আদতে এ পরীক্ষার পদ্ধতি একজন
নারীর পক্ষে অত্যন্ত অবমাননাকর। এখানে মহিলাদের যোনিমুখে আঙুল ঢুকিয়ে দেখা হয়, তাঁর হাইমেন (যোনিমুখের পর্দা) অটুট রয়েছে কি না। বহু দিন পর্যন্ত মনে করা হতো, এই পরীক্ষার মাধ্যমে একটি মেয়ের যৌন সহবাসের অভ্যাস রয়েছে কিনা তার প্রমাণ পাওয়া সম্ভব।
ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার ডাক্তারি প্রমাণ হিসেবে অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হতো।
কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানই বলে যে, এই পরীক্ষার কোনও কার্যকারিতা নেই। কারণ শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও আরও নানা কারণে হাইমেন ছিন্ন হতে পারে। ফলে হাইমেন অটুট থাকার সঙ্গে সহবাস হয়েছে কি হয়নি, তার কোনও সম্পর্ক নেই। ওই পর্দা অন্য নানা কারণেই ছিন্ন হতে পারে। তা ছাড়া, কোনও বিবাহিতা মহিলা ধর্ষিতা হলে টু ফিঙ্গার পরীক্ষায় নতুন করে কী প্রমাণ হবে?
এতদ্সত্ত্বেও মহিলাদের উপরে যৌন নিগ্রহের ডাক্তারি প্রমাণ সংগ্রহ করার কাজে এই পরীক্ষাটি চালু ছিল। ‘সত্যমেব জয়তে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিখ্যাত বলিউডি অভিনেতা আমির খান, বিভিন্ন নারী সংগঠন বেশ কয়েক বছর ধরে এই পরীক্ষা বন্ধ করার দাবিতে সরব ছিল। দিল্লিতে নির্ভয়ার ঘটনার পরে ধর্ষণ-বিরোধী নতুন আইন গড়ার ব্যাপারে বিচারপতি জে এস বর্মার নেতৃত্বে যে কমিশন গঠিত হয়েছিল, তার সুপারিশেও এই পরীক্ষা বন্ধ করার কথা বলা হয়েছিল।
আনেক সময়, ধর্ষিতা মহিলাদের মেডিক্যাল পরীক্ষার সময়ে হাসপাতালে অহরহ ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ডাক্তার থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, সকলের কৌতূহলের কেন্দ্র হয়ে ওঠেন। একে টু ফিঙ্গারের মতো অমানবিক পরীক্ষা, তার উপরে বহু ক্ষেত্রেই পরীক্ষাস্থলে কোনও আব্রুর ব্যবস্থা থাকে না। পরে অবশ্য হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ফরেনসিক ও মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য একটি পৃথক ঘর চিহ্নিত করা, মেডিক্যাল পরীক্ষার সময়ে ডাক্তার এবং মহিলা অ্যাটেন্ড্যান্ট ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত করা, নিগৃহীতা মেয়েটির জন্য বিকল্প পোশাকের ব্যবস্থা করা এবং যতটা সম্ভব সাবধানে এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়ায় নমুনা সংগ্রহ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
No comments :
Post a Comment