আব্রু রক্ষা, স্টাইল, ফ্যাশন, উৎসব কিংবা জীবনযাত্রার অনুসঙ্গ পোশাক। কিন্তু এই পোশাক যখন জীবন নাশক হয়ে দাঁড়ায়- একটু খটকা লাগে বৈকি! হ্যাঁ, বোকাবাক্সের নায়িকার গায়ের পোশাকের জন্য সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া এমনকি জীবন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে আমাদের দেশে। আর বিশেষ এই পোশাকের নাম ‘কিরণমালা’।
ব্যবসার কাটতি বাড়াতে কিংবা প্রচারণার কৌশল হিসেবে এক একটি নির্দিষ্ট নামে ফ্যাশন ট্রেন্ড চালু করে দোকানীরা। অবশ্য বিগত কিছু বছর থেকে ট্রেন্ড বা স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরির গুরু দ্বায়িত্ব পালন করছেন ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের পাত্র পাত্রীরা। গত ঈদে পাখি ড্রেস নিয়ে হাস্যকৌতুক যেমন হয়েছে, তেমন এই পোশাকের জন্য বিবাহবিচ্ছেদ ও আত্মহত্যাও হয়েছে সংবাদ শিরোনাম। ধারাবাহিকতায় এবার ঈদে বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে কিরণমালার ক্রেজ।
ছোটবেলায় শোনা অরুণ-বরুণ-কিরণমালার রূপকথার গল্প নিয়েই গড়ে উঠেছে ‘কিরণমালা’ সিরিয়ালের প্রেক্ষাপট। বাবা, মা আর ভাইদের রক্ষায় হারানো রাজ্য ফিরে পেতে রাক্ষসদের লড়ে চলে রাজকন্যা কিরণমালা। আর তাই তার পরনের পোশাক ও গহনার ব্যবহারের জাঁকজমকও রাজোচিত। পোশাকের রঙে উজ্জ্বলতা, সোনালী সুতায় ভারী কাজ, ঝকমকে পাথর ও পুঁতি চুমকির ব্যবহার এবং তার সঙ্গে মানানসই ডিজাইন- এই হল কিরণমালা বৃত্তান্ত।
এই পোশাকটিই না কিনে দেয়ায় মাদারীপুরের কালকিনিতে আত্মহত্যা করেছেন মিনার বেগম নামের এক কলেজ ছাত্রী। গত রোববার রাতে কালকিনি পৌর এলাকার কৃষ্ণনগর গ্রামে এঘটনা ঘটেছে। বাবা-মায়ের কাছে কিরণমালা ড্রেস কিনে দেয়ার আবদার করেছিলেন মিনার। রাজি না হওয়ায় রাতে ঘরের দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন অভিমানী এ তরুণী।
মার্কেট ঘুরে আঁচ পাওয়া যায় এ তরুণীর আকাঙ্খার তীব্রতা। রাজধানীর প্রায় সকল শপিং মলের দোকনীর একই কথা- নারী ক্রেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে আছে কিরণমাল পোশাকটি। ভারত থেকে আমদানীকৃত এই পোশাকের ম্যাটিরিয়াল নিয়ে বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের মজুমদার এন্টারপ্রাইজের শরিফ বলেন, ‘মূলত নেটের কাপড় দিয়ে তৈরি এ পোশাক। সঙ্গে থাকে হাতাকাটা শার্টের মত কোটি। আর এই কোটির উপরই জমকালো কাজ করা থাকে স্টোন, জরি সুতা আর চুমকি দিয়ে।’
মূল্য ভেদে এই নেটর কাপড়ের কোয়ালিটি ওঠানামা করে। আর মখমলের কোটির কাজেও আছে তারতম্য। ঢাকার ইস্টার্ন প্লাজা, রাপা প্লাজ ও বসুন্ধরা সিটি ঘুরে দেখা গেল ৪ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে কিরণমালা পোশাক। রঙে আছে কড়া ও উজ্জ্বল রঙের প্রাধান্য। মেরুন, গোলাপী, রানী, লাল, হলুদ, কালো ইত্যাদি রঙের সঙ্গে আছে সোনালী রঙের ভারী কাজ করার নীল, লাল, কালো রঙের কোটির কম্বিনেশন।
১০লওইস্টার্ন প্লাজা শপিং মলের মায়া শপিং হাউজের দেলোয়ার বলেন, ‘আসলে কিরণমালা নামের কোন পোশাক নাই। ভারত থেকে একটা নাম নিয়ে আমাদের দেশে নতুন ডিজাইনের পোশাক আসে, তাই নিয়ে কাড়াকাড়ি করে ক্রেতারা। সিরিয়ালের কিরণমালা আদৌ এই পোশাক পরে কি না, জানি না। তবে এই ঈদে এই পোশাকের কাটতি সবচেয়ে বেশি।’
দামে নিতান্ত কম নয়, তবুও মধ্যবিত্ত এবং নিন্ম আয়ের মানুষের মধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই কিরণমালা পোশাক। এমন কথাই বললেন বসুন্ধরা সিটির জোশ কালেকশনের কর্ণধার সাজ্জাদ। ‘অপেক্ষকৃত কম বয়সী মেয়েরাই এই পোশাকের ক্রেতা। ৮ বছর থেকে শুরু করে ২৫ বছর বয়সী মেয়েরাই নিজেকে আপডেট ফ্যাশনে সাজাতে বেশি উদগ্রীব। তাই এবারের ট্রেন্ড কিরণমালা কিনতে আগ্রহী তারা।’
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেল একই ব্যাপার- তারা খুব পছন্দের জন্য নয়, নিতান্তই হাল ফ্যাশনের ধারা বজায় রাখতেই কিরণমালা কিনছেন তারা। ‘আমার মেয়েরা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, ভাসুর আর দেবরের মেয়েদের জন্য শপিংয়ে এলাম। তাদের আবদার, কিরণমালা লাগবে। কারণ তারা শুনেছে, এই জামা খুব চলছে। কিন্তু দামের যে অবস্থা- তাতে চিন্তার ব্যাপার। তবে ওদের হতাশও করতে চাই না। দেখা যাক’- বললেন মধ্যবয়সী ক্রেতা শামীমা আকতার।
সকল কন্যাই তার বাবা-মায়ের রাজকন্যা। আর তাই তার আবদার মেটাতে রূপকথার রাজকন্যা সাজাতে পিছপা হচ্ছেন না তারা। চলছে কেনাকেটা, চলছে কিরণমালা পোশাকের বিক্রিবাট্টা।
সর্ম্পকিত আরো ব্লগ:
সত্যিকারের সাতপাকে বাঁধা পড়তে চলেছে আলোচিত "পাখি"
No comments :
Post a Comment