
দর্শকপ্রিয় মডেল তারকা ও অভিনেত্রী নাজনিন আক্তার হ্যাপি সম্প্রতি মিডিয়া জগৎ থেকে বিদায় নিয়ে এখন ইসলামী জীবন গঠনে ও ইসলাম প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি তার ফেইসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দিয়ে ভক্তদের জানিয়ে দিচ্ছেন এই পরিবর্তনের খবর। সর্বশেষ দুটি স্ট্যাটাসে তিনি মিডিয়া ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি ইসলাম প্রচারমূলক কথাও লিখেন।
নাজনিন আক্তার হ্যাপি নামে ওই আইডিতে দেওয়া প্রথম স্ট্যাটাসে রোববার বিকাল ৬টা পর্যন্ত ৩ হাজার ৬শ ৮২ জন লাইক দিয়েছেন। ৫০ জন পোস্টটি শিয়ার করেছেন আর কমেন্টস করেছেন ৩৪ জন। এদিকে, দ্বিতীয় স্ট্যাটাসে একই সময়ে ১০ হাজার ৫শ ১৯ জন লাইক দিয়েছেন। ৩শ ৩৯ জন পোস্টটি শিয়ার করেছেন আর কমেন্টস করেছেন ৩২ জন। পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাস দুটি তুলে ধরা হল
স্ট্যাটাস : ১
২‘আসসালামু আলাইকুম। আমি আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি আরও বেশকিছুদিন আগে। আমি চলচ্চিত্র, মিডিয়া ওই সব রঙিন দুনিয়া থেকে একেবারের জন্য বিদায় নিয়েছি। জীবনটাকেই বদলে ফেলেছি। আল্লাহর কাছে তওবা করে এখন শুধু নামাজ আর ভালো মানুষ হওয়ার আকাক্সক্ষায় দিন কাটাচ্ছি। এর মধ্যে অদ্ভূত এক শান্তি, যে শান্তি দুনিয়ার সব সম্পদ নিজের থাকলেও সম্ভব নয়। আমাদের প্রত্যেকের এটাই চিন্তা করা উচিত যে, দুনিয়া খুব কম সময়ের এই সময়টা শুধু আল্লাহের ইবাদাত করার জন্য, আর কোনো কিছুর জন্য নয়। আমরা যদি সবাই একবার চিন্তা করি দুনিয়া কী? কীসের জন্য? মৃত্যুর পর কী হবে? তাহলে আমরা সব উত্তর পেয়ে যাব। আমি খুব ভাগ্যবতী যে, আমি নিজের ভুল বুঝে এখন শুধু আল্লাহর ভালোবাসায় মগ্ন। দুনিয়ার কোনো শক্তি নেই আমাকে অসৎ পথে নিয়ে যাওয়ার বা আল্লাহর পথ থেকে সরানোর। আমার সঙ্গে যে বা যারা অন্যায় করেছে আমি সকলকে ক্ষমা করে দিয়েছি, আর চাই আল্লাহ তাদের সঠিক পথে আসার তৌফিক দান করুক এবং তাদের ক্ষমা করুক। বিশ্বাস করুন ইসলামের পথে চলা আর ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করার মধ্যে বেহেশতের সুখ যা আপনি আর কোনোভাবে অনুভব করতে পারবেন না। দুনিয়াতে যে যত বেশি কষ্টে থাকে সে তত ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী কারণ, আল্লাহ তার যেই বান্দাদের বেশি ভালবাসেন তাদেরকে দুঃখ-কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করেন আর এই পরিক্ষায় পাশ করতে পারলে আল্লাহ তার জন্য আখিরাতে অনেক বড় পুরস্কারের ব্যবস্থা করবেন। আর যেই মানুষ অন্য একজন মানুষকে নিয়ে হাসি-তামাসা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ আর ছোট এবং অপমান করে তাদেরকে আল্লাহ দুনিয়াতে আরও সুযোগ দেয় এবং মৃত্যুর পর তাদের কঠিন শাস্তি পেতে হবে। আমি বেপর্দায় চলতাম, ইসলাম মেনে চলতাম না, রঙিন দুনিয়ায় চলতাম আমি যদি আল্লাহকে ভয় করে ও আল্লাহকে ভালোবেসে ইসলামের পথে আসতে পারি তাহলে আপনি/আপনারা কেন পারবেন না? আল্লাহ সবসময় অপেক্ষা করেন তার বান্দা কখন তার কাছে ক্ষমা চায় এবং আল্লাহের দেখানো পথে চলে! আমি আল্লাহকে ভালোবেসে যে সুখ পাচ্ছি যা জীবনে আর কখনোও পাইনি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন আমার ইমান ঠিক রেখে বাকি জীবন আল্লাহর দেখানো পথ অনুসরণ করে চলতে পারি। মানুষ চাইলেই বদলাতে পারে আর আল্লাহর পথে চলতে চাইলে তিনি নিজে পথ দেখিয়ে দেন। এই মুহূর্তে যদি মারা যাই আল্লাহর কাছে কীভাবে পাপের জবাবদিহি করব? দুনিয়া থেকে পরকালের জন্য কী নিয়ে যাব? এ সব একবার ভাবুন তাহলেই একজন ভালো ও পবিত্র মানুষ হতে পারবেন। আমীন।’
স্ট্যাটাস : ২
১‘আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা। আল্লাহ আমাদের অনেক ভালোবাসেন। আমাদেরকে আল্লাহ যে কাজের জন্য পাঠিয়েছেন সেই কাজই আমরা করার সময় পাই না অথচ যেগুলো আল্লাহ কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন সেই কাজগুলোই আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে, যার জন্য আমাদের কঠিন সাজা ভোগ করতে হবে। আল্লাহ পরম দয়ালু। আমাদের প্রত্যেকের উচিত ভালো পথে ফিরে আসা, কারও ক্ষতি না করা, কারও মনে কষ্ট না দেওয়া, মিথ্যা কথা না বলা, কোরান পাঠ সেইসঙ্গে কোরানের আলোকে জীবন গড়া, ইসলাম মেনে চলা ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহ ক্ষমশীল ও ন্যায়বিচারক। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করবেন। এই দুনিয়ায় মানুষ হয়ে মানুষকে ছোট করা, মানুষকে ঠকানো আরও কত কী! এর মধ্যে শুধুই জাহান্নামের আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই। আসুন এখন, এই মুহূর্তে তওবা করে আল্লাহের পথে চলি। এর মধ্যেই শান্তি। তওবা কীভাবে করতে হবে, তওবার সঠিক নিয়ম। কারও তওবা কবুল হয়েছে কি না এটা বোঝার উপায়Ñ
পাপ কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মুখে মুখে তওবা করি, কয়েকদিন পর থেকে পাপ কাজটা ছেড়ে দেবোÑ এ রকম হলে তওবা হবে না।
অতীতের সব পাপ কাজ ও ভুলত্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করে তার কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
অন্তরে ওই কাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেইগুলোতে আর ফিরে না যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সব গুনাহখাতার জন্য ‘ইস্তিগফার’ করতে হবে (মাফ চাইতে হবে) + ‘তওবা’ করতে হবে (গুনাহ করা বন্ধ করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে)।
কারো হক নষ্ট করে থাকলে তাকে তার হক ফিরিয়ে দিতে হবে, অথবা যেভাবেই হোক, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে।
(তওবা করলে আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারও পাপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু বান্দার কোনো হক নষ্ট করলে সেটা বান্দা মাফ না করলে তিনি মাফ করবেন না)।
অন্তরে আশা রাখতে হবে যে, আমি গুনাহগার কিন্তু আল্লাহ গাফুরুর রাহিমÑ অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুতরাং, তিনি আমার তওবা কবুল করবেন।
তওবা করার পরে প্রাণপণে চেষ্টা করতে হবে পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে এবং সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি নেকির কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।
যে পাপ কাজ থেকে তওবা করা হল (সব পাপ কাজ থেকেই তওবা করা ফরয), কোনো ভুলে বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজটা করে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে আবার তওবা করে সেটা থেকে ফিরে হবে। এইভাবে যখনই কোনো পাপ হবে সঙ্গে সঙ্গেই তওবা করতে হবে, মৃত্যু পর্যন্ত।
কারও তওবা কবুল হয়েছে কি না এটা কীভাবে বুঝবেন?
অনেক আলেম এ সম্পর্কে বলেন, কারও যদি তওবা করার পরের জীবন আগের জীবন থেকে ভালো হয় অর্থ্যাৎ, পাপের কাজ অনেক কমে যায় ও ভালো কাজ বৃদ্ধি পায় তাহলে আশা করা যেতে পারেÑ তার তওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। কিন্তু কারও যদি এমন না হয় অর্থ্যাৎ, তওবার আগের ও পরের জীবনে কোনো পার্থক্য না থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার তওবাতে ত্রুটি আছে। তার উচিত হতাশ না হয়েÑ বার বার আন্তরিকতার সঙ্গে খালেস নিয়তে তওবা করা, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে অন্তরিক তওবা করার তওফিক দান করুন।
কী দোয়া পড়ে তওবা করতে হবে?
যেই দোয়া পড়ে রাসুলুল্লাহ সা. তওবা করতেন ও আমাদেরকে পড়তে বলছেনÑ
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লা-হাল আ’যিমাল্লাযি লা- ইলা- হা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া ইবাদতের আর কোনো যোগ্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আমি তার কাছে তওবা করছি।
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামি হয়’।
(অর্থ্যাৎ, সে যদি বড় রকমের গুনাহগার হয়, তবুও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন)।
তিরমিযি ৪/৬৯’
No comments :
Post a Comment