিতে ভেসে আসা নানা ধরনের মহোহর বস্তু ও শামুক-ঝিনুকের খোলস সংগ্রহ করে সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতো এবং কখনও কখনও উল্টো করে শুইয়ে রাখা নৌকার তলায় ঘুমাতো। প্রামাণ্যচিত্রটিতে সালোয়ার-কামিজ ও উরু-সমান শার্ট পরিহিতা নাসিমাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। নাসিমা আক্তার শুধু বাংলাদেশে নারীদের সার্ফিয়ের সূচনার পথিকৃৎ নন, তিনি কক্সবাজারের লাইফসেইভিং অ্যান্ড সার্ফিং ক্লাবে বাংলাদেশের প্রথম নারী লাইফগার্ড বা প্রাণ রক্ষাকারী ব্যক্তির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এতো অর্জন আর সাফল্য সত্ত্বেও, সমাজের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া নিয়ে সংগ্রাম করতে হচ্ছে নাসিমাকে। ১৬ বছর বয়সে যে তরুণের সঙ্গে তার বিয়ে হয়, তিনিও এটা মেনে নিতে পারেন না। সমাজের মানুষ বিষয়টাকে মোটেও ভালো চোখে দেখছে না বলে নাসিমাকে সতর্ক করেন স্বামী। ওই চলচ্চিত্রের বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
কেসিঞ্জার ২ বছর আগে প্রামাণ্য চিত্রটি নির্মাণের কাজে হাত দেন। সে সময় নাসিমাই ছিল বঙ্গোপসাগরের বুকে দাপিয়ে বেড়ানো একমাত্র কিশোরী। সে সংখ্যা পরে ক্রমেই দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং হচ্ছে। গত বছর ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সী ৮ জন সার্ফিং ক্লাবে ভর্তি হয়।
এই তরুণী সার্ফারদেরকেও ডকুমেন্টারিতে দেখানো হবে। নাসিমার সংগ্রাম ও সাফল্যগাথা তাদের ভিন্নভাবে ভাবতে অনুপ্রাণিত করবে এবং তাদের স্বপ্নের পথে এগোতে সাহায্য করবে। এ কথা বলছিলেন, কেসিঞ্জার। বাংলাদেশের একটি মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে তাদের মধ্যে একজনের স্থান করে নেয়াটাকে সমাজের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলেই মনে করা হচ্ছে। কেসিঞ্জার বলছিলেন, জীবনে বহু সংগ্রামের পথ পেরিয়েও নাসিমা হাল ছাড়তে আগ্রহী নন এবং তিনি অন্য মেয়েদের জন্য পথ তৈরি করে দিয়েছেন। তিনি বলছিলেন, যে কোন স্থানের পথিকৃৎদের কথা ভাবুন। কখনও কখনও তারা নিজের কাজের স্বীকৃতি পান এবং সমাজ তাদের বুঝতে পারে, কখনও হয়তো পরবর্তী প্রজন্ম তাদের চিনতে পারে। তিনি বললেন, নাসিমার গল্প এখনও শেষ হয়নি।
ভিডিও

‘জুনিয়র সাকিব’ আসছে..


দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলমান সিরিজ শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেটে আসছে বড় একটা ছুটি। আর এই ছুটির পর আসবে অস্ট্রেলিয়া দল। তবে, সাকিব আল হাসানের ছুটিটা আরেকটু লম্বা হতে যাচ্ছে।
কেন? সাকিবের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির সন্তানসম্ভবা। আর সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে এই বছরের শেষের দিকে, অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বরে বাবা হতে যাচ্ছেন সাবেক এই অধিনায়ক।
সাকিবের সন্তানের জন্ম হবে যুক্তরাষ্ট্রে। সাকিবের স্ত্রী এই মুহূর্তে সেখানেই অবস্থান করছেন। আর সব কিছু স্বাভাবিক গতিতে চললে সাকিবও ক’দিন পরেই চলে যাবে সেখানে।
সাকিবের সন্তান হওয়ার সময়টাতেই বাংলাদেশে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে আসবে অস্ট্রেলিয়া। আর সেই সিরিজ না খেলার সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) জানিয়ে দিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
দীর্ঘদিনের প্রেমের পর ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শিশিরের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সাকিব। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন উম্মে আহমেদ শিশির। পড়াশোনা, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১০ বছর বয়সে বাবা-মা'র হাত ধরে পাড়ি জমিয়েছিলেন স্বপ্নের দেশে।

‘সলমন আঙ্কল’ তাকে ‘পাগল’ বলত, জানাল হর্ষালি


বজরঙ্গি ভাইজান-এর সাফল্যের রথ ছুটছে জোর কদমে৷ আর তা যতখানি সলমন খানের ক্যারিসমায়, ততোখানি ‘মুন্নি’ হর্ষালি মালহোত্রার নিষ্পাপ, সরল চাহনিতেও বটে৷ সম্প্রতি বছর সাতেকের ছোট্ট হার্ষালি জানিয়েছে, সেটে ‘সলমন আঙ্কল’ তাঁকে পাগল বলত৷ কেননা আঙ্কল যখন কাঁদত সেও কেঁদে ফেলত৷
অনেকের অডিশনের পর বেছে নেওয়া হয়েছিল ছোট্ট হর্ষালিকে৷ প্রথমবার সলমন খানকে দেখে হর্ষালি জানতে চেয়েছিল, সলমন তাকে সুপারস্টার বানিয়ে দেবেন কি না৷ নাহ কেউ তাকে এ কথা শিখিয়ে দেননি৷ সলমন তাঁর মাকে জিজ্ঞেস করে জেনেছিলেন, এ একান্তই তাঁর নিজের কথা৷ সেটে সলমন আঙ্কলের সঙ্গে কেমিষ্ট্রিটা জমে গিয়েছিল হর্ষালির৷ ‘সলমন আঙ্কল’ তাঁকে পাগল বলে ডাকত বলে জানিয়েছে হর্ষালি৷ বাঁধন এতটাই শক্ত ছিল যে, যতবার ‘সলমন আঙ্কল’ কাঁদত, ততোবার কেঁদে ফেলত হর্ষালি৷
ছোট্ট হর্ষালির মেজাজ মর্জি বুঝেই শুটিং করতেন সলমন খান৷ তার উপর যাতে কোনও চাপ না পড়ে সেদিকে সবসময় খেয়াল রাখা হত৷ করিনা কাপুর খানও জানিয়েছিলেন, যখন হর্ষালি শুটিং করতে চাইত না তখন তার শুটিং বন্ধ করে অন্য কাজ করত ইউনিট৷
ছোট্ট হর্ষালি তার নিষ্পাপ সরল চাহনিতে একটাও কথা না বলে সকলের মন জয় করেছে৷ তবে এই বয়সেই সে যে তুখোড় অভিনেতা তারও প্রমাণ দিয়ে দিয়েছে৷সে কথা বলছেন স্বয়ং সলমন খান৷ শুধু চোখের অভিব্যক্তিতে এমন অভিনয় ক’জন বড় অভিনেত্রী করতে পারেন, তা নিয়ে সত্যি প্রশ্ন থেকে যায়৷

Tuesday, July 14, 2015

মদখোর থেকে পৃথিবীখ্যাত ইমাম


পরিচয়টা পরেই বলি। আগে ঘটনাটাই শুনুন। লোক ভরপুর এক মাহফিলে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি। শুরুতেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন এক শ্রোতা। বললেন, আপনার বক্তৃতা পড়ে শুনব। তার আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিন। বছর দশেক আগে আপনাকে মাতাল অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। আপনি ছিলেন ছন্নছাড়া এক ব্যক্তি। খারাপ কাজ ছাড়া ভালো কাজে দেখিনি কখনো। অথচ আজ আপনি আমাদের সামনে ওয়াজ করছেন। আপনার এই পরিবর্তন কিভাবে হলো?
শ্রোতার এমন প্রশ্ন এড়াতে পারলেন না বক্তা। বললেন, শুনুন তাহলে আমার ঘটনা।
সেদিন ছিল শবে কদরের রাত। শহরের মদের দোকানগুলো বন্ধ ছিল। এক দোকানিকে অনুরোধ করে মদ কিনলাম। তারপর চলে এলাম বাসায়। রাতে মদ ছাড়া ঘুমই আসত না। সেদিন বাসায় ঢুকেই দেখি স্ত্রী নামাজ পড়ছে। নিশ্চুপে আমার ঘরে চলে এলাম। টেবিলে রাখলাম বোতলটা। হঠাৎ আমার তিন বছরের মেয়েটা দৌড়ে এলো। টেবিলে সঙ্গে তার ধাক্কা লেগে মদের বোতলটি পড়ে ভেঙে গেল। সেটা দেখে অবুঝ মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে লাগল। মেয়ে বলে তাকে কিছু বলতেও পারছিলাম না।
ভাঙা বোতল ফেলে দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সেরাতে আর মদ খাওয়া হল না। তারপর চলে গেছে এক বছর। আবার এল লাইলাতুল কদর। অভ্যাস মতোই আমি মদ নিয়ে বাড়ি এলাম। বোতলটা টেবিলে রাখলাম। হঠাৎ বোতলের দিকে তাকাতেই বুক ভেঙে কান্না এলো। কারণ তিন মাস আগে আমার মেয়েটি মারা গেছে। গতবার তার বোতল ভাঙার কাহিনী আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মদটা আর খেতে পারলাম না। ঘুমিয়ে পড়লাম।
মাঝ রাতে স্বপ্নে দেখলাম এক বিরাট সাপ আমাকে তাড়া করছে। এত বড় সাপ আমি জীবনে দেখিনি। সেই ভয়ে আমি দৌড়াচ্ছি। এমন সময় এক দুর্বল বৃদ্ধকে দেখলাম। তাকে অনুরোধ করলাম সাপটি থেকে আমাকে রক্ষা করতে। কিন্তু বৃদ্ধ বলল, আমি খুব দুর্বল এবং ক্ষুধার্ত। এ সাপের সাথে আমি পারব না। তুমি বরং এই পাহাড়ের ডানে যাও।
বৃদ্ধের কথা মতো পাহাড়ে উঠেই দেখি দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। আর পেছনেই এগিয়ে আসছে সেই মোটা কুৎসিত সাপ। আমি বৃদ্ধের কথা মতো ডানে ছুটলাম। দেখলাম সুন্দর এক বাগান। বাচ্চারা খেলছে। গেটে দারোয়ান।
বাগানে ঢুকতে চাইলে দারোয়ান বাধা দিল। বাচ্চাদের ডেকে বললো, দেখতো এলোকটি কে? ওকে তো সাপটা খেয়ে ফেলবে, নয়তো আগুনে ফেলে দেবে। দারোয়ানের কথায় বাচ্চারা ছুটে এলো। এর মধ্যে তিন মাস আগে মৃত্যুবরণ করা আমার মেয়েটাকেউ দেখলাম। মেয়েটা আমাকে ডান হাতে জড়িয়ে বাম হাতে সাপটাকে থাপ্পর দিলো। ভয়ে সাপ পালিয়ে গেলো।
ঘটনা দেখে চোখ কপালে উঠল। বললাম, মা তুমি কত ছোট আর এত বড় সাপ তোমাকে ভয় পায়? তুমি এতো সাহস কোথায় পেলে।
মেয়ে বললো, আমি তো জান্নাতি মেয়ে। জাহান্নামের সাপ আমাদের ভয় পায়। বাবা ওই সাপকে তুমি চিনতে পেরেছো?
বললাম, না মা সাপকে তো চিনতে পারিনি।
বাবা ওতো তোমার নফস। তুমি নফসকে এতো বেশি খাবার দিয়েছো যে সে এমন বড় আর শক্তিশালী হয়েছে। সে তোমাকে জাহান্নাম পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়েছে।
বললাম, পথে এক দুর্বল বৃদ্ধ তোমার এখানে আসার পথ বলে দিয়েছে। সে কে?
মেয়ে বললো, তাকেও চেনোনি? সে তোমার রুহ। তাকে তো কোনোদিন খেতে দাওনি। তাই না খেয়ে দুর্বল হয়ে কোনো মতে বেঁচে আছে। এরপর আমার ঘুম ভেঙে গেলো।
দীর্ঘ স্বপ্নের কথা বলে বক্তা একটু দম নিলেন। এরপর বললেন, সেইদিন থেকে আমি আমার রূহকে খাদ্য দিয়ে যাচ্ছি আর নফসের খাদ্য একদম বন্ধ করে দিয়েছি। এখনো চোখ বুঝলেই নফসের সেই ভয়াল রূপ দেখতে পাই। আর দেখি রূহকে। আহা কতো দুর্বল হাঁটতে পারে না। তারপর ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন বক্তা।
বিখ্যাত এ বক্তার নাম হজরত মালেক বিন দিনার রহ.। হিজরি দ্বিতীয় বর্ষের বিখ্যাত সুফি ও ইসলাম বিশ্লেষক। এক সময় মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে থাকতেন রাস্তায়। একটা স্বপ্ন তার জীবনকে পাল্টে দিল। তিনি হয়ে গেলেন ইসলামের মহা মনীষী। পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল তার খ্যাতি।

টম অ্যান্ড জেরি- মিস ইউ হ্যানা


টম অ্যান্ড জেরি। ১৯৪১ থেকে ২০১৫ সাল। ৭৪টি বছর ধরে এখনও সুস্থ বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে এনিমেটেড এ সিরিয়ালটি। শিশু থেকে বৃদ্ধ। বলা যায় সবাইকে সমান তালে মাতিয়ে রাখা এ কার্টুনটি এক চলমান ইতিহাস।
উইলিয়াম হ্যানা। যার হাত ধরে এই জনপ্রিয় কার্টুনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৪১ সালে। উইলিয়াম হ্যানার সঙ্গে আরও একজন ছিলেন জোসেফ বারবারা। কমেডিয়ান লেখক উইলিয়াম হ্যানার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে ১৯১০ সালের আজকের দিনে। ৭ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। কে জানতো এই কলেজ ড্রপআউট হ্যানার সৃষ্টিকর্ম টম অ্যান্ড জেরি এভাবে দুনিয়া মাতাবে। যার প্রতিটি শিল্পকর্মেই ছিল ‘ফ্রেন্ডশিপের’ মিশেল।
১৯৩০ সালে হারম্যান অ্যান্ড আইসিং অ্যানিমেশন স্টুডিওতে কাজ পান হ্যানা। এ স্টুডিও থেকেই হ্যানার কার্টুন বিষয়ে আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হ্যানা ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও নির্মাতা। কর্মজীবনের প্রথমদিকে ‘হাকলবেরি হাউন্ড শো, দ্য জেটসন এবং স্কোবি ডু নামের কার্টুন সিরিজ নির্মাণ করে আলোচিত হন। হন সমাদৃত। ‘ক্যারলোটস ওয়েব’ নামে একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেন তিনি। ১৯৩২ সালে আমেরিকার বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাণ স্টুডিও ওয়ারনার ব্রাদার্সে কার্টুন বিভাগে কার্টুনিস্ট হিসেবে যোগদান করেন। স্বাধীনভাবে কার্টুন প্রযোজনা শুরু করেন। হ্যানার পরিচালনায় ‘হ্যাপি হারমোনিজ’ সিরিজের একটি খ-চিত্র ‘টু স্প্রি’ প্রচার হয় ১৯৩৬ সালে। এরপর তিনি এমজিএম কোম্পানির জন্য নির্মাণ করেন আরও একটি বিখ্যাত কার্টুন সিরিজ ‘ক্যাপটেন অ্যান্ড দ্য কিডস’।
হ্যানা-বারবারা ৭টি একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, ৮টি অ্যামি অ্যাওয়ার্ড, গোল্ডেন গ্লোব টেলিভিশন পুরস্কারসহ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। ২২শে মার্চ ২০০১। উইলিয়াম হ্যানা ৯০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
টম অ্যান্ড জেরিকে পছন্দ করেন না এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। হ্যানার মৃত্যুর পরে কার্টুন নেটওয়ার্ক চ্যানেল তার স্মরণে ২০ সেকেন্ডের এক সেগমেন্টে হ্যানার প্রট্রেটে যেমন লিখেছিল, ‘উই উইল মিস ইউ’। তেমনি সারা দুনিয়া টম অ্যান্ড জেরি দেখার পাশাপাশি সব সময় হয়তো হ্যানার স্মরণে বলবে- উই উইল মিস ইউ ফরএভার...।

এশিয়ার সর্ব উচুঁ রাস্তা এবার কক্সবাজারের বুকে


বাংলাদেশে আজ মঙ্গলবার সবচেয়ে উঁচু একটি সড়কের উদ্বোধন। বান্দরবানের থানচি থেকে আলিকদম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত এই সড়কটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার ফুট উঁচুতে।
দুর্গম এলাকা হওয়ায় আগে নৌপথে কক্সবাজার যেতে সময় লাগতো ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা। ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি দক্ষিণ এশিয়ার উঁচু সড়কগুলির মধ্যে অন্যতম। সড়কটিতে সব ধরণের যান চলাচল করতে পারবে। পার্বত্য এলাকা ও কক্সবাজারের পর্যটনে শিল্পে মাইলফলক হবে এই সড়ক এমনটা বলা হচ্ছে।
আগে পার্বত্য জেলাগুলিতে যাওয়ার জন্য মানুষ নৌপথ ব্যবহার করতেন কিংবা পায়ে হেটে যেত। এখন অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই সড়ক। কৃষিপণ্য বাজারজাত করা ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন নি:সন্দেহে বড় ভূমিকা পালন করবে এই সড়ক। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান হয়ে কোন পর্যটক যদি কক্সবাজার যেতে চান তাহলে তিনি এই রাস্তা ব্যবহার করতে পারবেন। উপভোগ করতে পারবেন পার্বত্য এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
থানচি এবং আলিকদম উপজেলার প্রায় ৯০ হাজার মানুষের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে ১৯০ কি.মি. পথ পাড়ি দিতে হত, এখন মাত্র ৩৩ কি মি. পথ এ দুইটি উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে।

এশিয়ার বৃহত্তম ইফতার,তাও আবার ভারতে,তাও কাশ্মিরে!( ভিডিও)-অতিথি


এবারের রমজানের শুরুর দিকে (অবশ্য ইংরেজি পঞ্জিকা অনুসারে গত মাসে) মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় বৃহত্তম ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম তোলে। তারা সাত হাজার লোককে একসাথে ইফতার করিয়েছিল। আর এবারের রমজানের শেষ দিকে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের শ্রীনগরে মনোরম ডাল লেকের তীরে এশিয়ার বৃহত্তম ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।
এতে সাড়ে তিন হাজারের বেশি লোক অংশ নেয়। তবে চেয়ার-টেবিলে নয়, বরং ‘দস্তরখানা’য় বসে তারা ইফতার করেন। ইফতার হিসেবে দেয়া হয় বিরিয়ানি, জুস, খেজুর ও ফল। সবকিছুই বিনা মূল্যে দেয়া হয়।
ইফতারে অংশ নেয়া এক ছাত্রী নাদিরা বলেন, ‘আমি মনে করি, এ ধরনের রেকর্ড সৃষ্টি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা একটা দারুণ আইডিয়া। কাশ্মিরি হিসেবে এই রেকর্ডের খুব বেশি গুরুত্ব রয়েছে। ইফতার পার্টিতে এতিমদের খাবার দেয়া আরো ভালো কাজ। ‘লাউড বিটল’ নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। তবে তারা এতে কাশ্মিরের বিভিন্ নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী গ্রুপের কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করেছে।
এর আগে এশিয়ায় সবচেয়ে বৃহত্তম ইফতার মাহফিল আয়োজনের রেকর্ডটি ছিল শারজার দখলে। সেখানে ১.৩ কিলোমিটার লম্বা এলাকায় পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। আর শ্রীনগরের পার্টির আয়তন হয় ১.৩ কিলোমিটার।
অন্যতম আয়োজক আহমদ খঅন বলেন, এশিয়ার বৃহত্তম ইফতার মাহফিল ছাড়াও এর মাধ্যমে ধর্ম হিসেবে ইসলামের মানবিকতা ও ঐক্যের বিষয়টিও এখানে স্থান পেয়েছে।
অনেক শতাব্দী ধরে কাশ্মিরে রমজান মাসে গরিবদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। দলে দলে লোক সেখানে ইফতার গ্রহণ করে। ইফতারের মাধ্যমেই তাদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে ওঠে।

Monday, July 13, 2015

নবীজির মৃত্যুর সময় জিবরাইল এসে কি বলেছিলেন?


নবীজির মৃত্যুর সময় জিবরাইল আসলেন, এসে নবীজিকে সালাম দিলেন, আর বল্লেন হে আল্লাহ‘র রাসুল। আল্লাহ আপনাকে সালাম দিয়েছে, আর জানতে চেয়েছে আপনি কেমন আছেন, আল্লাহ সব জানেন তার পড়ও আপনার মুখ থেকে জানতে চেয়েছেন আপনি কেমন আছেন, নবীজি বল্লেন আমি বড়ই কষ্টের ভিতর আছি, অসুস্থ আছি, জিবরাইল বললো, ইয়া রাসুলল্লাহ একজন নতুন ফেরেস্তা এসেছে আজ আমার সাথে, যে ফেরেস্তা কোন মানুষের কাছে আসার জন্য কোন দিন অনুমতি চায় নাই, আর কোনদিন অনুমতি চাইবে ও না, শুধু আপনার অনুমতি চায় আপনার কাছে আসার জন্য, আর সে ফেরেস্তার নাম মালাকুল মউত, মালাকুল মউত রাসুলের অনুমতি নিয়ে রাসুলের জাসান মোবারকের কাছে এসে সালাম দিলেন, বললেন ইয়া রাসুলল্লাহ আদম (আঃ) থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত আমি যত মানুষের জান কবচ করেছি, আর কেয়ামত পর্যন্ত যত মানুষের জান কবচ করবো কারো কাছে অনুমতি চাইনি আর চাওয়া ও আমার লাগবে না, কিন্তু আজকে আসার সময় আল্লাহ বলেছেন আমি যেন আপনার অনুমতি চাই, নবীজি বললেন মালাকুল মউত আমি যদি অনুমতি না দেই? মালাকুল মউত বলে ইয়া রাসুলল্লাহ আল্লাহ বলেছেন যদি অনুমতি না পাও ফিরে এসো।

আফ্র্রিকান-পাক-ভারত গণমাধ্যমে টাইগারদের প্রশংসা


পাকিস্তানের শক্তিশালী দৈনিক পত্রিকা দ্য ডন বাংলাদেশের বোলারদের প্রশংসা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘বোলিং শাইন এজ বাংলাদেশ থাম্প সাউথ আফ্রিকা টু লেভেল সিরিজ’ শিরোনামে সোমবার সংবাদ প্রকাশ করে পত্রিকাটি। বাংলাদেশের বোলারদের দাপুটে বোলিংরে জন্যই বাংলাদেশ একদিনের আর্ন্তজাতিক ম্যাচের সমতা আনতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়া ডন’র প্রতিবেদনে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েরও প্রশংসা করা হয়েছে। ব্যাটিংয়ে সৌম্য সরকার ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের জন্যই বাংলাদেশ সিরিজে সমতা এনেছে বলেও প্রশংসা করা হয়েছে।
শুধু পাকিস্তান নয় এর আগে ভারতের আনন্দবাজার প্রত্রিকাও বাংলাদেশের বোলার প্রশংসা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘ স্বমহিমায় ফিরছেন মুস্তাফিজ’ শিরোনামে আনন্দবাজার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রোববার।
‘মিরপুরে প্রোটিয়াদের বাঘের মুগুরপেটা’- বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারার পর দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়া পত্রিকা স্পোর্টস২৪ডট.কম এই শিরোনাম করেছে। সিরিজে সমতা আনা এই ম্যাচটির কথা লিখতে যেয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভূয়সী প্রশংসা করেছে পত্রিকাটি। তারা লিখেছে, ‘বাংলাদেশ তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ঐতিহাসিক সময় পার করছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজ জেতার পর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারায় দলটি। এরপর পাকিস্তান, ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ওয়ানডে সিরিজে চোখ রাঙাচ্ছে।’
পশ্চিমবঙ্গের সর্বাধিক জনপ্রিয় আনন্দবাজার পত্রিকা। গতকালের দ. আফ্রিকা জয়ের ম্যাচের খবরটিতে শিরোনাম করেছে সৌম্যকে নিয়ে অথচ ছবিটি ব্যবহার করেছে মুস্তাফিজুর রহমানের। শিরোনাম করেছে- ‘ আফ্রিকার সিংহ শিকার করে ম্যাচের ‘সরকার’ সৌম্য’। আর সঙ্গে ব্যবহার করেছে ডি কককে ফিরিয়ে দেওয়া উচ্ছ্বসিত মুস্তাফিজুর রহমানের ছবিটি। সংবাদের শুরুটাও করেছে মুস্তাফিজ এর গুণকীর্তন বর্ণনায়। মুস্তাফিজকে নিয়ে যে ভাবে যে বিশেষণের মধ্যদিয়ে রিপোর্টটি লেখা হয়েছে তাতেই স্পষ্ট তাকে চেনার পরিমাপটি।
রিপোর্টের শুরুটাই এমন- হাতিবাগান মার্কেটের অলিগলিতে যদি দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়, চিনে বেরোতে পারবেন কি না সন্দেহ।
লাজুক, শান্ত, মিষ্টভাষী, বিনয়ী- ভাল ছেলের ব্যাখ্যায় যে যে উপমা ব্যবহার সম্ভব, স্বচ্ছন্দে সেগুলো এদের নামের পাশে বসিয়ে দেওয়া যেতে পারে। মুস্তাফিজুর রহমানকে দেখলে বিশ্বাস হবে না, তার হাত থেকে ও রকম মারণ-কাটার বেরনো সম্ভব। শান্তশিষ্ট কলেজপড়ুয়া হিসেবে বিশ্বাসযোগ্য, কিন্তু ক্রিকেট-বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেওয়া বোলার হিসেবে নয়। পেস বোলারের গলায় যে আগুনে ভাষাটা থাকতে দেখা যায়, সেটা শতচেষ্টাতেও খুঁজে পাওয়া কঠিন। সৌম্য সরকার দ্বিতীয় জন। কথাবার্তা এতটা মার্জিত, ব্যবহারে এতটা ভদ্র যে মনে হবে, এ ছেলে তো সাহিত্যের প্রফেসর হতে পারত! এ ক্রিকেটে কেন? মুগ্ধ হওয়ার মতোই বর্ণনা।
আর এই বর্ণনা শেষে বলা হয়, ‘মুস্তাফিজুর-সৌম্যরও তাই আফ্রিকার সিংহদের বিস্ফোরিত করে ছেড়ে দেওয়ায় অবিশ্বাস্য কিছু নেই। কিন্তু শুধু বিস্ফারিত করে আফ্রিকার সিংহদের এরা ছেড়ে দিলেন বললে, খুব অন্যায় হবে। রবিবাসরীয় মিরপুর আরও একটা দেশের ইতিহাস শুধু দেখল না, দেখল দেশের ক্রিকেট-ভবিষ্যতও ঠিক দিকে এগোচ্ছে। মাশরাফি মুর্তাজার পরে কে, তামিম ইকবালদের পরে কে, এ দিনের পর থেকে প্রশ্নগুলোর ভিড় আর থাকা উচিত নয়।’ রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে- ‘পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের তিন মহাশক্তিকে পর্যদুস্ত করে ছেড়ে দিলেন মাশরাফি মুর্তাজারা। নির্যাসে ধরলে ওই দু’জন- মুস্তাফিজুর এবং সৌম্য। প্রথম জন স্বমূর্তি ধরে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের নাচিয়ে তিনটে উইকেট। দ্বিতীয় জন, ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ৮৮। পদ্মাপারের ক্রিকেটকে তারা মনে রাখার মতো দিনই উপহার দিলেন না, চলতি ওয়ান ডে সিরিজের সিংহদরজাও হাট করে দিলেন। সিরিজ এখন সেই স্টেশনে দাঁড়িয়ে যেখান থেকে দু’টো ট্রেন ছাড়তে পারে। একটা, ও পারের গৌরবের। অন্যটা, আফ্রিকার সম্মানের। সিরিজ এখন তো ১-১।’
রিপোর্টে তার পরের বর্ণনায় যা এসেছে তাও মুগ্ধ হওয়ার- লিখেছে, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে ব্যাট করে এ দিন তুলেছিল ১৬২। যাকে মোটেও অঘটন বলা যাবে না। কারণ এর পিছনে একটাই, বাংলাদেশের দুর্ধর্ষ বোলিং। মুস্তাফিজুর যে বলটায় কুইন্টন ডি’কক আউট হলেন, সেটা কাটার ছিল না। কিন্তু স্বপ্নের ডেলিভারি ছিল। যা ডি’কককে অসহায় করে দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে গেল। দক্ষিণ আফ্রিকা বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে যখন, দ্বিতীয় ধাক্কাটা দেন মুস্তাফিজুর। জে পি ডুমিনিকে তুলে নিয়ে। হাসিম আমলাও ব্যর্থ।
এবি ডি ভিলিয়ার্সের জায়গায় তাকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাকে তো বল্গাহীন দৌড়ের সুযোগই দিচ্ছে না বাংলাদেশ। এ দিন ২২ রানের বোল্ড। ঘাতকের নাম রুবেল হোসেন। একশো রানেরও কমে এ দিন পাঁচ উইকেট চলে গেল, দেড়শোর আগে সাতটা, বাংলাদেশকে বাঁচাত কে?
মুস্তাফিজুর তিনটে, নাসির হোসেন তিনটে, রুবেল দু’টো, মাশরাফি একটা- এরা মাত্র ১৬২ রানে গুঁড়িয়ে দিলেন।’ তার পরের বর্ণনা এ রকম- তখনও অর্ধেক কাজ সমাপ্ত মাত্র, পুরোটা নয়। উদ্যত দাঁতনখ নিয়ে পূর্ণ উদ্যোমে বাংলা ব্যাটিংয়ের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আফ্রিকার বোলিং। তার সামনে দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন সৌম্য সরকার। সৌম্যকে তো আউট করাই গেল না। মাহমুদউল্লাহ আউট হলেন ঠিকই, কিন্তু তখন বাংলাদেশের জয় স্রেফ সময়ের অপেক্ষায়।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, নভেম্বর ২০১৪ থেকে আজ পর্যন্ত যে ওয়ান ডে ক্রিকেটে জয়ীর তালিকায় এর পর বাংলাদেশ দুইয়ে। একে নিউজিল্যান্ড। তারা জিতেছে উনিশটা। বাংলাদেশ চৌদ্দো। মহাশক্তি হয়েও যাদের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত বা পাকিস্তান নেই। এমন মহাসাফল্য যদি এখন থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিচিতি হয়, তা হলে একটা কথা লিখে ফেলা উচিত।
পদ্মাপারের সামনে ক্রিকেট-গৌরবের অনন্ত আকাশ অপেক্ষা করে আছে। এমন বর্ণনায় আনন্দবাজারের জন্য রেখে দিলাম আমার এক আকাশ মুগ্ধতা। কারণ, গৌরবের সেই অনন্ত আকাশেই ভেসে যেতে চায় বাংলাদেশ।

চলো ছাইয়া,ছাইয়া,ছাইয়া-ছলো চাইয়া ছাইয়া: মোবাইল ফোনে বাজবেনা ভারতীয় গান, নির্দেশ কোর্টের


গানের পাসপোর্টও লাগে না, দরকার পরে না ভিজারও। সুমেরু থেকে কুমেরু, সুরের অবাধ বিচরণ পৃথিবীর সব প্রান্তেই। সুরকে আটকায় এমন দুঃসাহস কার? সৃষ্টি কোনও আকশ মানবে না, মানবে না কোনও কাঁটাতার, এমনটাই এতদিন জানত সকলে। কিন্তু এই পৃথিবীতে অসম্ভব বলে বোধহয় কিছু নেই। গানের সুর, গানের কথা, গান সৃষ্টি এবং সর্বোপরি গানের গণ্ডীকে ভূগোলের সীমানায় আটকে দিল বাংলাদেশ। মোবাইল ফোনে নিষিদ্ধ হল ভারতের গান। বাংলাদেশের ১০ কোটি ২১ লক্ষ মানুষের মোবাইল ফোনে ভারতসহ উপ মহাদেশের কোনও দেশের গান, রিংটোন বা ওয়েলকাম টোন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, রায় দিয়েছে বাংলাদেশের একটি কোর্ট। নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, ভারতে তৈরি হিন্দি বা বাংলা সিনেমার গান কেউ ব্যবহার করলে তা ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (VAS) হিসেবে গণ্য হবে।
এই রায় দিয়েছে বিচারপতি ফারাহ মাহাবুব এবং কাজী মোহম্মদ ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ । মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরিফুল রহমান এবং সম্পাদক এসকে শহিদ আলি এবছর জুন মাসে একটি পিটিশন ফাইল করেছিলেন। তার ভিত্তিতেই এই রায় ঘোষণা করে বাংলাদেশের কোর্ট। বাংলাদেশে ভারতীয় সিনেমা আমদানি নীতি অনুযায়ী, ভারতীয় সিনেমার গান বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারীরা তাদের রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না। বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকার খবর অনুযায়ী ,বাংলাদেশের ১২১ মিলিয়ন মোবাইল ব্যবহারকারীর ওপর লাগু হবে এই আইন।
সর্ম্পকিত আরো ব্লগ:
ভারতে বাংলাদেশি চ্যানেল দেখা যাবে

Sunday, July 12, 2015

শবেকদর অন্বেষণ করুন(ভিডিও)


রমজান মাসের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় একটি রাত হলো লায়লাতুল কদর বা শবেকদর। কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী এ রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদের সূরা কদর নামে স্বতন্ত্র একটি সুরাই অবতীর্ণ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও জিবরিল (আ.) মহান রবের আদেশে প্রত্যেক মঙ্গলময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। রাত্রিময় নামে শান্তির ধারা, অব্যাহত থাকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইমানের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং সওয়াব লাভের আশায় অনুপ্রাণিত হয়ে এ রাতে ইবাদত করে, তার অতীত জীবনের সব গোনাহ (সগিরা) মাফ করে দেওয়া হয়। অন্য এক হাদিসে আছে, তোমাদের মাঝে এ মাস সমাগত। এতে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এ রাতের বরকত থেকে বঞ্চিত হবে সে সর্বপ্রকার কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত হবে। বস্তুত হতভাগ্য ও দুর্ভাগা লোকেরাই এ রাতের মঙ্গল থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। খোদাপ্রেমিক বান্দাগণ সারা বছর ধরে এ রাতের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতে থাকেন। তাদের দুয়ারে এ রাত এলে সাদরে তাকে বরণ করে নেন।
রমজান মাসের শেষ দশকের যে কোনো একটি বেজোড় রাত্রি শবেকদর। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ দশকে বিশেষত বিজোড় রাতগুলোয় শবেকদর অন্বেষণ করতে সাহাবিদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। অবশ্য বিজোড় রাত্রিগুলোর মাঝেও আবার ২৭তম রাত শবেকদর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। হযরত উবাই বিন কা’ব (রা.) কসম করে বলতেন, শবেকদর হলো রমজানের ২৭তম রাত্রি। ওই রাতে ইবাদত করতে রাসুল (সা.) আমাদের আদেশ করেছেন। যেহেতু অন্যান্য রাতের ব্যাপারেও হাদিসে বলা হয়েছে তাই শেষ দশকের সব বিজোড় রাতেই শবেকদরের বরকত লাভের আশায় ইবাদতে নিমগ্ন থাকা কাম্য। কোনো গোনাহ, বিদআত কাজকর্ম বা ভুল আমল যেন এ রাতকে নষ্ট করে না দেয় সেদিকেও যথাযথভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
শবেকদরে সব ধরনের আমল করা যাবে। বিশেষত নামাজ, কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত, তাসবিহ পাঠ, দুরুদ শরিফ ও ইস্তেগফার পাঠ ইত্যাদি। এ সময়ে অতীতের সব গোনাহ থেকে তাওবা করে আল্লাহতায়ালার দরবারে কান্নাকাটি করা উচিত।
হযরত আয়েশা (রা.) একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, শবেকদর পেলে আমি তাতে কী দোয়া পড়ব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, তখন তুমি এই দোয়া বেশি বেশি পড়বে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন কারিম তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’
শবেকদরে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি দায়িত্বশীল ফেরেশতাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক সবকিছুর পরিমাণ লেখা থাকে। এমনকি কে হজ করবে সেটাও। আল্লাহতায়ালা আমাদের এ রাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে আমল করার তওফিক দিন।

চাঁদের হিসাবে শবেকদর


‘লাইলাতুল কদর’ আরবি শব্দ যা ফারসি ভাষায় শবেকদর বলে পরিচিত। লাইলাতুল অর্থ রাত ও কদর অর্থ মহিমান্বিত বা সর্বোত্তম। ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দের অর্থ মহিমান্বিত রাত বা শ্রেষ্ঠ রাত। রমজান মাসের এই রাতে কোরআন নাজিল হয়েছিল। এই রাত বছরের অন্যান্য রাতের চেয়ে বহু গুণে শ্রেষ্ঠ। মহান আল্লাহ কোরআনে বলেন, ‘আমি একে নাজিল করেছি শবেকদরে, শবেকদর সম্পর্কে আপনি কি জানেন? শবেকদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ সূরা আল-কদর : ১-৫।
সুতরাং এ রাত বছরের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত। পবিত্র কোরআনের বর্ণনায় কদরের রাত হাজার মাস সমান ৮৩.৩৩ বছর বা তার চেয়েও উত্তম। এ সময়টা মানুষের গড় আয়ুর চেয়ে বেশি। শুধু এক রাতের ইবাদত সারা জীবন ইবাদত করার চেয়ে বেশি। এটা এমন রাত যখন সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত মহান আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হতে থাতে।
শবেকদর উম্মতে মুহাম্মদী (সা.)-এর জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মহান দান। একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের কাছে বনি ইসরাইলের চার নবীর ঘটনা বর্ণনা করলেন যে, তারা প্রত্যেকেই ৮০ বছর পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত করেন। এ বর্ণনা শুনে নিজেদের স্বল্প হায়াতের কথা ভেবে সাহাবিরা কিছুটা আফসোস করেন। আর তখনই জিবরাইল (আ.) সূরা কদর নিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে হাজির হন।
এ পবিত্র রাতের মহিমা সম্পর্কে মহানবী (সা.) এরশাদ করেছেন, যারা শবেকদরে রাত জেগে ইবাদত করবে আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং রোজ কেয়ামতে তাদের নিরাশ করবেন না। এছাড়াও তিনি এরশাদ করেছেন, লাইলাতুল কদরে ইবাদতকারীর প্রতি আল্লাহতায়ালা দোজখের আগুন হারাম করে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, পুরো রাতকে আল্লাহতায়ালা কদর দিয়েই সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন। তোমরা এ রাতেই অধিক ইবাদত-বন্দেগি কর কেন না তা সর্বশ্রেষ্ঠ রাত। আরও এরশাদ হয়েছে, এই পবিত্র রাতটি যারা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেবে আল্লাহপাক তাদের আমলনামায় এক হাজার বছরের ইবাদতের সওয়াব দান করবেন।
বেহেশতের অভ্যন্তরে তার জন্য বহু গৃহ নির্মাণ করে রাখবেন। পবিত্র কোরআন এবং বহু হাদিসে প্রমাণিত হয়েছে, লাইলাতুল কদরের মহিমান্বিত রাতে আল্লাহর ফেরেশতারা এবং রুহগুলো তারই হুকুমে বান্দাকুলের জন্য সব ধরনের রহমত, বরকত, কল্যাণ ও মঙ্গল বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন, ইবাদত-বন্দেগিরত নেককার বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত ও শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করেন। কিন্তু শবেকদরের রাত সম্পর্কে সুনিশ্চিত দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। কোরআনের সুস্পষ্ট বর্ণনা অনুযায়ী কোরআন নাজিল হয়েছে রমজান মাসের কদরের রাতে। অতএব, কোরআন অনুযায়ী কদরের রাত রমজান মাসের যে কোনো এক রাত। তাফসিরে মাজহারিতে নির্ভুল তথ্য এই যে, শবেকদর রমজান মাসের শেষাংশে আসে কিন্তু এর কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নেই, বরং যে কোনো বেজোড় রাতে হতে পারে? প্রত্যেক রমজানে তা পরিবর্তিত হয়।
‘রমজানের শেষ দশকের মধ্যে একটি বেজোড় রাত, ২১তম, ২৩তম ও ২৫তম রাতের অথবা ২৭তম ও ২৯তম রাতের মধ্যে একটি।’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের শেষ দিনের ‘বিজোড়’ রাতগুলোতে ‘লাইলাতুল কদর’ তালাশ কর।
মুহাম্মদ (সা.) রমজানের শেষাংশে ইতেকাফে বসতেন এবং তিনি রমজানের শেষ ১০ দিনে লাইলাতুল কদর খোঁজ করতেন। কদরের রাত প্রসঙ্গে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওলীয়ে কামেল শামসুল ওলামা আল্লামা হজরত শাহ সুফি সৈয়্যেদ আহমদ আলী ওরফে হজরত শাহ্ সুফি সৈয়্যেদ জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরী (রা.) স্বরচিত নূরেহক গঞ্জেনূর কিতাবে লিখেছেন-
‘রমজানে একুশ রাতে/তেইশা, পঁচিশা আর সাতাইশাতে পড়ে ঊনত্রিশ তারিখেতে কদর আছয়/সাতাইশ তারিখ পরে এজমা সবে কয়।’
রমজানের ২৭ তারিখে লাইলাতুল কদর হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। তবে বহুসংখ্যক প্রমাণ রয়েছে যে, ২৭ তারিখে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক। এটি শুধু সম্ভাবনা হিসেবে গ্রহণ করা যায়, সুনিশ্চিত হিসেবে নয়।
হজরত বড়পীর মহিউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী (রহ.) ‘গুণিয়াতুত ত্বালেবিন’ গ্রন্থে কদরের রাত নির্দিষ্ট না করার কারণ সম্পর্কে লিখেছেন, স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে যে, শুক্রবারের মতো কদরের রাতও আল্লাহ নির্দিষ্ট করে দিলেন না কেন? এর উত্তর হল, কেউ যেন নির্দিষ্ট দিনটিতে ইবাদত-বন্দেগি করে মনে না করে যে, আজকের রাতটি আমার হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সুতরাং আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমি আজকের ইবাদতের জন্য অবশ্যই জান্নাতবাসী হব। এরকম হলে তার পরবর্তী ইবাদতে ঘাটতি দেখা দেবে। তাই আল্লাহ এ রাতকে অনির্দিষ্ট করে রেখেছেন। ঠিক যেমন মানুষ কবে মারা যাবে তা আল্লাহ কাউকে জানতে দেন না। কারণ এরকম হলে লোকে ভাবত মৃত্যু তো এখনও দেরি আছে। এখন যা ইচ্ছা করি।
শেখ সাদী (র.) বলেছেন, ‘সকল রাত যদি শবেকদর হতো তাহলে থাকত না শবেকদরের মর্যাদা।’
সুতরাং সেই অনির্দিষ্ট রাতটি আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। সঠিক শবেকদর পেতে হলে যথাযথভাবে চান্দ্রমাসের হিসাব গণনা করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রযুক্তিময় পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। তাই আমরা শবেকদরও পাই না। কদরে বর্ণিত রহমত-নেয়ামত তো দেশভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন চাঁদ দেখার তারিখে অবতীর্ণ হয় না। তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা শবেকদরের মূল্যবান ফজিলত থেকে হয়তো বঞ্চিত থেকে যান। বিষয়টি সব মুসলমানকে ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি। কেননা, চাঁদের হিসাবে গড়মিল হলে আমাদের যাবতীয় হিসাবেই গড়মিল হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের শবেকদরের সঠিক হিসাব খোঁজ করার তৌফিক দিন।

Saturday, July 11, 2015

বিন্দু পরিমাণ হারাম খাদ্যও সন্তানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে


মহান আল্লাহর অশেষ প্রশংসা এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত ও ন্যায়পরায়ণ সাহাবিদের শানে অশেষ দরুদ আর সালাম পেশের মাধ্যমে শুরু করছি আজকের আলোচনা।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, সব কিছুরই একটি ভিত্তি রয়েছে, আর ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে আমাদের প্রতি তথা আমার পবিত্র বংশধরদের (আহলে বাইতের) প্রতি ভালবাসা।
তিনি আরও বলেছেন, 'প্রত্যেক বিষয়েরই রয়েছে জাকাত। আর শরীর বা দেহের জাকাত হচ্ছে রোজা।'
ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য রিজিক হালাল হওয়া খুবই জরুরি। হালাল রিজিকের প্রভাব শুধু নিজের দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্যের জন্যই যে জরুরি তা নয়, নিজের সন্তানের ওপরও এর প্রভাব থাকে। রুজি-রোজগারের মধ্যে খুব সামান্য ও এমনকি বিন্দু পরিমাণ হারাম এবং সুদের প্রভাব সন্তানের মধ্যে প্রকাশ পায়। এ সংক্রান্ত অনেক ঘটনা ধর্মীয় সাহিত্যে স্থান পেয়েছে।
একবার প্রাচীন যুগের একজন বিশ্বখ্যাত আলেম তার শিশু পুত্র সন্তানকে মসজিদে নিয়ে আসেন। ওই শিশুকে অজুখানার কাছে বসিয়ে তিনি নামাজ আদায় করতে মসজিদে যান। ফিরে এসে দেখেন যে তার শিশু-পুত্র মুসল্লিদের ওজুর পানি তোলার পাত্রটি পেরেক জাতীয় কোনো কিছু দিয়ে ফুটো করে দিয়েছে। ওই আলেম দুঃখিত ও বিস্মিত হয়ে ভাবতে লাগলেন কেনো এমন হল? ঘরে ফিরে স্ত্রীকে এই ঘটনা জানালে তিনি জানান, আমি বুঝতে পেরেছি যে কেনো এই মন্দ কাজটি আমাদের পুত্র করেছে। এ জন্য আসলে আমিই দায়ী। ও যখন আমার গর্ভে ছিল তখন আমি অনুমতি না নিয়ে এক ব্যক্তির বাগানের একটি ডালিমের মধ্যে সুঁই দিয়ে খোঁচা দিয়েছিলাম এবং সুঁইয়ে লেগে-থাকা ডালিমের রস জিভে লাগিয়েছিলাম!
ইমাম হুসাইন (আ.) একজন নিষ্পাপ ইমাম এবং বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিপূর্ণ মহামানব হওয়া সত্ত্বেও কারবালায় তাঁর যুক্তিপূর্ণ আহ্বান ও বক্তব্যে মুসলমান নামধারী ইয়াজিদ বাহিনীর মন বিন্দুমাত্র গলেনি। ইমামের মতে, এর কারণ ছিল হারাম খাদ্যের প্রভাব।
আমাদের জীবনে যদি এ জাতীয় ঘটনা ঘটে থাকে যে আমরা কেউ অন্যের এক পয়সা মূল্যেরও কিছু ভোগ করেছি বিনা অনুমতিতে এবং এ জন্য পরে মালিকের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করিনি তাহলে অবিলম্বে ক্ষমা বা সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্যোগ নেয়া উচিত। যদি মালিক মারা গিয়ে থাকেন তাহলে তার সন্তানদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যদি তাদের কাউকেই পাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে তাদের নামে সদকা দেয়া উচিত।
আল্লাহর প্রতি ইয়াকিন বা দৃঢ়-বিশ্বাস ও ভরসা করা হচ্ছে খাঁটি মু'মিনের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, তোমরা মন-ভাঙ্গা হয়ো না, হীনবল হয়ো না, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও। মহান আল্লাহ সুরা ইব্রাহিমে বলেছেন, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর। (৭ নম্বর আয়াত)
রমজান মাস হচ্ছে মহান আল্লাহর প্রতি হৃদয়ে ইয়াকিন বা দৃঢ় বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করার মাস। আমাদের প্রচেষ্টা যদি আন্তরিক তথা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ আমাদের সমস্ত বৈধ দোয়া কবুল করবেন- এ ব্যাপারে আমাদের নিশ্চিত হওয়া উচিত।
মহান আল্লাহ আমাদের সব সমস্যার সমাধান দিতে পারেন এই দৃঢ়-বিশ্বাস আমাদের রাখা উচিত। আমাদের সমস্ত সমস্যার মূল কারণই এটা যে, আমরা এসব বিষয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি না। আন্তরিক-চিত্তে খোদায়ী পথ-নির্দেশনা চাইলে ও সাহায্য চাইলে আল্লাহ অবশ্যই তা কবুল করবেন-এই দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের রাখা উচিত। যা ঘটা আপাত দৃষ্টিতে অসাধ্য বলে মনে হয় তাও আল্লাহর সহায়তায় সাধন করা সম্ভব। বলা হয় ৭০ বার সুরা ফাতিহা পাঠের সুবাদে যদি মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে যায় তাহলে বিস্মিত হবে না।
ইরানের তাব্রিজ শহরের বড় বাজারে একজন দিন-মজুর শ্রেণীর খোদাভীরু বৃদ্ধ ব্যক্তি কাজ করতেন। একদিন তিনি দেখছিলেন যে এক বালক বাজারের ছাদের আলো প্রবেশের পথ দিয়ে পড়ে যাচ্ছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন: হে আল্লাহ! এই বালককে রক্ষা করুন। ফলে বালকটি শূন্যের মধ্যেই স্থির হয়ে থাকে। আর এ অবস্থায় তাকে মাটিতে নামান ওই শ্রমিক! ঘটনা দেখে বাজারের জনতার ভিড় জমে যায়। সবাই তাকে প্রশ্ন করছিলেন, আপনি কী এমন আমল করেছেন যে এভাবে বালকটিকে রক্ষা করতে পারলেন? আপনি কি একজন দরবেশ? ওই শ্রমিক বললেন, আমি বিগত ৬০ বছর ধরে আমার জানামতে কোনো পাপ করিনি এবং আল্লাহর নির্দেশ বা ফরজ কাজগুলো মেনে চলার চেষ্টা করেছি, তাই আল্লাহ আমার এই একটি প্রার্থনা কেনো কবুল করবেন না?
অনেক খোদাভীরু ব্যক্তির কথা জানা যায় যারা 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' বলে নদীর পানির ওপর দিয়ে এমনভাবে হেঁটে নদী পার হয়েছেন যেভাবে আমরা পার হই মাটির প্রান্তর বা রাস্তা। তাই যারা আল্লাহর ওলি তারা মুহূর্তেই পার হয়ে যান সমুদ্র এবং মুহুর্তের মধ্যে তারা চলে যেতে পারেন এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে! আর আমরা এসব অলৌকিক ঘটনা শুনে বলি: এসব কী করে সম্ভব!!? অন্যদিকে আল্লাহর প্রিয়পাত্রদের জন্য এসব খুবই সাধারণ ঘটনা

Thursday, July 9, 2015

যে ২টি ভুলেই অধিকাংশ মানুষই জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে


মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রিয় নবী রাসূল (সা.)-এর উম্মতদের জন্য জান্নাতে যাওয়ার রাস্তা সহজ করে দিয়েছেন। আর জাহান্নামের যাওয়ার রাস্তা করেছেন অনেক কঠিন। তাইতো পবিত্র বা নেক কোন কাজের নিয়্যত করলে আমল নামায় সওয়াব যোগ হতে থাকে। অন্যদিকে খারাপ কাজ সংগঠিত হওয়ার পরেই কেবল তা পাপে পরিণত হয়।
চলার পথে অনেক মানুষ এমন কিছু করে থাকে, যার জন্য সে জাহান্নামের আগুনে সারাজীবন জ্বলবে। আসুন জেনে নিই কোন দুটি কাজের জন্য অধিকাংশ মানুষই জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে উল্লেখ আছে, নবী কারীম (সা.) বলেন, সবচেয়ে বেশি যে বস্তু মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে তা দুটি ফাকা জায়গা আর তা হলো ১. লজ্জা স্থান ২. মুখ অর্থ্যাৎ যারা (নর-নারী) তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে না তারাই জাহান্নামী।
অপরদিকে যে দুটি বস্তু অধিকপরিমাণে মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে সেগুলো হলো- ১. আল্লাহভীতি ২. সচ্চরিত্র। (ইবনে কাসীর)
সর্ম্পকিত আরো ব্লগ:
মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণাকে নিজেরই চিন্তা ও সিদ্ধান্ত বলে মহাভুল করে

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের পান্তাবাতের হিসেব নিকেষ


পাকিস্তান, ভারতের পর বাংলাদেশ সফরে এখন দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দুই দলকে টাইগাররা সহজে কাবু করতে পারলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে যে সেটা সহজেই হবে না, তা টি-২০ ম্যাচে বোঝা গেছে। এখন প্রশ্ন চলে আসে তাহলে বাংলাদেশ সিরিজ হারলে র‌্যাঙ্কিংয়ে কোন অবস্থায় থাকবে আর সিরিজ জিতলে কোন অবস্থায় থাকবে। তাছাড়া বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পারবে তো।
বর্তমানে আইসিসির র‌্যাঙ্কিংয়ে যে অবস্থা তাতে ৯৩ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। ৬ষ্ঠ স্থানে থাকা ইংল্যান্ডের রেটিং পয়েন্ট ৯৮। ৮৮ রেটিং পয়েন্ট বেশি নিয়ে অষ্টম স্থানে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ৮৭ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে নবম স্থানে আছে পাকিস্তান।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের সবকটিতে জিতলে বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট হবে ৯৯, সেক্ষেত্রে ইংল্যান্ডকে টকপে বাংলাদেশ চলে যাবে ছয়ে। আর সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে হারলে বাংলাদেশের পয়েন্ট থাকবে অপরিবর্তিত থাকবে। তবে সেক্ষেত্রে র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।
শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার যা অবস্থা তাতে ঐ সিরিজে পাকিস্তান সবকটি ম্যাচ জিতলে তাদের পয়েন্ট দাঁড়াবে ৯৪। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ যদি ২-১ সিরিজ হারে তবে র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়বে পাকিস্তানের চেয়ে। তখন ওয়েস্টইন্ডিস ও পাকিস্তানকে নিয়ে জিম্বাবুয়ে সফরের ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলার স্বপ্ন!
সর্ম্পকিত আরো খবর:
ক্রিকেট দল, নাকি হাঁসের খামার! নয়জনই শূন্য রানে আউট!

একুশে রমজান পৃথিবী হারিয়েছিল বিশ্বনবী (সা.)'র হাতে গড়া শ্রেষ্ঠ মানবকে


৪০ হিজরির একুশে রমজান। সব-হারানোর বেদনায় গোটা বিশ্ব জগত যেন ব্যথিত, প্রকৃতি যেন নির্জীব, অচল, স্পন্দনহীন। ইয়াতিম, বঞ্চিত আর মজলুমের মর্মভেদী কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারাক্রান্ত! যে অবিস্মরণীয় নিষ্পাপ-ফুলেল সত্তা হিজরি-পূর্ব ২৩ সনের ১৩ই রজব পবিত্র কাবা ঘরে জন্ম নিয়ে তাঁর বহুমুখী সৌরভে ও অতুলনীয় সব গুণের ছোঁয়ায় বারে বারে ইসলামকে দিয়েছে নব-জীবন এবং টিকিয়ে রেখেছিল ইসলামের প্রকৃত প্রাণ ও চেতনা সেই পবিত্র ব্যক্তিত্বের শাহাদত শোক-সাহারায় তুলেছে অনন্ত মাতম! প্রায় ১৪০০ বছর ধরে মু'মিনের চোখে রক্ত-অশ্রু-ঝরাচ্ছে এই রাত! কিন্তু সে রাতে বিশ্বনবী (সা.)'র পর হেদায়াতের উজ্জ্বলতম প্রদীপ অসময়ে চিরতরে নির্বাপিত হলেও মানুষের অন্তরে তিনি আজো অমর, অক্ষয় এবং ঈমানের অফুরন্ত শক্তির উৎস !
একুশে রমজান পৃথিবী হারিয়েছিল বিশ্বনবী-(সা.)'র শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি ও শ্রেষ্ঠ অনুসারীকে, হারিয়েছিল বিশ্বনবী-সাঃ'র জ্ঞান-নগরীর মহাতোরণকে, হারিয়েছিল রাসূল (সাঃ)'র পর সবচেয়ে দয়ালু ও উদার আত্মার অধিকারী মানুষ এবং হেদায়াতের উজ্জ্বলতম প্রদীপকে। সেদিন মুসলিম বিশ্ব তার অত্যন্ত দুঃসময়ে হারিয়েছিল সাধনা ও আধ্যাত্মিক পূর্ণতার সর্বোত্তম আদর্শকে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সাঃ)'র নিজ হাতে গড়ে তোলা ইসলামের শ্রেষ্ঠ সেনাপতি ও সবচেয়ে আপোষহীন নেতাকে। কিন্তু অকাল-মৃত্যু সত্ত্বে আমীরুল মু'মিনীন হযরত আলী (আঃ)’র শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের স্বর্গীয় আলোকোজ্জ্বল প্রভা যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের পরতে পরতে আদর্শ মুমিনের কর্মতৎপরতার গভীরে অতুলনীয় ও ক্রমবর্ধমান প্রভাব সৃষ্টি করে চলেছে। সেই আমীরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আঃ)'র শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে সবার প্রতি আমরা জানাচ্ছি অশেষ সমবেদনা।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর মতে,
আলী (আ.) ছিলেন যুবকদের জন্য বীরত্ব ও সাহসিকতার আদর্শ, সরকার-প্রধানদের জন্য ন্যায়বিচারের আদর্শ, ইবাদত, খোদাপ্রেম ও ভারসাম্যপূর্ণ অনাড়ম্বর জীবনের জন্য সব মুমিন মুসলমানের জন্যই আদর্শ। তাঁর মুক্তিকামীতা বিশ্বের সব মুক্তিকামীর আদর্শ এবং প্রজ্ঞাময় বক্তব্য ও চিরস্মরণীয় উপদেশগুলো আলেম, বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের জন্য আদর্শ।
আলী (আ.) ছিলেন সেই ব্যক্তিত্ব নদী-দখলকারী শত্রুরা যার বাহিনীর জন্য নদীর পানি ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে সেই শত্রুদের পরাজিত করার পরও তিনি ওই নদীর পানি কোনো শত্রুর জন্য নিষিদ্ধ করেননি। জালিমদের বিরুদ্ধে আলী (আ.) সবচেয়ে কঠোর হলেও তিনি ব্যক্তিগত ক্রোধের বশে নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাদের ওপর আঘাত হানতেন।
সিফফিনের যুদ্ধের প্রাক্কালে উভয়পক্ষের লোকক্ষয় এড়ানো ও বিদ্রোহীদের সুপথে আনার জন্য তিনি এত বেশী অপেক্ষার নীতি গ্রহণ করেছিলেন যে, সে সময় শত্রুরা এ প্রচারণা চালিয়েছিল যে মহাবীর আলী (আ.) মৃত্যুকে ভয় পান! অথচ শাহাদত ছিল তাঁর কাছে এতটা প্রিয় যতটা প্রিয় শিশুর কাছে মাতৃস্তন। তিনি খিলাফত লাভের পর সব সাহাবির জন্য সরকার-প্রদত্ত ভাতা সমান করে দিয়ে রাসূল (সা.) সুন্নাত পুন:প্রবর্তন করেছিলেন। আলী (আ.) সর্বত্র প্রকৃত ইসলাম ও ন্যায়-বিচার কায়েমের তথা সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বলেই সুবিধাবাদী, মুনাফিক এবং স্বল্প-জ্ঞানী ধর্মান্ধ ও বিভ্রান্ত শ্রেণীগুলো তাঁর শত্রুতে পরিণত হয়। সত্যের পথে অবিচল থাকলে অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও নেতা তাঁকে ত্যাগ করবেন বলে তিনি জানতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি ন্যায়-বিচারের পথ ত্যাগ করেননি। ফলে শাহাদতের উচ্চ মর্যাদা অর্জন করেছিলেন হযরত আলী (আ.)। মোয়াবিয়া যখন বায়তুল মালের সম্পদ অবাধে ব্যবহার করে নিজের পক্ষে সুযোগ সন্ধানী লোকদের টেনে দল ভারী করতো, তখন মোয়াবিয়ার বিদ্রোহের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও হযরত আলী (আঃ) তাঁর গভর্নরদের মাধ্যমে ব্যবহৃত বায়তুল মালের সম্পদের প্রতিটি পয়সার হিসেব নিতেন।
একদল সরলমনা ও ধর্মান্ধ ব্যক্তি দুনিয়াপুজারী ও ক্ষমতালোভীদের প্রতারণার শিকার হয়ে হযরত আলী (আঃ)’র মতো নিষ্পাপ মুমিনকেও কাফের বলে ঘোষণা দেয়! ইতিহাসে এই শ্রেণী খারেজী বলে খ্যাত। এই খারেজীদেরই অন্ধ অনুসারী ইবনে মুলজেম আল আশআসসহ আলী (আঃ)'র চরম বিদ্বেষী কয়েক ব্যক্তির ষড়যন্ত্রে শরীক হয়। ইবনে মুলজেম ১৯ শে রমজানের ফজরের নামাজের সময় সিজদারত অবস্থায় হযরত আলী (আঃ)'র শির মোবারকে বিষাক্ত তরবারির আঘাত হানে। এ আঘাতে আহত আমীরুল মুমিনীন ২১শে রমজানের রাতে শাহাদত বরণ করেন এবং শেষ হয়ে যায় চার বছর ও নয় মাসের খেলাফত । তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩। শাহাদতের কিছুক্ষণ আগে বড় ছেলে হযরত হাসান মুজতাবাকে কাঁদতে দেখে মুমিনদের মাওলা হযরত আলী (আঃ) বলেন, হে আমার সন্তান কেঁদো না, এখন রাসূলে খোদা (সাঃ), তোমার মা হযরত ফাতিমা ও ফেরেশতারা আমাকে অভ্যর্থনা জানাতে এসেছেন এবং তাঁরা আমাকে স্বাগতঃ জানাচ্ছেন।
হযরত আলী (আঃ) ছিলেন সেই ব্যক্তিত্ব যার সম্পর্কে রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন, মুসার সাথে হারুনের যে সম্পর্ক তোমার সাথে আমার সেই সম্পর্ক, শুধু পার্থক্য হল হারুন (আঃ) নবী ছিলেন, তুমি নবী নও। রাসূল (সা.) বলেছেন, " আমি জ্ঞানের নগরী, আলী তার দরজা, যে কেউ আমার জ্ঞানের মহানগরীতে প্রবেশ করতে চায় তাকে এ দরজা দিয়েই আসতে হবে"।
মহানবী (সাঃ) আরো বলেছেন: হে আম্মার! যদি দেখ সমস্ত মানুষ একদিকে চলে গেছে, কিন্তু আলী চলে গেছে অন্য দিকে, তবুও আলীকে অনুসরণ কর, কারণ, সে তোমাকে ধ্বংসের দিকে নেবে না।
বিশ্বনবী (সাঃ) আরো বলেছেন:
* আমি আলী থেকে, আর আলী আমার থেকে, যা কিছু আলীকে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা কিছু আমাকে কষ্ট দেয় তা আল্লাহকে কষ্ট দেয়।
* হে আলী! ঈমানদার কখনও তোমার শত্রু হবে না এবং মোনাফেকরা কখনও তোমাকে ভালবাসবে না। অনেক সাহাবী এ হাদিসের ভিত্তিতেই মোনাফেকদের সনাক্ত করতেন।
রাসূলে পাক (সাঃ)'র স্ত্রী বিবি আয়শা হযরত আলী (আঃ)'র শাহাদতের খবর শুনে বলেছিলেন,
"হে রাসূল! তোমার সবচেয়ে প্রিয়পাত্র শাহাদত বরণ করেছেন। আজ এমন এক ব্যক্তি শহীদ হয়েছেন যিনি ছিলেন রাসূল (সাঃ)'র পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ।
" আর এইসব বাণী থেকে এটা স্পষ্ট যে আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.) ছিলেন বিশ্বনবী (সা.)'র পর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব।
হযরত আলী (আ.)'র আকাশ-ছোঁয়া বীরত্ব ও মহত্ত্বে অমুসলিম পণ্ডিতরাও অভিভূত ও হতবাক হয়েছেন। আর ডি ওসবোর্ন বলেছেন, আলী (আ.) ছিলেন মুসলমানদের ইতিহাসের সর্বোত্তম আত্মার অধিকারী সর্বোত্তম ‍ব্যক্তি।
ওয়াশিংটন আরভিং বলেছেন, "সব ধরনের নীচতা ও কৃত্রিমতা বা মিথ্যার বিরুদ্ধে আলী (আ.)'র ছিল মহত সমালোচনা এবং আত্মস্বার্থ-কেন্দ্রীক সব ধরনের কূটচাল থেকে তিনি নিজেকে দূরে রেখেছিলেন।" ঐতিহাসিক মাসুদির মতে, রাসূল (সা.)'র চরিত্রের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিল যার ছিল তিনি হলেন আলী (আ.)।
শাহাদত-প্রেমিক আলী(আ.) যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, তাঁর সঙ্গীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, সবাই কাঁদছে, চারিদিকে ক্রন্দনের শব্দ, কিন্তু আলী (আ.)-এর মুখ হাস্যোজ্জ্বল। তিনি বলছেন, “আল্লাহর শপথ! আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম কি হতে পারে যে, ইবাদতরত অবস্থায় শহীদ হব?”
ঘাতকের প্রাণঘাতী আঘাতে ধরাশায়ী আমিরুল মু'মিনিন এ ঘটনা নিয়ে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি বা অবিচার না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, “আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানেরা তোমরা এমন যেন না কর, যখন আমি পৃথিবী থেকে বিদায় নেব তখন মানুষের উপর হামলা করবে এ অজুহাতে যে, আমীরুল মু'মিনীনকে শহীদ করা হয়েছে। অমুকের এটার পেছনে হাত ছিল, অমুক এ কাজে উৎসাহিত করেছে। এসব কথা বলে বেড়াবে না, বরং আমার হত্যাকারী হল এই ব্যক্তি।”
আলী (আ.) ইমাম হাসান (আ.)-কে বলেছিলেন,
“বাবা হাসান! আমার মৃত্যুর পর যদি চাও আমার হত্যাকারীকে মুক্তি দেবে তাহলে মুক্তি দিও, যদি চাও কিসাস গ্রহণ করবে তাহলে লক্ষ্য রাখবে, সে তোমার পিতাকে একটি আঘাত করেছে, তাকেও একটি আঘাত করবে। যদি তাতে মৃত্যুবরণ করে তো করল, নতুবা ছেড়ে দেবে।” তারপর আবার বন্দির চিন্তায় মগ্ন হলেন আলী (আ.)। বন্দিকে ঠিক মতো খেতে দিয়েছ তো? পানি দিয়েছ খেতে? ঠিক মতো দেখাশোনা কর ওর। কিছু দুধ তাঁর জন্য আনা হলে কিছুটা খেয়ে বললেন, বাকীটা বন্দিকে দাও।
হযরত আলী (আঃ) নিজেকে সব সময় জনগণের সেবক বলে মনে করতেন এবং সব সময় অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনে খাত্তাব বলেছেন, আলী ইবনে আবি তালিবের মতো আরেকজনকে জন্ম দেয়ার ক্ষমতা নারীকূলের কারো নেই, আলী না থাকলে ওমর ধ্বংস হয়ে যেত। এখন চলছে পবিত্র রমজান মাস। এই মাস হল মানুষের ভোগ-প্রবণতাকে প্রবল ইচ্ছা-শক্তি ও বিবেক দিয়ে সংযত করার মাস। এক্ষেত্রেও আলী (আ.) ছিলেন মহাবীর ও সবার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।
• হযরত ইবনে আব্বাস বলেছেন, আলীর চারটি গুণ ছিল যা অন্য কারো ছিল না। আরব ও অনারবের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি রাসূলের সাথে সালাত আদায় করেছেন। দ্বিতীয়তঃ প্রত্যেক জিহাদেই তাঁর হাতে ঝান্ডা থাকতো। তৃতীয়তঃ লোকেরা যখন রাসূলের কাছ থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেত তখনও আলী তাঁর পাশেই থাকতো। চতুর্থতঃ আলীই রাসূল (সাঃ)কে শেষ গোসল দিয়েছিলেন এবং তাঁকে কবরে শায়িত করেছিলেন।
জীরার ইবনে হামজা তাঁর প্রিয় নেতার গুণাবলী তুলে ধরতে গিয়ে বলেছিলেন, "আলীর ব্যক্তিত্ব ছিল সীমাহীন, তিনি ক্ষমতায় ছিলেন দোর্দণ্ড, তাঁর বক্তব্য ছিল সিদ্ধান্তমূলক, তাঁর বিচার ছিল ন্যায়ভিত্তিক, সব বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ছিল, তাঁর প্রতিটি আচরণে প্রজ্ঞা প্রকাশিত হত। তিনি মোটা বা সাদামাটা খাদ্য পছন্দ করতেন এবং অল্প দামের পোশাক পছন্দ করতেন। আল্লাহর কসম, তিনি আমাদের একজন হিসেবে আমাদের মাঝে ছিলেন, আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন, আমাদের সকল অনুরোধ রক্ষা করতেন। তাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও তাঁকে সম্বোধন করে কিছু বলতে ও প্রথমে কথা বলতে আমরা ভয় পেতাম না। তাঁর হাসিতে মুক্তা ছড়িয়ে পড়তো। তিনি ধার্মিকদের খুব সম্মান করতেন। অভাবগ্রস্তের প্রতি খুবই দয়ালু ছিলেন। এতিম, নিকট আত্মীয় ও অন্নহীনকে খাওয়াতেন। তিনি বস্ত্রহীনে বস্ত্র দিতেন ও অক্ষম ব্যক্তিকে সাহায্য করতেন। তিনি দুনিয়া ও এর চাকচিক্যকে ঘৃণা করতেন । আমি আলী ইবনে আবি তালিবকে গভীর রাতে বহুবার এ অবস্থায় মসজিদে দেখেছি যে তিনি নিজ দাড়ি ধরে দাঁড়িয়ে এমনভাবে আর্তনাদ করতেন যেন সাপে কামড় খাওয়া মানুষ এবং শোকাহত লোকের মতো রোদন করে বলতেন, হে দুনিয়া, ওহে দুনিয়া, আমার কাছ থেকে দূর হও! আমাকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করো না!" .. .. .. এরপর জীরার বলেন, আলী (আঃ)'র অনুপস্থিতিতে আমি সেই মহিলার মতো শোকাহত যার সন্তানকে তার কোলে রেখে কেটে ফেলা হয়েছে।
এবারে হযরত আলী (আঃ)'র প্রবাদতুল্য কয়েকটি বাণী :
*বাহ্যিক অলংকার ও পোশাক-পরিচ্ছদ সৌন্দর্য নয়, সৌন্দর্য হল-জ্ঞান ও সভ্যতা। যার পিতা-মাতা মারা গেছে সে এতীম নয়, প্রকৃত এতীম সে যার মধ্যে জ্ঞান ও বিবেক নেই।
*সত্যকে আঁকড়ে ধর, যদি তাতে তোমার ক্ষতিও হয় এবং মিথ্যাকে বর্জন কর যদি মিথ্যা দিয়ে তোমার লাভও হয়। আর এটাই হল ঈমান।
* আমি তাদের সম্পর্কে বিস্মিত হই যারা কিছু হারিয়ে ফেললে তা ফিরে পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে, অথচ নিজ আত্মাকে হারিয়ে ফেলার ব্যাপারে তাদের মধ্যে সচেতনতা নেই।

Wednesday, July 8, 2015

আল্লাহ তায়ালার ঘরে যাচ্ছেন আল্লাহ তায়ালার অতিথিরা


আজ ২০ রমজান। শুরু হচ্ছে রহমতের জোয়ার। আজ আল্ল­াহর ঘরে যাবেন মোমিন অতিথিরা। পৃথিবীর মায়াজাল ছিন্ন করে ফিরে যাবেন আপন ভুবনে, মসজিদে এতেকাফে। এতেকাফে রচিত হবে আল্ল­াহ ও বান্দার গভীর সেতুবন্ধন। হজরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি বলেন, মসজিদের এতেকাফ হচ্ছে আত্মিক প্রশান্তি, হƒদয়ের পবিত্রতা, চিন্তার বিশুদ্ধতা ও ফেরেশতাকুলের গুণাবলি অর্জন।
শবে কদরের সৌভাগ্য ও কল্যাণ লাভসহ সকল প্রকার এবাদতের অখ- সুযোগ লাভের প্রধান উপায়। আল্ল­াহর রাসুল (সা.) রোজার শেষ ১০ দিন এতেকাফ করেছেন এবং উম্মতের সৎ ও ভাগ্যবান লোকদের জন্য তা সুন্নত ঘোষণা করেছেন। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা- ২য় খ- ৪২ পৃষ্ঠা)
হজরত আয়শা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইন্তেকালের পূর্ব রমজান পর্যন্ত রোজার শেষ ১০ দিন এতেকাফ করেছেন (বুখারি শরিফ)। মানব সভ্যতার ইতিহাসে বিভিন্ন নবীর এতেকাফের প্রমাণ পাওয়া যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর জন্য কাবা শরিফে তোয়াফ নামাজ ও এতেকাফের নির্দেশ ছিল।
কাবার উদ্দেশে আল্ল­াহ বলেন, আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম- তোমরা আমার ঘর পবিত্র রাখ তোয়াফ, এতেকাফ ও নামাজীদের জন্য। (সুরা বাকারা : ১২৫)
হজরত মুসা (আ.) এতেকাফ সাধনায় তুর পাহাড়ে প্রভুর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। (তফসিরে মায়ারেফুল কোরআন) আল্লামা শামী বলেন, উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এতেকাফ সুন্নতে কেফায়া। কোনো এলাকার পক্ষ থেকে দু-একজন আদায় করলে সবার দায়িত্ব সেরে যায়। (দুররুল মুখতার)
এতেকাফের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি একদিনও এতেকাফ করবে, আল্ল­াহ কেয়ামতের দিন তার এবং জাহান্নামের মধ্যে ৩ খন্দক পরিমাণ ব্যবধান করে দেবেন। এক খন্দক ৫০০ বছরের পথ। (বুখারি শরিফ)
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (র.) বলেন, এতেকাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীর মোহনীয় মায়াজাল থেকে মুক্তি লাভ। আল্ল­াহর সঙ্গে প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপন। এতেকাফ যাপনে আত্মার পরম উন্নতি সাধিত হয়। এতেকাফকারীর মনে আল্ল­াহ প্রেমের ঢেউ খেলে। তার চিন্তা-চেতনা ও বোধে আল্ল­াহর নৈকট্য লাভই কামনা থাকে। (যাদুল মায়াদ- ১৮৭)।
এতেকাফের ফজিলত : এতেকাফ একটি মহান ইবাদাত, মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি বছরই এতেকাফ পালন করেছেন। দাওয়াত, তরবিয়ত, শিক্ষা এবং জিহাদে ব্যস্ত থাকা সত্তে¡ও রমজানে তিনি এতেকাফ ছাড়েননি। এতেকাফ ইমানি তরবিয়তের একটি পাঠশালা, এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হেদায়েতি আলোর একটি প্রতীক। এতেকাফরত অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদাতের জন্য দুনিয়ার অন্যান্য সকল বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। ঐকান্তিকভাবে মশগুল হয়ে পড়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধনায়। এতেকাফ ঈমান বৃদ্ধির একটি মূখ্য সুযোগ। সকলের উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ইমানি চেতনাকে প্রাণিত করে তোলা ও উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা।
আল-কুরআনুল কারিমে বিভিন্নভাবে এতেকাফ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে, ইব্রাহীম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর কথা উল্লেখ করে এরশাদ হয়েছে : ‘এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, এতেকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।’ সূরা আল বাকারা : ১২৫
এতেকাফ অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে কি আচরণ হবে তা বলতে গিয়ে আল্লাহ তাআ’লা বলেন : ‘আর তোমরা মসজিদে এতেকাফকালে স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না।’ সূরা আল বাকারা : ১৮৭
ইব্রাহীম (আ.) তাঁর পিতা এবং জাতিকে লক্ষ্য করে মূর্তির ভর্ৎসনা করতে যেয়ে যা বলেছিলেন, আল্লাহ তাআ’লা তা উল্লেখ করে বলেন : ‘যখন তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন : এই মূর্তিগুলো কি, যাদের এতেকাফকারী (পূজারি) হয়ে তোমরা বসে আছ?’ সূরা আল আম্বিয়া : ৫২
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অসংখ্য হাদিস এতেকাফ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্য হতে ফজিলত সম্পর্কিত কিছু হাদিস নিæে উল্লেখ করা হলো : ‘আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের শেষের দশকে এতেকাফ করেছেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত। এরপর তাঁর স্ত্রীগণ এতেকাফ করেছেন।’ বুখারী ও মুসলিম
‘আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক রমজানে এতেকাফ করতেন।’ বুখারী অন্য এক হাদিসে এসেছে : ‘আমি (প্রথমে) এ রাতের সন্ধানে প্রথম দশে এতেকাফ পালন করি। অত:পর এতেকাফ পালন করি মাঝের দশে। পরবর্তীতে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, এ রাত শেষ দশে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে (এ দশে) এতেকাফ পালনে আগ্রহী, সে যেন তা পালন করে। লোকেরা তার সাথে এতেকাফ পালন করল। রাসুল বলেন আমাকে তা এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, আমি সে ভোরে কাদা ও মাটিতে সেজদা দিচ্ছি। অত:পর রাসুল একুশের রাতের ভোর যাপন করলেন, ফজর পর্যন্ত তিনি কিয়ামুল লাইল করেছিলেন। তিনি ফজর আদায়ের জন্য দণ্ডায়মান হয়েছিলেন। তখন আকাশ ছেপে বৃষ্টি নেমে এল, এবং মসজিদে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ল। আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। ফজর সালাত শেষে যখন তিনি বের হলেন, তখন তার কপাল ও নাকের পাশে ছিল পানি ও কাদা। সেটি ছিল একুশের রাত।’ বুখারি
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি রমজানে দশদিন এতেকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি বিশদিন এতেকাফে কাটান।’ বুখারি
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে উভয়টির উল্লেখ পাওয়া যায় ‘আয়শা (রা.) বলেন : রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে তাঁর জনৈকা স্ত্রীও এতেকাফ করলেন। তখন তিনি ছিলেন এস্তেহাজা অবস্থায়, রক্ত দেখছেন। রক্তের কারণে হয়তো তাঁর নীচে গামলা রাখা হচ্ছে।’ বুখারি
রাসুল বলেন : ‘আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম দশদিন এতেকাফ করলাম। এরপর এতেকাফ করলাম মধ্যবর্তী দশদিন। অতঃপর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হল যে তা শেষ দশদিনে। সুতরাং তোমাদের যে এতেকাফ পছন্দ করবে, সে যেন এতেকাফ করে। ফলে, মানুষ তার সাথে এতেকাফ যাপন করল।’ মুসলিম
এতেকাফের উপকারিতা : ১. এতেকাফকারী এক নামাজের পর আর এক নামাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকে, আর এ অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : ‘নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা বলতে থাকে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে, ও নামাজ তাকে আটকিয়ে রাখবে, তার পরিবারের নিকট যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দোয়া করতে থাকবে।’ বুখারী
২. এতেকাফকারী কদরের রাতের তালাশে থাকে, যে রাত অনির্দিষ্টভাবে রমজানের যে কোন রাত হতে পারে। এই রহস্যের কারণে আল্লাহ তাআ’লা সেটিকে বান্দাদের থেকে গোপন রেখেছেন, যেন তারা মাস জুড়ে তাকে তালাশ করতে থাকে।
৩. এতেকাফের ফলে আল্লাহ তাআ’লার সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হয় এবং আল্লাহ তাআ’লার জন্য মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠে। কেননা আল্লাহ তাআ’লা বলেন :‘আমি মানুষ এবং জ্বীন জাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ সূরা আয যারিয়াত : ৫৬
আর এ ইবাদাতের বিবিধ প্রতিফলন ঘটে এতেকাফ অবস্থায়। কেননা এতেকাফ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদাতের সীমানায় বেঁধে নেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআ’লাও তাঁর বান্দাদেরকে নিরাশ করেন না, বরং তিনি বান্দাদেরকে নিরাশ হতে নিষেধ করে দিয়ে বলেছেন : ‘বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ও না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ সূরা আয যুমার : ৫৩ ‘যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে তোমার নিকট জিজ্ঞেস করে, আমি তো (তাদের) নিকটেই, আহŸানকারী যখন আমাকে আহŸান করে আমি তার আহŸানে সাড়া দেই; সুতরাং তাদের উচিত আমার নির্দেশ মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা, যাতে তারা সরলপথ প্রাপ্ত হয়।’ সূরা আল বাকারা : ১৮৬
৪. যখন কেউ মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ করতে লাগে যা সম্ভব প্রবৃত্তিকে অভ্যস্ত করানোর মাধ্যমে, কেননা প্রবৃত্তিকে যে বিষয়ে অভ্যস্ত করানো হবে সে বিষয়েই সে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ হতে শুরু করলে মসজিদকে সে ভালোবাসবে, সেখানে নামাজ আদায়কে ভালোবাসবে। আর এ প্রক্রিয়ায় আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক মজবুত হবে। হৃদয়ে সৃষ্টি হবে নামাজের ভালোবাসা এবং নামাজ আদায়ের মাধ্যমেই অনুভব করতে শুরু করবে হৃদয়ের প্রশান্তি। যে প্রশান্তির কথা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এভাবে বলেছিলেন : ‘নামাজের মাধ্যমে আমাদেরকে শান্ত করো হে বেলাল, নামাজের মাধ্যমে আমাদেরকে শান্ত করো হে বেলাল।’ আহমাদ ও আবু দাউদ
৫. মসজিদে এতেকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ তাআ’লার উদ্দেশে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার কারণে মুসলমানের অন্তরের কঠোরতা দূরীভূত হয়, কেননা কঠোরতা সৃষ্টি হয় দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও পার্থিবতায় নিজেকে আরোপিত করে রাখার কারণে। মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কারণে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়। মসজিদে এতেকাফ করার কারণে ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে, ফলে এতেকাফকারী ব্যক্তির আত্মা নিম্নাবস্থার নাগপাশ কাটিয়ে ফেরেশতাদের স্তরের দিকে ধাবিত হয়। ফেরেশতাদের পর্যায় থেকেও বরং ঊর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস পায়। কেননা ফেরেশতাদের প্রবৃত্তি নেই বিধায় প্রবৃত্তির ফাঁদে তারা পড়ে না। আর মানুষের প্রবৃত্তি থাকা সত্তে¡ও সব কিছু থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য একাগ্রচিত্ত হয়ে যায়।
৬. এতেকাফের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে।
৭. বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৮. ঐকান্তিকভাবে তাওবা করার সুযোগ লাভ হয়।
৯. তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া যায়।
১০. সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়।
এতেকাফের আহকাম-ইসলামি শরিয়াতে এতেকাফের অবস্থান : এতেকাফ করা সুন্নাত। এতেকাফের সবচেয়ে উপযোগী সময় রমজানের শেষ দশক, এতেকাফ কুরআন, হাদিস ও এজমা দ্বারা প্রমাণিত। ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন : কোন মুসলমান এতেকাফকে সুন্নাত বলে স্বীকার করেনি এমনটি আমার জানা নেই।
এতেকাফের উদ্দেশ্য :
১. আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা : আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হওয়া ও আল্লাহ কেন্দ্রিক ব্যতিব্যস্ততা যখন অন্তর সংশোধিত ও ইমানি দৃঢ়তা অর্জনের পথ, কেয়ামতের দিন তার মুক্তিও বরং এ পথেই, তাহলে এতেকাফ হল এমন একটি ইবাদাত যার মাধ্যমে বান্দা সমস্ত সৃষ্টি-জীব থেকে আলাদা হয়ে যথাসম্ভব প্রভুর সান্নিধ্যে চলে আসে। বান্দার কাজ হল তাঁকে স্মরণ করা, তাঁকে ভালোবাসা ও তাঁর ইবাদাত করা। সর্বদা তার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা, এরই মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত হয়।
২. পাশবিক প্রবণতা এবং অহেতুক কাজ থেকে দুরে থাকা : রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তাআ’লা তাঁর বান্দাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অতিরিক্ত পানাহার ও যৌনাচারসহ পশু প্রবৃত্তির বিবিধ প্রয়োগ থেকে, অনুরূপভাবে তিনি এতেকাফের বিধানের মাধ্যমে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অহেতুক কথা-বার্তা, মন্দ সংস্পর্শ ও অধিক ঘুম হতে। এতেকাফের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ অর্থে আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয়ে যায়। নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির ও দোয়া ইত্যাদির নির্বোধ চর্চার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের অফুরান সুযোগের আবহে সে নিজেকে পেয়ে যায়।
৩. শবে কদর তালাশ করা : এতেকাফের মাধ্যমে শবে কদর খোঁজ করা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, আবু সায়ীদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস সে কথারই প্রমাণ বহন করে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : ‘আমি প্রথম দশকে এতেকাফ করেছি এই (কদর) রজনির খোঁজ করার উদ্দেশে, অতঃপর মাঝের দশকে এতেকাফ করেছি, অতঃপর মাঝ-দশক পেরিয়ে এলাম, তারপর আমাকে বলা হল, (কদর) তো শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ এতেকাফ করতে চায় সে যেন এতেকাফ করে, অত:পর লোকেরা তাঁর সাথে এতেকাফ করল।’ মুসলিম
৪. মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে তোলা : এতেকাফের মাধ্যমে বান্দার অন্তর মসজিদের সাথে জুড়ে যায়, মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠে। হাদিস অনুযায়ী যে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআ’লা তাঁর নিজের ছায়ার নীচে ছায়া দান করবেন তাদের মধ্যে : ‘একজন হলেন ওই ব্যক্তি মসজিদের সাথে যার হৃদয় ছিল বাঁধা।’ বুখারী ও মুসলিম
৫. দুনিয়া ত্যাগ ও বিলাসিতা থেকে দুরে থাকা : এতেকাফকারী যেসব বিষয়ের স্পৃক্ততায় জীবন যাপন করত সেসব থেকে সরে এসে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ করে ফেলে। এতেকাফ অবস্থায় দুনিয়া ও দুনিয়ার স্বাদ থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, ঠিক ওই আরোহীর ন্যায় যে কোন গাছের ছায়ার নীচে বসল, অতঃপর সেখান থেকে উঠে চলে গেল।
৬. ইচ্ছাশক্তি প্রবল করা এবং প্রবৃত্তিকে খারাপ অভ্যাস ও কামনা-বাসনা থেকে বিরত রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা কেননা এতেকাফ দ্বারা খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকার ট্রেন্ড গড়ে উঠে। এতেকাফ তার জন্য সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় নিজেকে ধৈর্যের গুণে গুণান্বিত করতে ও নিজের ইচ্ছাশক্তিকে শানিত করতে। এতেকাফ থেকে একজন মানুষ সম্পূর্ণ নতুন মানুষ হয়ে বের হয়ে আসার সুযোগ পায়। যা পরকালে উপকারে আসবেনা তা থেকে বিরত থাকার ফুরসত মেলে।
এতেকাফের বিধানাবলি :
১. এতেকাফের সময়সীমা : সবচেয়ে কম সময়ের এতেকাফ হল, শুদ্ধ মত অনুযায়ী, একদিন একরাত। কেননা সাহাবায়ে কেরাম (রা.) নামাজ অথবা উপদেশ শ্রবণ করার অপেক্ষায় বা জ্ঞান অর্জন ইত্যাদির জন্য মসজিদে বসতেন, তবে তারা এ সবের জন্য এতেকাফের নিয়ত করেছেন বলে শোনা যায়নি। সর্বোচ্চ কতদিনের জন্য এতেকাফ করা যায় এ ব্যাপারে ওলামাদের মতামত হল, এ ব্যাপারে নির্ধারিত কোন সীমারেখা নেই।
২. এতেকাফে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময় : এতেকাফকারী যদি রমজানের শেষ দশকে এতেকাফের নিয়ত করে তাহলে একুশতম রাত্রির সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবে, কেননা তার উদ্দেশ্য কদরের রাত তালাশ করা, যা আশা করা হয়ে থাকে বেজোড় রাত্রগুলোতে, যার মধ্যে একুশের রাতও রয়েছে। তবে এতেকাফ থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে উত্তম হল চাঁদ রাত্রি মসজিদে অবস্থান করে পরদিন সকালে সরাসরি ঈদগাহে চলে যাওয়া। তবে চাঁদ রাতে সূর্যাস্তের পর মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলেও কোন সমস্যা নেই, বৈধ রয়েছে।
৩. এতেকাফের শর্তাবলি : এতেকাফের অনেকগুলো শর্ত রয়েছে । শর্তগুলো নিæরূপ: এতেকাফের জন্য কেউ কেউ রোজার শর্ত করেছেন, কিন্তু বিশুদ্ধ মত হল রোজা শর্ত নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে প্রমাণিত আছে যে তিনি কোন এক বছর শাওয়ালের প্রথম দশকে এতেকাফ করেছিলেন, আর এ দশকে ঈদের দিনও আছে। আর ঈদের দিনে তো রোজা রাখা নিষিদ্ধ।
* এতেকাফের জন্য মুসলমান হওয়া শর্ত। কেননা কাফেরের ইবাদাত গ্রহণযোগ্য হয় না।
* এতেকাফকারীকে বোধশক্তিসম্পন্ন হতে হবে, কেননা নির্বোধ ব্যক্তির কাজের কোনো উদ্দেশ্য থাকে না, আর উদ্দেশ্য ব্যতীত কাজ শুদ্ধ হতে পারে না।
* ভালো-মন্দ পার্থক্য করার জ্ঞান থাকতে হবে, কেননা কম বয়সী, যে ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না, তার নিয়তও শুদ্ধ হয় না।
* এতেকাফের নিয়ত করতে হবে, কেননা মসজিদে অবস্থান হয়তো এতেকাফের নিয়তে হবে অথবা অন্য কোনো নিয়তে। আর এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য করার জন্য নিয়তের প্রয়োজন। উপরন্তু রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তো বলেছেন :
‘প্রত্যেক কাজের নির্ভরতা নিয়তের উপর, যে যা নিয়ত করবে সে কেবল তাই পাবে।’ বুখারী
* এতেকাফ অবস্থায় মহিলাদের হায়েজ-নিফাস থেকে পবিত্র থাকা জরুরি, কেননা এ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করা হারাম, অবশ্য এস্তেহাজা অবস্থায় এতেকাফ করা বৈধ। আয়েশা (রা.) আনহা বলেন : ‘রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে তাঁর স্ত্রীগণের মধ্য হতে কেউ একজন এতেকাফ করেছিলেন এস্তেহাজা অবস্থায়। তিনি লাল ও হলুদ রঙ্গের স্রাব দেখতে পাচ্ছিলেন, আমরা কখনো তার নীচে পাত্র রেখে দিয়েছি নামাজের সময়।’ বুখারী এস্তেহাজাগ্রস্তদের সাথে অন্যান্য ব্যাধিগ্রস্তদেরকে মেলানো যায়, যেমন-যার বহুমূত্র রোগ বিশিষ্ট ব্যক্তি আছে, তবে শর্ত হল মসজিদ যেন অপবিত্র না হয়।
* গোসল ফরজ হয় এমন ধরনের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হতে হবে। অপবিত্র লোক মসজিদে অবস্থান করা হারাম। যদিও কোন কোন আলেম অজু করার শর্তে মসজিদে অবস্থান বৈধ বলেছেন। আর যদি অপবিত্রতা, যৌন স্পর্শ অথবা স্বামী-স্ত্রীর মিলনের ফলে হয়, তবে সকলের মতে এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি স্বপ্নদোষের কারণে হয়, তাহলে কারোর মতে এতেকাফ ভঙ্গ হবে না। আর যদি হস্ত মৈথুনের কারণে হয় তাহলে সঠিক মত অনুসারে এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
* এতেকাফ মসজিদে হতে হবে : এ ব্যাপারে সকল আলেম একমত যে এতেকাফ মসজিদে হতে হবে, তবে জামে মসজিদ হলে উত্তম কেননা এমতাবস্থায় জুমার নামাজের জন্য এতেকাফকারীকে মসজিদ থেকে বের হতে হবে না।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান :
* এতেকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
* আর এতেকাফের স্থান থেকে যদি মানবীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য বের হয় তাহলে এতেকাফ ভঙ্গ হবে না।
* মসজিদে থেকে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব না হলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার অনুমতি আছে।
* বাহক না থাকার কারণে এতেকাফকারীকে যদি পানাহারের প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয় অথবা মসজিদে খাবার গ্রহণ করতে লজ্জাবোধ হয়, তবে এরূপ প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে।
* যে মসজিদে এতেকাফে বসেছে সেখানে জুমার নামাজের ব্যবস্থা না থাকলে জুমার নামাজ আদায়ের প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া ওয়াজিব এবং আগে ভাগেই রওয়ানা হওয়া তার জন্য মুস্তাহাব।
* ওজরের কারণে এতেকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারে। ছাফিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস এর প্রমাণ :
‘ছাফিয়্যা (রা.) আনহা রমজানের শেষ দশকে এতেকাফস্থলে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে এলেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে কতক্ষণ কথা বললেন, অতঃপর যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাকে বিদায় দিতে উঠে দাঁড়ালেন।’ বুখারী
* কোন নেকির কাজ করার জন্য এতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন-রোগী দেখতে যাওয়া, জানাজায় উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি। এ মর্মে আয়শা (রা.) আনহা বলেন : ‘এতেকাফকারীর জন্য সুন্নত হল, সে রোগী দেখতে যাবে না, জানাযায় উপস্থিত হবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না ও তার সাথে কামাচার করবেনা এবং অতি প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হবে না।’ আবু দাউদ
* এতেকাফ-বিরুদ্ধ কোন কাজের জন্য এতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, যেমন ক্রয়-বিক্রয়, স্বামী-স্ত্রীর মিলন ইত্যাদি। এতেকাফকারীর জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ :
* ইবাদাত আদায়, যেমন-নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির ও দোয়া ইত্যাদি। কেননা এতেকাফের উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তাআ’লার সমীপে অন্তরের একাগ্রতা নিবেদন করা এবং তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া যা উপরোক্ত ইবাদাত আদায় ছাড়া সম্ভব নয়।
অনুরূপভাবে যেসব ইবাদাতের প্রভাব অন্যদের পর্যন্ত পৌঁছায় যেমন সালামের উত্তর দেওয়া, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণ, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, পথ দেখানো, ইলম শিক্ষা দেওয়া কুরআন পড়ানো ইত্যাদিও করতে পারবে। কিন্তু শর্ত হল এগুলো যেন এত বেশি না হয় যে এতেকাফের মূল উদ্দেশ্যই ছুটে যায়।
* এতেকাফকারীর জন্য মুস্তাহাব হল তার এতেকাফের স্থানে কোন কিছু দ্বারা পর্দা করে নেয়া। কেননা ‘রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তুর্কি গম্বুজের ভেতরে এতেকাফ করেছেন যার দরজায় ছিল ছাটাই।’ মুসলিম * এতেকাফকারী তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নেবে যাতে নিজের প্রয়োজনে তাকে বার বার মসজিদের বাইরে যেতে না হয়; আবু সাইদ খুদরি (রা.) হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন : ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে রমজানের মাঝের দশকে এতেকাফ করলাম, যখন বিশ তারিখ সকাল হল আমরা আমাদের বিছানা-পত্র সরিয়ে নিলাম, তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে বললেন : যে এতেকাফ করেছে সে তার এতেকাফের স্থানে ফিরে যাবে ।’ বুখারী
এতেকাফকারীর জন্য যা অনুমোদিত :
* এতেকাফকারীর জন্য মসজিদে পানাহার ও ঘুমানোর অনুমতি আছে। এ ব্যাপারে সকল ইমামদের ঐক্যমত রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত; কেননা আল্লাহর প্রতি একাগ্রচিত্ত এবং একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশের জন্য কম খাওয়া কম ঘুমানো সহায়ক বলে বিবেচিত।
* গোসল করা, চুল আঁচড়ানো, তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার, ভাল পোশাক পরা, এসবের অনুমতি আছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে :
‘তিনি মাসিক অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মাথার কেশ বিন্যাস করে দিতেন, যখন রাসুল মসজিদে এতেকাফরত অবস্থায় থাকতেন, আয়েশা (রা.) তার কক্ষে থাকা অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মাথার নাগাল পেতেন।’ বুখারী
* এতেকাফকারীর পরিবার তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে, কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণ এতেকাফকালীন তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। কিন্তু সাক্ষাৎ দীর্ঘ না হওয়া বাঞ্ছনীয়। এতেকাফকারী যা থেকে বিরত থাকবে : * ওজর ছাড়া এতেকাফকারী এমন কোন কাজ করবে না যা এতেকাফকে ভঙ্গ করে দেয়, আল্লাহ তাআ’লা বলেন : ‘তোমরা তোমাদের কাজসমুহকে নষ্ট করো না।’ সূরা মোহাম্মদ : ৩৩
* ওই সকল কাজ যা এতেকাফের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে, যেমন বেশি কথা বলা, বেশি মেলামেশা করা, অধিক ঘুমানো, ইবাদাতের সময়কে কাজে না লাগানো ইত্যাদি।
* এতেকাফকারী মসজিদে অবস্থানকালে ক্রয়-বিক্রয় করবে না, কেননা
‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।’ মুসনাদে আহমদ
এমনইভাবে যা ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ বলে বিবেচিত যেমন বিভিন্ন ধরনের চুক্তিপত্র, ভাড়া, মুদারাবা, মুশারাকা, বন্দক রাখা ইত্যাদি। কিন্তু যদি মসজিদের বাইরে এমন ক্রয়-বিক্রয় হয় যা ছাড়া এতেকাফকারীর সংসার চলে না তবে তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে।
মসজিদে বায়ু ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আনাস (রা.) আনহুর হাদিসে এসেছে, যখন বেদুইন লোকটি মসজিদে প্রস্রাব করেছিল তখন রাসুল বলেছিলেন : ‘নিশ্চয়ই মসজিদ এরূপ অপবিত্র প্রস্রাব ও ময়লা-আবর্জনার জন্য উপযোগী নয়, বরং মসজিদ অবশ্যই আল্লাহর জিকির, নামাজ ও কুরআন তেলাওয়াতের জন্য নির্ধারিত।’ মুসলিম
* এতেকাফ অবস্থায় যৌন স্পর্শ নিষেধ, এ ব্যাপারে সকল ওলামাদের ঐকমত্য রয়েছে। তবে অধিকাংশ ওলামাদের মতে বীর্যস্খলনের দ্বারাই কেবল এতেকাফ ভঙ্গ হয়।
মুসলিম জীবনে এতেকাফের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মহান রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের জন্য এতেকাফ হলো এক অনন্য মাধ্যম। এতেকাফে আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থেকে একজন মুসলিমের আত্মগঠন ও আত্মশুদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। তাই প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে একবার হলেও এতেকাফ করা প্রয়োজন। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সিয়াম পালনসহ সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমীন