শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা. ছিলেন উত্তম আদর্শের প্রতীক। পবিত্র কোরআনে তার আদর্শকে সর্বোত্তম আদর্শ বলা হয়েছে। বলা হয়েছে ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’ [সুরা আহজাব : ২১] আদর্শবান এ মহান ব্যক্তির দিন-রাত কেমন ছিল? কিভাবে কাটাতেন চব্বিশটা ঘণ্টা? নিচে খানিকটা তুলে ধরা হলো।
মধ্য রাতে ঘুম থেকে উঠতেন
রাসুলে আকরাম সা. মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠতেন । ঘুম থেকে উঠে ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি আহয়ানা বা’দামা আমাতানা ও ইলাইহিন্ নুশুর’ এই দোয়া পড়তেন। তিনি কোনো স্বপ্ন দেখলে সাহাবায়ে কিরামকে তা শুনাতেন । সাহাবায়ে কিরামের স্বপ্নও শুনতেন ।
প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ
প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণে জুতা পরিধান করে তিনি বাথরুমে যেতেন। তখন মাথা ঢেকে রাখতেন। বাম পা দিয়ে প্রবেশ করতেন । প্রবেশের পূর্বে এই দুআ পাঠ করতেন ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুব্সি ওয়াল খাবায়িস’ ।
শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায়
শেষ রাতে প্রথমে ওজু করতেন । তখন এই দোয়া বারবার পড়তেন ‘আল্লহুম্মাগফিরলী যাম্বী ওয়া ওয়াস্সিলী ফীদারী ওয়া বারীকলী ফি রিযকী’। অর্থ : হে আল্লহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও এবং আমার রিজিকে বরকত দাও এবং আমার বাসস্থান প্রশস্ত করে দাও। ওজু শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে কালিমা পড়তেন। এরপর তিনি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন । ৪, ৬, ৮, বা কখনো ১২ রাকাত আদায় করতেন । হজরত বেলাল রা. ফজরের আজান দিলে ২ রাকাত সুন্নত ঘরে আদায় করতেন । ফজরের নামাজ মসজিদে আদায় করতেন ।
জিকির-আযকার ও ওহি পাঠ
ফজরের নামাজ আদায় করে কিছুক্ষণ নিজ স্থানে বসে থাকতেন । জিকির ও বিভিন্ন তাসবিহ পাঠ করতেন । কুরআন-হাদিসের বানী শুনাতেন । ওহি নাজিল হলে পরে সাহাবিদের নিকট হুকুম- আহকাম বর্ণনা করতেন । লোকদের মূর্তি পূজা ছেড়ে আল্লাহর ইবদত করার দাওয়াত দিতেন । ব্যবসা বাণিজ্যে সততা অবলম্বনের গুরুত্বারোপ করতেন ।
ঘরোয়া কাজে অংশগ্রহণ
ইচ্ছা ও আগ্রহ নিয়ে তিনি ঘরের কাজ-কর্মে অংশগ্রহণ করতেন । ঘর পরিস্কার করতেন, গৃহপালিত পশু-পাখিদের খাবার দিতেন। নিজহাতে বকরির দুধ দোহন করতেন । কাপড়, জুতা সেলাই করতেন । বাজার করতেন । নিজ হাতে আটা পিষতেন। এক কথায় ঘরোয়া কাজে তিনি স্বতস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করতেন।
রুচি সম্মত পোষাক পরিধান
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লম্বা জামা পরিধান করতেন। তাঁর জামার হাতাও কব্জি পর্যন্ত লম্বা থাকত। জামা পরিধানের সময় ডানদিক থেকে এবং খোলার সময় বাঁ দিক থেকে শুরু করতেন। তিনি জুমার দিন নতুন পোষাক পরিধান করতেন। সাদা পোষাক বেশি পরিধান করতেন। সাদা ছাড়া অন্য রঙের কাপড় ও পড়তেন। পাগড়ি পড়তেন। পাগড়ির নীচে টুপিও পড়তেন আবার কখনও শুধু টুপি পড়তেন।
দোয়া পড়ে খাবার খেতেন
রাসূলুল্লাহ সা. ঠান্ডা ও মিষ্টি পানীয় পছন্দ করতেন। পেয়াল গ্লাস ডান হাতে ধরতেন। বিসমিল্লাহ বলে বসে বসে পান করতেন। অল্প অল্প করে ২, ৩ বারে পান করতেন। হাত ধুয়ে মাটিতে বসে দস্তরখানায় খাবার খেতেন। বিসমিল্লাহ বলে সামনের দিক থেকে খাবার নিতেন। খাবার শেষ হলে আঙ্গুল চেটে খেতেন এবং কোনো খাবার পাত্রে অবশিষ্ট রাখতেন না। নিজ পরিবারের সদস্যদেও সাথে বসে একত্রে খাবার খেতেন। নিজে এমনভাবে খেতন যাতে সাথীদেও লজ্জা পেতে না হয়। খাওয়া শেষে এই দোয়া পড়তেন ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতয়ামানা ওয়াসাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন।’ অর্থ : সমস্ত প্রসংশা আল্লাহর, যিনি আমাদের খাবার খাইয়েছেন, পানি পান করিয়েছেন এবং মুসলমান বানিয়ে জন্ম দিয়েছেন। [আবু দাউদ : হাদিস নং-৩৮৫১]
কারো ঘরে দাওয়াতে গেলে তিনি মেজবানের জন্য বরকত ওক কল্যাণ কামনা করতেন। ধনী গরীব সকলের দাওয়াত কবুল করতেন। তিনি কখনো চেয়ারে বসে বা হেলান দিয়ে খাবারক খেতেন না। পেট ভরে খেতেন না। খেজুর, রুটি, খুরমা, ছাতু ইত্যাদি নিত্যদিনের আহার্য ছিল।
সুগন্ধি ও তেল ব্যবহার
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রায়হান মেশ্ক এবং উদের খোশবু পছন্দ করতেন। গোসলের পর ও রাতে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। মাথায় ও দাঁড়িতে তেল ব্যবহার করে তা চিরনী করতেন।
ডান পথে হাঁটতেন
সব সময় ডান পথ ধরে হাঁটতেন । কোথাও গমনকালে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে রওয়ানা করতেন। ঊচু স্থানে আরোহনে ‘আল্লহু আকবার’ এবং নীচে নামার সময় ‘সোবাহানাল্লাহ’ বলতেন। তিনি হাঁচির পরে ‘আল্হামদুলিল্লাহ’ বলতেন এবং হাঁচির জবাব দিতেন।
রোগীর সেবা করতেন
নিজ এলাকায় কেউ অসুস্থ হলে তিনি পায়ে হেঁটে তার বাড়ি যেতেন। অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করে রোগীর সেবা যতœ করতেন এবং কপালে হাত রাখতেন। সান্তনা দিয়ে তার আরোগ্যের জন্য দোয়া করতেন। অমুসলিম রোগীদেরও সেবা শুশ্রষা করতেন।
নবীজির হাস্য-রসিকতা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে মাঝে বাস্তবতার নিরিখে কৌতুক করতেন। তিনি একদা জনৈক সাহাবীকে বললেন, ‘ওহে দুই কান ওয়ালা।’ তিনি জনৈক বৃদ্ধা মহিলাকে বললেন, ‘কোন বৃদ্ধা মহিলা জান্নাতে যাবে না।’ একথা শুনে বৃদ্ধা কাঁদতে শুরু করল। রাসূলুল্লহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বৃদ্ধারা যুবতী হয়েই জান্নাতে যাবে । তিনি মুচকি হাসতেন। কাঁদার সময়ও শব্দ করে কাঁদতেন না।
পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্বারোপ
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অঙ্গ বলেছেন নবীজি সা.। তিনি নিয়মিত গোসল করতেন এবং সাহাবিদের পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন । তিনি নাক পরিস্কার করতেন বা হাতে । প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের পর বাম হাতে পানি খরচ করতেন ।
রাতের শুরু অংশে ঘুমাতেন
জামাতে ইশার নামাজ আদায় করার পর সাহাবিদের বিদায় দিয়ে নিজ ঘরে যেতেন । রাতের শুরু অংশে ঘুমিয়ে পড়তেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিছানায় থাকত সুরমাদানী , কাঁচি, মেসওয়াক, চিরুনী , তেলের বোতল, আয়না এবং ছোট কাঠ যা দ্বারা তিনি গা চুলকাতেন । তিনি উজু অবস্থায় ডান কাত হয়ে কিবলার দিকে মুখ দিয়ে শয়ন করতেন । সেই সময় তিনি ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া’ পাঠ করে সুরা ইখলাস, সূরা ফালাক ,সূরা নাস্ পরে দুই হাতে ফুঁ দিয়ে সারা দেহে স্পর্শ করতেন । এই আমল তিনবার করতেন ।
হে আল্লাহ! নবী মুহাম্মদ সা. এর মতো জীবন ধারণের তাওফিক দান করুন আমাদের।
MY FACEBOOK
YOUTUBE CHEENEL
No comments :
Post a Comment