হাদিসে আছে, পবিত্র রমজান মাসের সেহরি ও ইফতারের খাবারের হিসাব মহান আল্লাহ তাআলা নিবেন না। অর্থাৎ রমজান মাসে খরচ বেশি হলেও তার হিসাব আল্লাহ তাআলা বিচারের দিনে গোচরে আনবেন না। আমাদের সমাজের একটি শ্রেণি যারা ইফতারির জন্য ব্যয় করছে অঢেল অর্থ সেখানে অন্য একটি শ্রেণির ইফতার আয়োজন বলতে শুধু পানি আর সামান্য শুকনা মুড়ি। কখনো বা শুধু পানিই তাদের একমাত্র ইফতারি-সেহরির উপাদান। বিশেষ করে রাজধানীর বস্তি-পথশিশুদের ইফতারি-সেহরির এমনই আয়োজন দেখা যায়।
মনির। সারাক্ষণ হাসি হাসি মুখ তার। তখন ইফতারের বাকি মাত্র মিনিট ৩০। মা তখনও পাশেই ময়লার কন্টিনারে ময়লা তুলতে ব্যস্ত। ইফতারি কখন তৈরি করবেন এসব নিয়ে প্রশ্ন করা গেল না। কারণ সে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। মা কুলসন বেগম যখন ফিরে এলেন তখন হয়তো তার বাড়ি রূপি ফুটপাতের পাশের অনেক ফ্লাটেই বাহারি ইফতারির আয়োজন চলছে। আর কুলসন বেগম এসে শুরু করলেন ঘর রূপি ফুটপাত ঝাড়– দেওয়ার কাজ। আযানের মিনিট পাঁচেক আগে ফিরলেন বাবা সবেদ আলী। তার সঙ্গী বৃষ্টি। ৩ জনের এই পরিবারের কষ্টই যেনো আকাশের কান্না হয়ে ঝরে পড়ছে।
এতোক্ষণে কুলসন বেগম ইফতার আয়োজনে হাত দিয়েছেন। পরম যতেœ একটা ভাঙা গ্লাসে পানি আর থালায় সামান্য মুড়ি বের করলেন। গ্লাসটা যে কোনো ময়লার ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে তা দেখেই বোঝা যায়। আযান পড়লে ঢক ঢক করে পানি টুকু গিলে ফেলা গেলেও হাত বার বার ঘুরতে থাকে মুড়ির থালায়। যেনো খুঁজে ফেরে সুস্বাদু কিছু।
ইফতারের এমন আয়োজন দেখেও প্রশ্ন করা বোকামি যে, কেমন লাগছে? কিন্তু জবাবে নেই কোনো জড়তা। রিকশা চালক সবেদ আলী সোজাসাপ্টা বললেন, ‘মুড়ি খাইতে যেরাম, সেরাম মজা লাগলো। পানি খাইলাম, মুড়ি খাইলাম। যার কোনো কিছু নাই, সে যা পায় তাই খায়।’
যেখানে ইফতারির এমন দশা সেখানে সেহরির প্রশ্নটিও অবান্তর। তারপরও প্রশ্নের জবাবে আজিজুল ইসলামের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, ‘পরভাতে কোনো সময় খাই কোনো সময় খাই না। শুধু পানি খাইয়া আল্লার নাম নিয়া নিয়ত কইরা রোজা থাকি।’
ততক্ষণে সূর্যি মামা বিলিন হয়ে গেছে আরেকটি সকালের অপেক্ষায়। ফুটপাতের নিয়ন আলোয় স্বামীর অক্ষমতা বার বার ধরা পড়ছিল স্ত্রী ও সন্তানের কাছে। অন্ধকারে কারো দিকে না তাকিয়ে ইফতারি খাওয়াটাই যেন ওদের কাছে শোভনীয়।
No comments:
Post a Comment