<span class='st_sharethis_large' displayText='ShareThis'> </span> <span class='st_facebook_large' displayText='Facebook'> </span> <span class='st_twitter_large' displayText='Tweet'> </span> <span class='st_linkedin_large' displayText='LinkedIn'> </span> <span class='st_pinterest_large' displayText='Pinterest'> </span> <span class='st_email_large' displayText='Email'> </span> Elias ahmed Chondon: মদখোর থেকে পৃথিবীখ্যাত ইমাম

Tuesday, July 14, 2015

মদখোর থেকে পৃথিবীখ্যাত ইমাম


পরিচয়টা পরেই বলি। আগে ঘটনাটাই শুনুন। লোক ভরপুর এক মাহফিলে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি। শুরুতেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন এক শ্রোতা। বললেন, আপনার বক্তৃতা পড়ে শুনব। তার আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিন। বছর দশেক আগে আপনাকে মাতাল অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। আপনি ছিলেন ছন্নছাড়া এক ব্যক্তি। খারাপ কাজ ছাড়া ভালো কাজে দেখিনি কখনো। অথচ আজ আপনি আমাদের সামনে ওয়াজ করছেন। আপনার এই পরিবর্তন কিভাবে হলো?
শ্রোতার এমন প্রশ্ন এড়াতে পারলেন না বক্তা। বললেন, শুনুন তাহলে আমার ঘটনা।
সেদিন ছিল শবে কদরের রাত। শহরের মদের দোকানগুলো বন্ধ ছিল। এক দোকানিকে অনুরোধ করে মদ কিনলাম। তারপর চলে এলাম বাসায়। রাতে মদ ছাড়া ঘুমই আসত না। সেদিন বাসায় ঢুকেই দেখি স্ত্রী নামাজ পড়ছে। নিশ্চুপে আমার ঘরে চলে এলাম। টেবিলে রাখলাম বোতলটা। হঠাৎ আমার তিন বছরের মেয়েটা দৌড়ে এলো। টেবিলে সঙ্গে তার ধাক্কা লেগে মদের বোতলটি পড়ে ভেঙে গেল। সেটা দেখে অবুঝ মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে লাগল। মেয়ে বলে তাকে কিছু বলতেও পারছিলাম না।
ভাঙা বোতল ফেলে দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সেরাতে আর মদ খাওয়া হল না। তারপর চলে গেছে এক বছর। আবার এল লাইলাতুল কদর। অভ্যাস মতোই আমি মদ নিয়ে বাড়ি এলাম। বোতলটা টেবিলে রাখলাম। হঠাৎ বোতলের দিকে তাকাতেই বুক ভেঙে কান্না এলো। কারণ তিন মাস আগে আমার মেয়েটি মারা গেছে। গতবার তার বোতল ভাঙার কাহিনী আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মদটা আর খেতে পারলাম না। ঘুমিয়ে পড়লাম।
মাঝ রাতে স্বপ্নে দেখলাম এক বিরাট সাপ আমাকে তাড়া করছে। এত বড় সাপ আমি জীবনে দেখিনি। সেই ভয়ে আমি দৌড়াচ্ছি। এমন সময় এক দুর্বল বৃদ্ধকে দেখলাম। তাকে অনুরোধ করলাম সাপটি থেকে আমাকে রক্ষা করতে। কিন্তু বৃদ্ধ বলল, আমি খুব দুর্বল এবং ক্ষুধার্ত। এ সাপের সাথে আমি পারব না। তুমি বরং এই পাহাড়ের ডানে যাও।
বৃদ্ধের কথা মতো পাহাড়ে উঠেই দেখি দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। আর পেছনেই এগিয়ে আসছে সেই মোটা কুৎসিত সাপ। আমি বৃদ্ধের কথা মতো ডানে ছুটলাম। দেখলাম সুন্দর এক বাগান। বাচ্চারা খেলছে। গেটে দারোয়ান।
বাগানে ঢুকতে চাইলে দারোয়ান বাধা দিল। বাচ্চাদের ডেকে বললো, দেখতো এলোকটি কে? ওকে তো সাপটা খেয়ে ফেলবে, নয়তো আগুনে ফেলে দেবে। দারোয়ানের কথায় বাচ্চারা ছুটে এলো। এর মধ্যে তিন মাস আগে মৃত্যুবরণ করা আমার মেয়েটাকেউ দেখলাম। মেয়েটা আমাকে ডান হাতে জড়িয়ে বাম হাতে সাপটাকে থাপ্পর দিলো। ভয়ে সাপ পালিয়ে গেলো।
ঘটনা দেখে চোখ কপালে উঠল। বললাম, মা তুমি কত ছোট আর এত বড় সাপ তোমাকে ভয় পায়? তুমি এতো সাহস কোথায় পেলে।
মেয়ে বললো, আমি তো জান্নাতি মেয়ে। জাহান্নামের সাপ আমাদের ভয় পায়। বাবা ওই সাপকে তুমি চিনতে পেরেছো?
বললাম, না মা সাপকে তো চিনতে পারিনি।
বাবা ওতো তোমার নফস। তুমি নফসকে এতো বেশি খাবার দিয়েছো যে সে এমন বড় আর শক্তিশালী হয়েছে। সে তোমাকে জাহান্নাম পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়েছে।
বললাম, পথে এক দুর্বল বৃদ্ধ তোমার এখানে আসার পথ বলে দিয়েছে। সে কে?
মেয়ে বললো, তাকেও চেনোনি? সে তোমার রুহ। তাকে তো কোনোদিন খেতে দাওনি। তাই না খেয়ে দুর্বল হয়ে কোনো মতে বেঁচে আছে। এরপর আমার ঘুম ভেঙে গেলো।
দীর্ঘ স্বপ্নের কথা বলে বক্তা একটু দম নিলেন। এরপর বললেন, সেইদিন থেকে আমি আমার রূহকে খাদ্য দিয়ে যাচ্ছি আর নফসের খাদ্য একদম বন্ধ করে দিয়েছি। এখনো চোখ বুঝলেই নফসের সেই ভয়াল রূপ দেখতে পাই। আর দেখি রূহকে। আহা কতো দুর্বল হাঁটতে পারে না। তারপর ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন বক্তা।
বিখ্যাত এ বক্তার নাম হজরত মালেক বিন দিনার রহ.। হিজরি দ্বিতীয় বর্ষের বিখ্যাত সুফি ও ইসলাম বিশ্লেষক। এক সময় মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে থাকতেন রাস্তায়। একটা স্বপ্ন তার জীবনকে পাল্টে দিল। তিনি হয়ে গেলেন ইসলামের মহা মনীষী। পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল তার খ্যাতি।

No comments :

Post a Comment