Wednesday, July 8, 2015

আল্লাহ তায়ালার ঘরে যাচ্ছেন আল্লাহ তায়ালার অতিথিরা


আজ ২০ রমজান। শুরু হচ্ছে রহমতের জোয়ার। আজ আল্ল­াহর ঘরে যাবেন মোমিন অতিথিরা। পৃথিবীর মায়াজাল ছিন্ন করে ফিরে যাবেন আপন ভুবনে, মসজিদে এতেকাফে। এতেকাফে রচিত হবে আল্ল­াহ ও বান্দার গভীর সেতুবন্ধন। হজরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি বলেন, মসজিদের এতেকাফ হচ্ছে আত্মিক প্রশান্তি, হƒদয়ের পবিত্রতা, চিন্তার বিশুদ্ধতা ও ফেরেশতাকুলের গুণাবলি অর্জন।
শবে কদরের সৌভাগ্য ও কল্যাণ লাভসহ সকল প্রকার এবাদতের অখ- সুযোগ লাভের প্রধান উপায়। আল্ল­াহর রাসুল (সা.) রোজার শেষ ১০ দিন এতেকাফ করেছেন এবং উম্মতের সৎ ও ভাগ্যবান লোকদের জন্য তা সুন্নত ঘোষণা করেছেন। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা- ২য় খ- ৪২ পৃষ্ঠা)
হজরত আয়শা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইন্তেকালের পূর্ব রমজান পর্যন্ত রোজার শেষ ১০ দিন এতেকাফ করেছেন (বুখারি শরিফ)। মানব সভ্যতার ইতিহাসে বিভিন্ন নবীর এতেকাফের প্রমাণ পাওয়া যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর জন্য কাবা শরিফে তোয়াফ নামাজ ও এতেকাফের নির্দেশ ছিল।
কাবার উদ্দেশে আল্ল­াহ বলেন, আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম- তোমরা আমার ঘর পবিত্র রাখ তোয়াফ, এতেকাফ ও নামাজীদের জন্য। (সুরা বাকারা : ১২৫)
হজরত মুসা (আ.) এতেকাফ সাধনায় তুর পাহাড়ে প্রভুর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। (তফসিরে মায়ারেফুল কোরআন) আল্লামা শামী বলেন, উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এতেকাফ সুন্নতে কেফায়া। কোনো এলাকার পক্ষ থেকে দু-একজন আদায় করলে সবার দায়িত্ব সেরে যায়। (দুররুল মুখতার)
এতেকাফের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি একদিনও এতেকাফ করবে, আল্ল­াহ কেয়ামতের দিন তার এবং জাহান্নামের মধ্যে ৩ খন্দক পরিমাণ ব্যবধান করে দেবেন। এক খন্দক ৫০০ বছরের পথ। (বুখারি শরিফ)
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (র.) বলেন, এতেকাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীর মোহনীয় মায়াজাল থেকে মুক্তি লাভ। আল্ল­াহর সঙ্গে প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপন। এতেকাফ যাপনে আত্মার পরম উন্নতি সাধিত হয়। এতেকাফকারীর মনে আল্ল­াহ প্রেমের ঢেউ খেলে। তার চিন্তা-চেতনা ও বোধে আল্ল­াহর নৈকট্য লাভই কামনা থাকে। (যাদুল মায়াদ- ১৮৭)।
এতেকাফের ফজিলত : এতেকাফ একটি মহান ইবাদাত, মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি বছরই এতেকাফ পালন করেছেন। দাওয়াত, তরবিয়ত, শিক্ষা এবং জিহাদে ব্যস্ত থাকা সত্তে¡ও রমজানে তিনি এতেকাফ ছাড়েননি। এতেকাফ ইমানি তরবিয়তের একটি পাঠশালা, এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হেদায়েতি আলোর একটি প্রতীক। এতেকাফরত অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদাতের জন্য দুনিয়ার অন্যান্য সকল বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। ঐকান্তিকভাবে মশগুল হয়ে পড়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধনায়। এতেকাফ ঈমান বৃদ্ধির একটি মূখ্য সুযোগ। সকলের উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ইমানি চেতনাকে প্রাণিত করে তোলা ও উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা।
আল-কুরআনুল কারিমে বিভিন্নভাবে এতেকাফ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে, ইব্রাহীম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর কথা উল্লেখ করে এরশাদ হয়েছে : ‘এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, এতেকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।’ সূরা আল বাকারা : ১২৫
এতেকাফ অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে কি আচরণ হবে তা বলতে গিয়ে আল্লাহ তাআ’লা বলেন : ‘আর তোমরা মসজিদে এতেকাফকালে স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না।’ সূরা আল বাকারা : ১৮৭
ইব্রাহীম (আ.) তাঁর পিতা এবং জাতিকে লক্ষ্য করে মূর্তির ভর্ৎসনা করতে যেয়ে যা বলেছিলেন, আল্লাহ তাআ’লা তা উল্লেখ করে বলেন : ‘যখন তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন : এই মূর্তিগুলো কি, যাদের এতেকাফকারী (পূজারি) হয়ে তোমরা বসে আছ?’ সূরা আল আম্বিয়া : ৫২
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অসংখ্য হাদিস এতেকাফ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্য হতে ফজিলত সম্পর্কিত কিছু হাদিস নিæে উল্লেখ করা হলো : ‘আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের শেষের দশকে এতেকাফ করেছেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত। এরপর তাঁর স্ত্রীগণ এতেকাফ করেছেন।’ বুখারী ও মুসলিম
‘আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক রমজানে এতেকাফ করতেন।’ বুখারী অন্য এক হাদিসে এসেছে : ‘আমি (প্রথমে) এ রাতের সন্ধানে প্রথম দশে এতেকাফ পালন করি। অত:পর এতেকাফ পালন করি মাঝের দশে। পরবর্তীতে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, এ রাত শেষ দশে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে (এ দশে) এতেকাফ পালনে আগ্রহী, সে যেন তা পালন করে। লোকেরা তার সাথে এতেকাফ পালন করল। রাসুল বলেন আমাকে তা এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, আমি সে ভোরে কাদা ও মাটিতে সেজদা দিচ্ছি। অত:পর রাসুল একুশের রাতের ভোর যাপন করলেন, ফজর পর্যন্ত তিনি কিয়ামুল লাইল করেছিলেন। তিনি ফজর আদায়ের জন্য দণ্ডায়মান হয়েছিলেন। তখন আকাশ ছেপে বৃষ্টি নেমে এল, এবং মসজিদে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ল। আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। ফজর সালাত শেষে যখন তিনি বের হলেন, তখন তার কপাল ও নাকের পাশে ছিল পানি ও কাদা। সেটি ছিল একুশের রাত।’ বুখারি
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি রমজানে দশদিন এতেকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি বিশদিন এতেকাফে কাটান।’ বুখারি
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে উভয়টির উল্লেখ পাওয়া যায় ‘আয়শা (রা.) বলেন : রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে তাঁর জনৈকা স্ত্রীও এতেকাফ করলেন। তখন তিনি ছিলেন এস্তেহাজা অবস্থায়, রক্ত দেখছেন। রক্তের কারণে হয়তো তাঁর নীচে গামলা রাখা হচ্ছে।’ বুখারি
রাসুল বলেন : ‘আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম দশদিন এতেকাফ করলাম। এরপর এতেকাফ করলাম মধ্যবর্তী দশদিন। অতঃপর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হল যে তা শেষ দশদিনে। সুতরাং তোমাদের যে এতেকাফ পছন্দ করবে, সে যেন এতেকাফ করে। ফলে, মানুষ তার সাথে এতেকাফ যাপন করল।’ মুসলিম
এতেকাফের উপকারিতা : ১. এতেকাফকারী এক নামাজের পর আর এক নামাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকে, আর এ অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : ‘নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা বলতে থাকে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে, ও নামাজ তাকে আটকিয়ে রাখবে, তার পরিবারের নিকট যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দোয়া করতে থাকবে।’ বুখারী
২. এতেকাফকারী কদরের রাতের তালাশে থাকে, যে রাত অনির্দিষ্টভাবে রমজানের যে কোন রাত হতে পারে। এই রহস্যের কারণে আল্লাহ তাআ’লা সেটিকে বান্দাদের থেকে গোপন রেখেছেন, যেন তারা মাস জুড়ে তাকে তালাশ করতে থাকে।
৩. এতেকাফের ফলে আল্লাহ তাআ’লার সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হয় এবং আল্লাহ তাআ’লার জন্য মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠে। কেননা আল্লাহ তাআ’লা বলেন :‘আমি মানুষ এবং জ্বীন জাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ সূরা আয যারিয়াত : ৫৬
আর এ ইবাদাতের বিবিধ প্রতিফলন ঘটে এতেকাফ অবস্থায়। কেননা এতেকাফ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদাতের সীমানায় বেঁধে নেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআ’লাও তাঁর বান্দাদেরকে নিরাশ করেন না, বরং তিনি বান্দাদেরকে নিরাশ হতে নিষেধ করে দিয়ে বলেছেন : ‘বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ও না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ সূরা আয যুমার : ৫৩ ‘যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে তোমার নিকট জিজ্ঞেস করে, আমি তো (তাদের) নিকটেই, আহŸানকারী যখন আমাকে আহŸান করে আমি তার আহŸানে সাড়া দেই; সুতরাং তাদের উচিত আমার নির্দেশ মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা, যাতে তারা সরলপথ প্রাপ্ত হয়।’ সূরা আল বাকারা : ১৮৬
৪. যখন কেউ মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ করতে লাগে যা সম্ভব প্রবৃত্তিকে অভ্যস্ত করানোর মাধ্যমে, কেননা প্রবৃত্তিকে যে বিষয়ে অভ্যস্ত করানো হবে সে বিষয়েই সে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ হতে শুরু করলে মসজিদকে সে ভালোবাসবে, সেখানে নামাজ আদায়কে ভালোবাসবে। আর এ প্রক্রিয়ায় আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক মজবুত হবে। হৃদয়ে সৃষ্টি হবে নামাজের ভালোবাসা এবং নামাজ আদায়ের মাধ্যমেই অনুভব করতে শুরু করবে হৃদয়ের প্রশান্তি। যে প্রশান্তির কথা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এভাবে বলেছিলেন : ‘নামাজের মাধ্যমে আমাদেরকে শান্ত করো হে বেলাল, নামাজের মাধ্যমে আমাদেরকে শান্ত করো হে বেলাল।’ আহমাদ ও আবু দাউদ
৫. মসজিদে এতেকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ তাআ’লার উদ্দেশে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার কারণে মুসলমানের অন্তরের কঠোরতা দূরীভূত হয়, কেননা কঠোরতা সৃষ্টি হয় দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও পার্থিবতায় নিজেকে আরোপিত করে রাখার কারণে। মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কারণে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়। মসজিদে এতেকাফ করার কারণে ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে, ফলে এতেকাফকারী ব্যক্তির আত্মা নিম্নাবস্থার নাগপাশ কাটিয়ে ফেরেশতাদের স্তরের দিকে ধাবিত হয়। ফেরেশতাদের পর্যায় থেকেও বরং ঊর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস পায়। কেননা ফেরেশতাদের প্রবৃত্তি নেই বিধায় প্রবৃত্তির ফাঁদে তারা পড়ে না। আর মানুষের প্রবৃত্তি থাকা সত্তে¡ও সব কিছু থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য একাগ্রচিত্ত হয়ে যায়।
৬. এতেকাফের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে।
৭. বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৮. ঐকান্তিকভাবে তাওবা করার সুযোগ লাভ হয়।
৯. তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া যায়।
১০. সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়।
এতেকাফের আহকাম-ইসলামি শরিয়াতে এতেকাফের অবস্থান : এতেকাফ করা সুন্নাত। এতেকাফের সবচেয়ে উপযোগী সময় রমজানের শেষ দশক, এতেকাফ কুরআন, হাদিস ও এজমা দ্বারা প্রমাণিত। ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন : কোন মুসলমান এতেকাফকে সুন্নাত বলে স্বীকার করেনি এমনটি আমার জানা নেই।
এতেকাফের উদ্দেশ্য :
১. আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা : আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হওয়া ও আল্লাহ কেন্দ্রিক ব্যতিব্যস্ততা যখন অন্তর সংশোধিত ও ইমানি দৃঢ়তা অর্জনের পথ, কেয়ামতের দিন তার মুক্তিও বরং এ পথেই, তাহলে এতেকাফ হল এমন একটি ইবাদাত যার মাধ্যমে বান্দা সমস্ত সৃষ্টি-জীব থেকে আলাদা হয়ে যথাসম্ভব প্রভুর সান্নিধ্যে চলে আসে। বান্দার কাজ হল তাঁকে স্মরণ করা, তাঁকে ভালোবাসা ও তাঁর ইবাদাত করা। সর্বদা তার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা, এরই মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত হয়।
২. পাশবিক প্রবণতা এবং অহেতুক কাজ থেকে দুরে থাকা : রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তাআ’লা তাঁর বান্দাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অতিরিক্ত পানাহার ও যৌনাচারসহ পশু প্রবৃত্তির বিবিধ প্রয়োগ থেকে, অনুরূপভাবে তিনি এতেকাফের বিধানের মাধ্যমে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অহেতুক কথা-বার্তা, মন্দ সংস্পর্শ ও অধিক ঘুম হতে। এতেকাফের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ অর্থে আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয়ে যায়। নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির ও দোয়া ইত্যাদির নির্বোধ চর্চার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের অফুরান সুযোগের আবহে সে নিজেকে পেয়ে যায়।
৩. শবে কদর তালাশ করা : এতেকাফের মাধ্যমে শবে কদর খোঁজ করা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, আবু সায়ীদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস সে কথারই প্রমাণ বহন করে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : ‘আমি প্রথম দশকে এতেকাফ করেছি এই (কদর) রজনির খোঁজ করার উদ্দেশে, অতঃপর মাঝের দশকে এতেকাফ করেছি, অতঃপর মাঝ-দশক পেরিয়ে এলাম, তারপর আমাকে বলা হল, (কদর) তো শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ এতেকাফ করতে চায় সে যেন এতেকাফ করে, অত:পর লোকেরা তাঁর সাথে এতেকাফ করল।’ মুসলিম
৪. মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে তোলা : এতেকাফের মাধ্যমে বান্দার অন্তর মসজিদের সাথে জুড়ে যায়, মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠে। হাদিস অনুযায়ী যে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআ’লা তাঁর নিজের ছায়ার নীচে ছায়া দান করবেন তাদের মধ্যে : ‘একজন হলেন ওই ব্যক্তি মসজিদের সাথে যার হৃদয় ছিল বাঁধা।’ বুখারী ও মুসলিম
৫. দুনিয়া ত্যাগ ও বিলাসিতা থেকে দুরে থাকা : এতেকাফকারী যেসব বিষয়ের স্পৃক্ততায় জীবন যাপন করত সেসব থেকে সরে এসে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ করে ফেলে। এতেকাফ অবস্থায় দুনিয়া ও দুনিয়ার স্বাদ থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, ঠিক ওই আরোহীর ন্যায় যে কোন গাছের ছায়ার নীচে বসল, অতঃপর সেখান থেকে উঠে চলে গেল।
৬. ইচ্ছাশক্তি প্রবল করা এবং প্রবৃত্তিকে খারাপ অভ্যাস ও কামনা-বাসনা থেকে বিরত রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা কেননা এতেকাফ দ্বারা খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকার ট্রেন্ড গড়ে উঠে। এতেকাফ তার জন্য সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় নিজেকে ধৈর্যের গুণে গুণান্বিত করতে ও নিজের ইচ্ছাশক্তিকে শানিত করতে। এতেকাফ থেকে একজন মানুষ সম্পূর্ণ নতুন মানুষ হয়ে বের হয়ে আসার সুযোগ পায়। যা পরকালে উপকারে আসবেনা তা থেকে বিরত থাকার ফুরসত মেলে।
এতেকাফের বিধানাবলি :
১. এতেকাফের সময়সীমা : সবচেয়ে কম সময়ের এতেকাফ হল, শুদ্ধ মত অনুযায়ী, একদিন একরাত। কেননা সাহাবায়ে কেরাম (রা.) নামাজ অথবা উপদেশ শ্রবণ করার অপেক্ষায় বা জ্ঞান অর্জন ইত্যাদির জন্য মসজিদে বসতেন, তবে তারা এ সবের জন্য এতেকাফের নিয়ত করেছেন বলে শোনা যায়নি। সর্বোচ্চ কতদিনের জন্য এতেকাফ করা যায় এ ব্যাপারে ওলামাদের মতামত হল, এ ব্যাপারে নির্ধারিত কোন সীমারেখা নেই।
২. এতেকাফে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময় : এতেকাফকারী যদি রমজানের শেষ দশকে এতেকাফের নিয়ত করে তাহলে একুশতম রাত্রির সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবে, কেননা তার উদ্দেশ্য কদরের রাত তালাশ করা, যা আশা করা হয়ে থাকে বেজোড় রাত্রগুলোতে, যার মধ্যে একুশের রাতও রয়েছে। তবে এতেকাফ থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে উত্তম হল চাঁদ রাত্রি মসজিদে অবস্থান করে পরদিন সকালে সরাসরি ঈদগাহে চলে যাওয়া। তবে চাঁদ রাতে সূর্যাস্তের পর মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলেও কোন সমস্যা নেই, বৈধ রয়েছে।
৩. এতেকাফের শর্তাবলি : এতেকাফের অনেকগুলো শর্ত রয়েছে । শর্তগুলো নিæরূপ: এতেকাফের জন্য কেউ কেউ রোজার শর্ত করেছেন, কিন্তু বিশুদ্ধ মত হল রোজা শর্ত নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে প্রমাণিত আছে যে তিনি কোন এক বছর শাওয়ালের প্রথম দশকে এতেকাফ করেছিলেন, আর এ দশকে ঈদের দিনও আছে। আর ঈদের দিনে তো রোজা রাখা নিষিদ্ধ।
* এতেকাফের জন্য মুসলমান হওয়া শর্ত। কেননা কাফেরের ইবাদাত গ্রহণযোগ্য হয় না।
* এতেকাফকারীকে বোধশক্তিসম্পন্ন হতে হবে, কেননা নির্বোধ ব্যক্তির কাজের কোনো উদ্দেশ্য থাকে না, আর উদ্দেশ্য ব্যতীত কাজ শুদ্ধ হতে পারে না।
* ভালো-মন্দ পার্থক্য করার জ্ঞান থাকতে হবে, কেননা কম বয়সী, যে ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না, তার নিয়তও শুদ্ধ হয় না।
* এতেকাফের নিয়ত করতে হবে, কেননা মসজিদে অবস্থান হয়তো এতেকাফের নিয়তে হবে অথবা অন্য কোনো নিয়তে। আর এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য করার জন্য নিয়তের প্রয়োজন। উপরন্তু রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তো বলেছেন :
‘প্রত্যেক কাজের নির্ভরতা নিয়তের উপর, যে যা নিয়ত করবে সে কেবল তাই পাবে।’ বুখারী
* এতেকাফ অবস্থায় মহিলাদের হায়েজ-নিফাস থেকে পবিত্র থাকা জরুরি, কেননা এ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করা হারাম, অবশ্য এস্তেহাজা অবস্থায় এতেকাফ করা বৈধ। আয়েশা (রা.) আনহা বলেন : ‘রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে তাঁর স্ত্রীগণের মধ্য হতে কেউ একজন এতেকাফ করেছিলেন এস্তেহাজা অবস্থায়। তিনি লাল ও হলুদ রঙ্গের স্রাব দেখতে পাচ্ছিলেন, আমরা কখনো তার নীচে পাত্র রেখে দিয়েছি নামাজের সময়।’ বুখারী এস্তেহাজাগ্রস্তদের সাথে অন্যান্য ব্যাধিগ্রস্তদেরকে মেলানো যায়, যেমন-যার বহুমূত্র রোগ বিশিষ্ট ব্যক্তি আছে, তবে শর্ত হল মসজিদ যেন অপবিত্র না হয়।
* গোসল ফরজ হয় এমন ধরনের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হতে হবে। অপবিত্র লোক মসজিদে অবস্থান করা হারাম। যদিও কোন কোন আলেম অজু করার শর্তে মসজিদে অবস্থান বৈধ বলেছেন। আর যদি অপবিত্রতা, যৌন স্পর্শ অথবা স্বামী-স্ত্রীর মিলনের ফলে হয়, তবে সকলের মতে এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি স্বপ্নদোষের কারণে হয়, তাহলে কারোর মতে এতেকাফ ভঙ্গ হবে না। আর যদি হস্ত মৈথুনের কারণে হয় তাহলে সঠিক মত অনুসারে এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
* এতেকাফ মসজিদে হতে হবে : এ ব্যাপারে সকল আলেম একমত যে এতেকাফ মসজিদে হতে হবে, তবে জামে মসজিদ হলে উত্তম কেননা এমতাবস্থায় জুমার নামাজের জন্য এতেকাফকারীকে মসজিদ থেকে বের হতে হবে না।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান :
* এতেকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
* আর এতেকাফের স্থান থেকে যদি মানবীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য বের হয় তাহলে এতেকাফ ভঙ্গ হবে না।
* মসজিদে থেকে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব না হলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার অনুমতি আছে।
* বাহক না থাকার কারণে এতেকাফকারীকে যদি পানাহারের প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয় অথবা মসজিদে খাবার গ্রহণ করতে লজ্জাবোধ হয়, তবে এরূপ প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে।
* যে মসজিদে এতেকাফে বসেছে সেখানে জুমার নামাজের ব্যবস্থা না থাকলে জুমার নামাজ আদায়ের প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া ওয়াজিব এবং আগে ভাগেই রওয়ানা হওয়া তার জন্য মুস্তাহাব।
* ওজরের কারণে এতেকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারে। ছাফিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস এর প্রমাণ :
‘ছাফিয়্যা (রা.) আনহা রমজানের শেষ দশকে এতেকাফস্থলে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে এলেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে কতক্ষণ কথা বললেন, অতঃপর যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাকে বিদায় দিতে উঠে দাঁড়ালেন।’ বুখারী
* কোন নেকির কাজ করার জন্য এতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন-রোগী দেখতে যাওয়া, জানাজায় উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি। এ মর্মে আয়শা (রা.) আনহা বলেন : ‘এতেকাফকারীর জন্য সুন্নত হল, সে রোগী দেখতে যাবে না, জানাযায় উপস্থিত হবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না ও তার সাথে কামাচার করবেনা এবং অতি প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হবে না।’ আবু দাউদ
* এতেকাফ-বিরুদ্ধ কোন কাজের জন্য এতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, যেমন ক্রয়-বিক্রয়, স্বামী-স্ত্রীর মিলন ইত্যাদি। এতেকাফকারীর জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ :
* ইবাদাত আদায়, যেমন-নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির ও দোয়া ইত্যাদি। কেননা এতেকাফের উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তাআ’লার সমীপে অন্তরের একাগ্রতা নিবেদন করা এবং তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া যা উপরোক্ত ইবাদাত আদায় ছাড়া সম্ভব নয়।
অনুরূপভাবে যেসব ইবাদাতের প্রভাব অন্যদের পর্যন্ত পৌঁছায় যেমন সালামের উত্তর দেওয়া, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণ, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, পথ দেখানো, ইলম শিক্ষা দেওয়া কুরআন পড়ানো ইত্যাদিও করতে পারবে। কিন্তু শর্ত হল এগুলো যেন এত বেশি না হয় যে এতেকাফের মূল উদ্দেশ্যই ছুটে যায়।
* এতেকাফকারীর জন্য মুস্তাহাব হল তার এতেকাফের স্থানে কোন কিছু দ্বারা পর্দা করে নেয়া। কেননা ‘রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তুর্কি গম্বুজের ভেতরে এতেকাফ করেছেন যার দরজায় ছিল ছাটাই।’ মুসলিম * এতেকাফকারী তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নেবে যাতে নিজের প্রয়োজনে তাকে বার বার মসজিদের বাইরে যেতে না হয়; আবু সাইদ খুদরি (রা.) হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন : ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে রমজানের মাঝের দশকে এতেকাফ করলাম, যখন বিশ তারিখ সকাল হল আমরা আমাদের বিছানা-পত্র সরিয়ে নিলাম, তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে বললেন : যে এতেকাফ করেছে সে তার এতেকাফের স্থানে ফিরে যাবে ।’ বুখারী
এতেকাফকারীর জন্য যা অনুমোদিত :
* এতেকাফকারীর জন্য মসজিদে পানাহার ও ঘুমানোর অনুমতি আছে। এ ব্যাপারে সকল ইমামদের ঐক্যমত রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত; কেননা আল্লাহর প্রতি একাগ্রচিত্ত এবং একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশের জন্য কম খাওয়া কম ঘুমানো সহায়ক বলে বিবেচিত।
* গোসল করা, চুল আঁচড়ানো, তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার, ভাল পোশাক পরা, এসবের অনুমতি আছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে :
‘তিনি মাসিক অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মাথার কেশ বিন্যাস করে দিতেন, যখন রাসুল মসজিদে এতেকাফরত অবস্থায় থাকতেন, আয়েশা (রা.) তার কক্ষে থাকা অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মাথার নাগাল পেতেন।’ বুখারী
* এতেকাফকারীর পরিবার তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে, কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণ এতেকাফকালীন তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। কিন্তু সাক্ষাৎ দীর্ঘ না হওয়া বাঞ্ছনীয়। এতেকাফকারী যা থেকে বিরত থাকবে : * ওজর ছাড়া এতেকাফকারী এমন কোন কাজ করবে না যা এতেকাফকে ভঙ্গ করে দেয়, আল্লাহ তাআ’লা বলেন : ‘তোমরা তোমাদের কাজসমুহকে নষ্ট করো না।’ সূরা মোহাম্মদ : ৩৩
* ওই সকল কাজ যা এতেকাফের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে, যেমন বেশি কথা বলা, বেশি মেলামেশা করা, অধিক ঘুমানো, ইবাদাতের সময়কে কাজে না লাগানো ইত্যাদি।
* এতেকাফকারী মসজিদে অবস্থানকালে ক্রয়-বিক্রয় করবে না, কেননা
‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।’ মুসনাদে আহমদ
এমনইভাবে যা ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ বলে বিবেচিত যেমন বিভিন্ন ধরনের চুক্তিপত্র, ভাড়া, মুদারাবা, মুশারাকা, বন্দক রাখা ইত্যাদি। কিন্তু যদি মসজিদের বাইরে এমন ক্রয়-বিক্রয় হয় যা ছাড়া এতেকাফকারীর সংসার চলে না তবে তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে।
মসজিদে বায়ু ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আনাস (রা.) আনহুর হাদিসে এসেছে, যখন বেদুইন লোকটি মসজিদে প্রস্রাব করেছিল তখন রাসুল বলেছিলেন : ‘নিশ্চয়ই মসজিদ এরূপ অপবিত্র প্রস্রাব ও ময়লা-আবর্জনার জন্য উপযোগী নয়, বরং মসজিদ অবশ্যই আল্লাহর জিকির, নামাজ ও কুরআন তেলাওয়াতের জন্য নির্ধারিত।’ মুসলিম
* এতেকাফ অবস্থায় যৌন স্পর্শ নিষেধ, এ ব্যাপারে সকল ওলামাদের ঐকমত্য রয়েছে। তবে অধিকাংশ ওলামাদের মতে বীর্যস্খলনের দ্বারাই কেবল এতেকাফ ভঙ্গ হয়।
মুসলিম জীবনে এতেকাফের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মহান রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের জন্য এতেকাফ হলো এক অনন্য মাধ্যম। এতেকাফে আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থেকে একজন মুসলিমের আত্মগঠন ও আত্মশুদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। তাই প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে একবার হলেও এতেকাফ করা প্রয়োজন। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সিয়াম পালনসহ সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমীন

No comments:

Post a Comment